Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Andorra

দেশ চালাত দুই প্রতিবেশী, অস্তিত্ব নেই সেনার, তবু জার্মানির বিরুদ্ধে ৪৩ বছর ‘যুদ্ধ’ করেছিল ইউরোপের নিধিরাম সর্দার!

৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘জন্ম’, এখন বয়স প্রায় ১২২০ বছর। শুরু থেকেই সেখানে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিল না, আজও নেই। বিমানবন্দর, রেলস্টেশন কিছুই নেই সেখানে। তবুও বসবাস প্রায় ৮০ হাজার মানুষের, ঘুরতে যান বহু ভ্রমণপ্রেমী। সব মিলিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের ছোট্ট দেশ চলছে স্বাধীন ভাবেই।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:১৭
Share: Save:
০১ ১৯
Andorra

এমন এক দেশ, যেখানে নেই কোনও রাষ্ট্রপ্রধান, নেই কোনও শাসনব্যবস্থা। ১২২০ বছর ধরে তবু স্বাধীন ভাবে জীবন কাটাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের ছোট্ট দেশের বাসিন্দারা।

০২ ১৯
Andorra

ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে পিরেনিস পর্বতমালা জুড়ে গঠিত দেশ অ্যান্ডোরা। আয়তনে মাত্র ৪৬৮ বর্গকিমি, যা এ রাজ্যের একটি জেলার থেকেও ছোট। এই দেশের রাজধানী অ্যান্ডোরা লা ভেল্লা। এই ছোট্ট দেশে প্রায় ৮৫ হাজার জন বসবাস করেন। মূলত সকলেই কাতালান ভাষায় কথা বলেন। তবে, স্প্যানিশ, ফরাসি ও পর্তুগিজ ভাষাও প্রচলিত।

০৩ ১৯
Andorra

এটি এমন একটি দেশ, যেখানে কোনও দিনই কোনও প্রেসিডেন্ট কিংবা রাজা বা রানি ছিলেন না। তা হলে কী ভাবে চালিত হয় এই দেশ? অ্যান্ডোরা চালিত হয় একেবারে ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে। সহ-রাজকীয় শাসন দ্বারা পরিচালিত এই দেশ।

০৪ ১৯
Andorra

ফ্রান্স এবং স্পেনের হস্তক্ষেপে আনুষ্ঠানিক সব ধরনের কাজ হয় সেখানে। ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাকরঁ এবং স্পেনের ক্যাথলিক বিশপ— বর্তমানে এঁরা দু’জন মিলে অ্যান্ডোরার দায়িত্ব সামলান। দীর্ঘ দিন প্রশাসনিক পর্যায়ের সমস্ত কাজও ওই দুই দেশ মিলিত ভাবে করেছে।

০৫ ১৯
Andorra

১৯৮১ সালের আগে অ্যান্ডোরায় প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন না। ফলত এই সময়ের আগে পর্যন্ত তাঁদের প্রশাসনিক, সাংবিধানিক সব সিদ্ধান্তই ফ্রান্স ও স্পেন মিলিত ভাবে নিত। ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী পদটি তৈরি হয়। গঠন করা হয় সংসদ। নাম দেওয়া হয় ‘উপত্যকার সাধারণ পরিষদ’। অস্কার রিবাস রেইগ ছিলেন অ্যান্ডোরার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সংসদে ছিলেন ২৮ জন সদস্য। বর্তমানে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাভিয়ের এসপট জামোরা। ২০১৯ সালের ১৬ মে থেকে তিনি সামলাচ্ছেন দায়িত্বভার।

০৬ ১৯
Andorra

তবে সংসদ থাকলেও এ দেশে কোনও সেনা নেই। মধ্যযুগে, অর্থাৎ ৭০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষই নিজেদের রক্ষা করতেন। ১৭৪৮ সাল পর্যন্ত অ্যান্ডোরার নাগরিকদের মধ্যে থেকে ‘মিলিশিয়া’ তৈরি করা হত। যুদ্ধ হলে তাঁরা অস্ত্র হাতে নিতেন।

০৭ ১৯
Andorra

কিন্তু পরে আর স্থায়ী সেনাবাহিনী রাখার মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল না এই দেশের। তাই সাধারণ নাগরিকদের নিয়েও আর সেনাবাহিনী গঠন করে উঠতে পারেনি অ্যান্ডোরা।

০৮ ১৯
Andorra

বর্তমানে সেনাবাহিনী নেই, কেবল একটি ছোট আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা বাহিনী রয়েছে এখানে। তাদের ভূমিকা প্রতিরক্ষা নয়, বরং জাতীয় উৎসব বা রাজকীয় অনুষ্ঠানে শোভাযাত্রা করা। যদিও অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অ্যান্ডোরার নিজস্ব পুলিশ বাহিনী রয়েছে।

০৯ ১৯
Andorra

দেশের নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব মূলত স্পেন ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনী নেয়। যদি কখনও কোনও যুদ্ধ হয় বা হুমকি আসে, তখন এই দুই প্রতিবেশী দেশ অ্যান্ডোরাকে রক্ষা করবে, এমনটাই সমঝোতা রয়েছে।

১০ ১৯
Andorra

ইতিহাস বলছে, এই দেশ এক বার যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধে কোনও সেনা অংশ নেয়নি, বা কেউ মারা যাননি। সময়টা ১৯৪১ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। ইতিমধ্যেই ইউরোপ দখল করে নিয়েছে জার্মানি। শোনা যায়, সেই সময় নাকি আনুষ্ঠানিক ভাবে জার্মানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল অ্যান্ডোরা।

১১ ১৯
Andorra

যদিও পর্যাপ্ত সেনা, অস্ত্র বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি না থাকায় যুদ্ধ শেষমেশ হয়নি। ইতিহাসবিদেরা জানান, দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে নাকি অস্ত্র, সেনা ছাড়াই জার্মান-অ্যান্ডোরা যুদ্ধ করে আসছে। কারণ যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেও পরে আর শান্তিচুক্তি করেনি অ্যান্ডোরা। পরে অবশ্য ১৯৮৪ সালে খাতায়-কলমে যুদ্ধের অবসান হয়।

১২ ১৯
Andorra

আরও একটি অবাক করার বিষয়, এই দেশে কোনও বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন নেই। অথচ বছরভর পর্যটকের মেলা বসে অ্যান্ডোরায়। এখানকার প্রধান যান হল বাস এবং গাড়ি।

১৩ ১৯
Andorra

পাহাড়ি দেশ হওয়ায় এখানে বেশির ভাগ রাস্তাই গ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। পর্যটকেরা স্পেন অথবা ফ্রান্সের বিমানবন্দর ব্যবহার করেন এখানে আসার জন্য। তার পর সেখান থেকে গাড়ি করে পাড়ি দেন অ্যান্ডোরায়। রেলের জন্যও একই ব্যবস্থা। ফ্রান্স অথবা স্পেনের সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ, তার পর সড়কপথে গাড়ি করে এ দেশে প্রবেশ করতে হয়।

১৪ ১৯
Andorra

এই দেশে পাড়ি দিতে হলে ভিসা তো অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু অ্যান্ডোরা নিজে কোনও ভিসা দেয় না। এই ক্ষেত্রেও ফ্রান্স অথবা স্পেন থেকেই ভিসা পেতে হয় পর্যটকদের।

১৫ ১৯
Andorra

রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি পর্যটক আসেন সারা বছর। প্রতি বছর প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ পর্যটক অ্যান্ডোরা ভ্রমণ করেন। এখানকার করহীন বাজার পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে বৈদ্যুতিন নানা দ্রব্য, সুগন্ধি এবং উন্নত মানের পোশাক কেনার ঢল চোখে পড়ার মতো।

১৬ ১৯
Andorra

অ্যান্ডোরার পরিচিত একটি খাবার ট্রিনক্স্যাট। আলু আর বাঁধাকপির মিশ্রণে তৈরি একটি ভাজা খাবার এটি। কখনও আবার পনির কিংবা মাংস দিয়েও তৈরি করা হয় এই খাবার। সাধারণ মানুষ তো বটেই, পর্যটকদেরও বেশ প্রিয় এই খাবার।

১৭ ১৯
Andorra

২০২০ সালের করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি এই দেশও। জনসংখ্যা কম হলেও সংক্রমণ বেশি হয়েছিল। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৪৭,৮২০ জনের মধ্যে সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ১৬৫ জনের। দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউন চলেছিল। যে হেতু এই দেশটির অর্থনীতি পর্যটন ও খুচরো ব্যবসার ওপরেই নির্ভরশীল, তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা ও মানুষদের সহায়তার জন্য আর্থিক সহায়তা দান করেছিল সরকার।

১৮ ১৯
Andorra

দেশ ছোট হলেও শিক্ষার মান বজায় রাখা হয় এখানে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। অ্যান্ডোরা বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের নানা কোর্স পড়ানো হয়। স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিক থেকেও পিছিয়ে নেই এই দেশ। রাজধানীতে বেশ বড় বড় হাসপাতাল এবং চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। যদিও জটিল রোগের জন্য ভরসা ফ্রান্স ও স্পেনই।

১৯ ১৯
Andorra

ত্রয়োদশ শতক থেকে আজ পর্যন্ত নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে অ্যান্ডোরা। ১৯৯৩ সালের পর রাষ্ট্রপুঞ্জের পূর্ণ সদস্য হিসাবে স্বীকৃতিও পায় এই দেশ।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy