Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Nithari Case

যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন থেকে নরমাংস ভক্ষণ! ২০ বছর পর অভিযুক্ত মুক্তি পাওয়ায় আবার নজরে নয়ডার নিঠারি হত্যাকাণ্ড

নয়ডার ৩১ নম্বর সেক্টরের গ্রাম নিঠারি। ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে এই গ্রামে অস্বাভাবিক ভাবে অনেক মহিলা এবং শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর সামনে আসতে থাকে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৫৩
Share: Save:
০১ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

উত্তরপ্রদেশের নিঠারি হত্যাকাণ্ড। ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডগুলির মধ্যে অন্যতম। এই কাণ্ডে শারীরিক নির্যাতন, খুন, নরমাংস ভক্ষণ এবং শবদেহের সঙ্গে সঙ্গমের চেষ্টার মতো একাধিক ভয়ঙ্কর অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অপরাধের নৃশংসতা এবং বিরল প্রকৃতির কারণে মামলাটি বহু দিন ছিল সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।

০২ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

তবে সম্প্রতি নিঠারি হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সুরেন্দ্র কোলিকে সুপ্রিম কোর্ট বেকসুর খালাস করায় আবার নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে ঘটনাটি। গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি বিআর গবই, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ বলে, ‘‘আবেদনকারীকে খালাস করা হল। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে।’’

০৩ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

নিঠারিকাণ্ডে সুরেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দায়ের হয়। ১২টি মামলায় বেকসুর খালাস পেলেও ঝুলে ছিল শেষ মামলাটি। সেই মামলায় শাস্তি মকুবের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুরেন্দ্র। সেই মামলার শেষ শুনানিতে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘যদি একই তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে অন্য মামলাগুলি থেকে খালাস দেওয়া হয় এবং এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তবে কি সেটা ন্যায়বিচারের প্রতি বিদ্রুপ করা হবে না?’’ সে দিন অবশ্য রায় স্থগিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট।

০৪ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

তবে তখনই অনেকে ধারণা করে নেন, শেষ মামলা থেকেও রেহাই পেয়ে যাবেন নিঠারিকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত সুরেন্দ্র। এর পর মঙ্গলবার সেই মামলায় রায়ে সুরেন্দ্রকে বেকসুর খালাস করে দেশের শীর্ষ আদালত।

০৫ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

কিন্তু কী এই নিঠারি হত্যাকাণ্ড? নয়ডার ৩১ নম্বর সেক্টরের গ্রাম নিঠারি। ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে এই গ্রামে অস্বাভাবিক ভাবে অনেক মহিলা এবং শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর সামনে আসতে থাকে। এই সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঘটনাটি সকলের নজর কাড়ে। এই গ্রাম থেকে শিশুদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হলেও অনেক দিন পর্যন্ত পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য এই রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি।

০৬ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্তকারী আধিকারিকেরা পৌঁছে যান মণীন্দ্র সিংহ পান্ধেরের বাংলোয়। এর পর থেকেই একে একে জট খুলতে থাকে নিঠারি হত্যাকাণ্ডের। পেশায় ব্যবসায়ী মণীন্দ্র সেক্টর ৩১-এর ডি-৫ বাংলোর মালিক ছিলেন। অভিযোগ, সুরেন্দ্র নামে যুবক ২০০৩ সালে মণীন্দ্রের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই নিঠারি গ্রাম থেকে একের পর এক শিশু এবং মহিলা নিখোঁজ হতে থাকে।

০৭ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

রিম্পা হালদার নামে এক ১৪ বছর বয়সি কিশোরী ২০০৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিঠারি গ্রাম থেকে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায়। তার বাবা-মা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও বিশেষ কোনও সুবিধা হয়নি।

০৮ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

ওই বছরেরই মার্চ মাসে মণীন্দ্রের বাংলোর পিছনের নর্দমায় প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়া একটি কাটা হাত দেখতে পায় কয়েকটি বাচ্চা ছেলে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে পুলিশ দাবি করে, কোনও জন্তু মুখে করে এনে এই হাতটি ওখানে ফেলে গিয়েছে। সে রকম উদ্বেগের কিছু হয়নি বলেই গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে পুলিশ।

০৯ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

২০০৬ সালের ৭ মে নিঠারি গ্রামের পায়েল নামে এক যুবতী তার বাবা নন্দলালকে বলে যে, সে মণীন্দ্রের বাংলোয় যাচ্ছে। কিন্তু তার পর থেকে সে-ও নিখোঁজ হয়। পায়েলের বাবা তাঁকে খুঁজতে মণীন্দ্রের বাংলোয় পৌঁছোলে সুরেন্দ্র তাঁকে জানান, পায়েল সেখানে আসেনি এবং এই বিষয়ে সে কিছু জানে না। তবে সেই সময়ে মণীন্দ্র ঘরে ছিলেন না।

১০ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

নন্দলাল তাঁর মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করতে থানায় যান। পুলিশ তাঁর অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। এক মাস ধরে পুলিশ এবং মণীন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার পরেও কোনও সুরাহা না হওয়ায় তিনি ২০০৬-এর জুন মাসে নয়ডার তৎকালীন এসএসপি-র কাছে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানান।

১১ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

এসএসপির নির্দেশে পুলিশ নন্দলালের মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, পায়েলের মোবাইল ফোন তখনও চালু এবং কেউ সেই মোবাইল ব্যবহার করছে। তদন্ত চলাকালীন পুলিশ এ-ও জানতে পারে, নিখোঁজ হওয়ার এক দিন আগে পায়েল এবং সুরেন্দ্রের মধ্যে ফোনে কথা হয়।

১২ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

এর পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুরেন্দ্রকে গ্রেফতার করলেও মণীন্দ্র তাঁকে শীঘ্রই ছাড়িয়‌ে নিয়ে আসেন। পুলিশও সুরেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফোনে কথা বলা ছাড়া আর কোনও প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি। পুলিশের তদন্তে বিরক্ত হয়ে নন্দলাল আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত পুলিশকে মামলাটির বিশদ তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।

১৩ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

কিছু দিন তদন্ত চালিয়ে ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর পুলিশ মণীন্দ্রের বাংলোর পিছনের নর্দমা থেকে নরকঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ ভর্তি অনেকগুলি প্লাস্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় মণীন্দ্র এবং গৃহকর্মী সুরেন্দ্রকে।

১৪ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

মণীন্দ্রের বাড়ির পাশে নরকঙ্কাল উদ্ধার হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আর বিশেষ কোনও প্রমাণ পুলিশের হাতে আসেনি। তবে সেই ঘটনায় তত দিনে গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। অপরাধীদের শাস্তির দাবি উঠতে থাকে সর্বত্র।

১৫ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

পায়েল নিখোঁজ মামলায় তদন্তে জট খোলে নিঠারির নিখোঁজ হওয়া বাকি শিশু এবং মহিলাদের ঘটনারও। জনরোষের চাপে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়।

১৬ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

কিন্তু ৬০ দিন পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি সিবিআই। এর পরই হঠাৎ সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, সুরেন্দ্র দোষ স্বীকার করে বয়ান দিতে রাজি। সিবিআই আধিকারিকদের উপস্থিতিতে জেলাশাসকের সামনে সুরেন্দ্রের বয়ান রেকর্ড করা হয়। সুরেন্দ্রের বয়ান শুনে সেই সময়ে অনেকেরই গা শিউরে উঠেছিল।

১৭ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

পরে তদন্তে উঠে আসে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে খুন করে তাদের দেহের অংশ প্রেশার কুকারে সেদ্ধ করে খেয়ে ফেলতেন মণীন্দ্র এবং তাঁর বাড়ির পরিচারক সুরেন্দ্র। এর পর কঙ্কালগুলি বাংলোর পিছনের নর্দমায় ফেলে দেওয়া হত।

১৮ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

এর পর আরও কিছু মানবকঙ্কাল উদ্ধার হয়। সিবিআই সন্দেহ করে, এর মধ্যে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রেরও যোগ আছে। মণীন্দ্রের বাড়ি থেকে ক্যামেরা লাগানো ল্যাপটপ এবং কিছু কামোত্তেজক বই উদ্ধার করা হয়। মণীন্দ্রের সঙ্গে কিছু নিরাবরণ শিশুর ছবিও ওই বাংলো থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে পরে জানা যায় যে, এই ছবিগুলি মণীন্দ্র এবং তাঁর নাতি-নাতনিদের।

১৯ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

তবে শিশুদের যৌন নির্যাতন করার প্রবণতা মণীন্দ্রের ছিল বলেও সেই সময় মনে করেন আধিকারিকেরা। তদন্তে এ-ও উঠে আসে, মণীন্দ্র মাঝেমধ্যেই বাড়িতে যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতেন। এই ঘটনায় অঙ্গ পাচারের কোনও চক্র কাজ করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। পুলিশ অভিযুক্তের বাড়ির কাছে বসবাসকারী এক চিকিৎসকের বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এর আগে ১৯৯৮ সালে অঙ্গ পাচার করার অভিযোগ উঠেছিল।

২০ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

অভিযুক্ত মণীন্দ্র এবং সুরেন্দ্র, দু’জনেরই ব্রেন ম্যাপিং এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হয়। এর পর ছাড়া পেয়ে যান মণীন্দ্র। পুলিশ জানায়, মোট ১৯টি নরকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই কিশোরীদের কঙ্কাল।

২১ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

সিবিআই জানায়, মোট ১৫টি খুলি উদ্ধার করা হয়েছে। সুরেন্দ্র, তাঁর মনিব মণীন্দ্রকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন বলেও সিবিআই আধিকারিকেরা দাবি করেন। তবে তদন্ত শেষে সিবিআই জানায়, মণীন্দ্র এই খুনগুলির বিষয়ে কিছু জানতেন না এবং খুনগুলি তাঁর অনুপস্থিতিতে হয়েছে। যদিও পরে তাঁর বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২২ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

১৪ বছর বয়সি রিম্পাকে খুন করার দায়ে মণীন্দ্র এবং সুরেন্দ্রকে ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর ঠিক এক দিন পর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ‘বিরলতম’ বলে উল্লেখ করে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় গাজ়িয়াবাদের বিশেষ দায়রা আদালত। অভিযোগ করা সত্ত্বেও গুরুত্ব না দেওয়ায় এবং কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে স্থানীয় পুলিশকর্মীদের সাসপেন্ড করা হয়।

২৩ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

পিঙ্কি সরকার নামে ২০ বছর বয়সি এক তরুণীকে খুন-ধর্ষণ করার অভিযোগেও ২০১৭ সালে দোষী সাব্যস্ত হন সুরেন্দ্র এবং মণীন্দ্র। এর মধ্যেই মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচতে অনেক বার আদালতের কাছে আর্জি জানান মণীন্দ্র। তবে তা খারিজ হয়।

২৪ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

নিঠারি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরুর ১৭ বছর পর ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর মণীন্দ্র এবং সুরেন্দ্রকে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ব্যতীত অন্য কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাবে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট উভয়কেই খালাস দেয়। এর পরই ছাড়া পান মণীন্দ্র।

২৫ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

ইলাহাবাদ হাই কোর্টের রায়ের পর নিঠারি হত্যাকাণ্ডের বলি আট বছর বয়সি এক কিশোরীর বাবা পাপ্পুলাল বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাছে এত টাকা নেই যে আমরা এত বছর ধরে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে পারব।’’ নিহত অন্য এক সাত বছরের বালিকা দুর্গাপ্রসাদ আবার বলেছিলেন, ‘‘এই আদালত হয়তো দানবদের বেকসুর খালাস করতে পারে কিন্তু ঈশ্বরের আরও বড় আদালত আছে। সেখানে ওরা রেহাই পাবে না।’’

২৬ ২৬
Timeline of notorious Nithari Serial Killings incident

এর পর ২০২৫ সালের ১১ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সুরেন্দ্রকে তাঁর বিরুদ্ধে চলা শেষ মামলা থেকেও বেকসুর খালাস করে। তাঁকে মুক্তির নির্দেশও দেওয়া হয়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy