স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর! অগ্নিগর্ভ নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে পড়াশোনা করা র‍্যাপার?

সোমবার যে বিক্ষোভ হয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞাকেই তার কারণ বলে মনে হলেও, এটিই একমাত্র কারণ নয়। অনেকের মতে, নেপালে যা ঘটে চলেছে তা দীর্ঘ দিনের জমে থাকা অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। নেপালের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। তাঁদের অনেকে ক্ষমতায় ছিলেন, অনেকে সরে গিয়েছেন। দুর্নীতিতে নাম জড়ানো ওই নেতাদের বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব।

নেপালে দীর্ঘ দিন ধরে নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠাও এই বিক্ষোভের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেপালের তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগ সরকারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। নেপালি তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকার অন্যতম কারণ কর্মসংস্থানের অভাব। কাজের সুযোগ না থাকায় নেপালি তরুণদের অনেকেই দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

কয়েক জন তরুণ নেতা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন নেপালে। তাঁদের জনপ্রিয়তার নেপথ্যে অন্যতম অবদান ছিল সমাজমাধ্যমের। নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট ছিলেন ওই তরুণ নেতারাও। এঁদের মধ্যে ছিলেন বলেনও। কাঠমান্ডুর মেয়র সোমবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।

সমাজমাধ্যমে তিনি তরুণদের সমাবেশের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। বয়সের কারণে সমাবেশে যোগদানে বাধা থাকলেও ৩৩ বছর বয়সি মেয়র ফেসবুক পোস্টে এই আন্দোলনের প্রতি তাঁর জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।

বলেন লিখেছেন, ‘‘যুবকদের প্রতি আমার পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে।’’ রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে এই আন্দোলনকে কাজে না লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথা তরুণ নেপালিদের মনে দাগ কেটেছে, যাঁদের অনেকেই তাঁকে দেশের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের রাজনৈতিক বিকল্প হিসাবে দেখেন।

কাঠমান্ডুর পুরসভার দায়িত্বে থাকলেও সামাজিক কাজের সঙ্গেই নিজেকে যুক্ত রাখতে ভালবাসেন বলেন্দ্র। তরুণ রাজনীতিবিদ হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করলেও আরও একটি পরিচয় আছে তাঁর। খ্যাতনামী র‌্যাপার হিসাবে নেপালে পরিচিত বলেন্দ্র।

নেপালি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বলেন্দ্রর নাম জায়গা করে নিয়েছিল বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজ়িনে। পৃথিবীর জনপ্রিয়তম ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিল তাঁর নাম। এমনকি ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর মতো বিখ্যাত সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এসেছিল বলেন্দ্রর নাম। সেই প্রতিবেদনে তাঁর স্বচ্ছতা এবং তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতির প্রশংসা করা হয়েছে।

নেপালের সাধারণ মানুষের মতে, মেয়রপদে এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করেছেন বলেন্দ্র। শহরের রাস্তা পরিষ্কার করা, পাবলিক স্কুলের উন্নতি এবং কর ফাঁকি দেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও দু’বার ভাবেননি তরুণ নেতা, এমনটাই দাবি সে দেশের সংবাদমাধ্যমের।

তরুণ নেপালিদের সেই একাংশের মধ্যে বলেন্দ্রর মতো যুবনেতাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যাঁরা এক বিশেষ রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি হতাশ। সেই সব পর্যায়ের রাজনীতিকে তাঁরা নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করেন। তাই হাজার হাজার ছাত্র-যুবকে নেপালের পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হতে দেখা গিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক স্কুলপড়ুয়াও ছিল। অন্তত পোশাক দেখে তেমনই অনুমান। শুধু রাজধানী শহরেই নয়, বিক্ষোভ-বিদ্রোহের আঁচ ছড়িয়েছিল নেপালের অন্যত্রও। সোমবারের ওই বিক্ষোভে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।