Two thieves once stole 300 crore gold tiffin box of Hyderabad Nizam just to have Biriyani in it dgtl
Gold Tiffin Box
অপমানের বদলা নিতে নিজ়ামের ৩০০ কোটির সোনার টিফিনবাক্স চুরি! দিনের পর দিন তাতে বিরিয়ানি রেখে খায় দুই চোর
২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে দুই চোর ঘুলঘুলির সঙ্কীর্ণ পথ দিয়ে হায়দরাবাদের পুরানি হাভেলির দোতলায় অবস্থিত জাদুঘরটিতে প্রবেশ করে। রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে একটি লোহার গ্রিল খুলে নিজ়াম পরিবারের ব্যবহৃত বহুমূল্য জিনিসপত্র চুরি করে তারা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
কড়া প্রহরা ভেদ করে মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে যে ভাবে ফ্রান্সের ল্যুভর জাদুঘর থেকে বহুমূল্য গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছে চার চোর, তা নিয়ে এখনও বিশ্ব জুড়ে চর্চা তুঙ্গে। গয়নাগুলির ভবিষ্যৎ কী, সেগুলির ঐতিহাসিক মূল্য আদৌ চোরেরা বুঝবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞ মহল।
০২২০
প্যারিসের ঐতিহ্যবাহী ল্যুভর জাদুঘরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় খোয়া গিয়েছে কিংবদন্তি ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্টের গয়না। নিরাপত্তার ঘোরাটোপ গলে বিভিন্ন সামগ্রী হাতিয়ে নিয়ে কী ভাবে রক্ষীদের চোখের সামনে দিয়ে চম্পট দিল তারা? হন্যে হয়ে এ সব প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ।
০৩২০
তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, এই চুরির নেপথ্যে বড় কোনও চক্র রয়েছে। চুরি যাওয়া রত্নগুলি আলাদা আলাদা করে কালোবাজারে বিক্রি করা হতে পারে বলেও মত অনেকের। সে ক্ষেত্রে চোরেরা দ্রুত জিনিসগুলি বিক্রি করে অর্থের সন্ধান করলে, মূল্যবান ধাতু গলিয়ে ফেলবে তারা। দামি পাথরগুলোকে কেটে ফেলবে।
০৪২০
এই ধরনের চুরি মূলত হয় কালোবাজারে মোটা টাকায় বিক্রির জন্য। এমন অনেক নিদর্শন অতীতে রয়েছে। কিন্তু জানা আছে কি, ভারতের এক জাদুঘর থেকে এ রকমই এক মহামূল্যবান জিনিস এক বার চুরি গিয়েছিল শুধুমাত্র অপমানের বদলা নেওয়ার জন্য! চুরির পর ৩০০ কোটির সেই মহামূল্যবান বস্তুর ভিতরে বিরিয়ানি রেখে খেয়েছিল দুই চোর।
০৫২০
অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনাটি সত্যি। আর সেই ঘটনার কথা জানতে বেশি পিছনে যেতে হবে না। ২০১৮ সালে ঘটে সেই ঘটনা। ঘটে, হায়দরাবাদের নিজ়ামের জাদুঘরে।
০৬২০
২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে দুই চোর ঘুলঘুলির সঙ্কীর্ণ পথ দিয়ে হায়দরাবাদের পুরানি হভেলির দোতলায় অবস্থিত জাদুঘরটিতে প্রবেশ করে। রক্ষীদের অনুপস্থিতিতে একটি লোহার গ্রিল খুলে নিজ়াম পরিবারের ব্যবহৃত বহুমূল্য জিনিসপত্র চুরি করে তারা।
০৭২০
চুরি যাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল হিরে, চুনি এবং পান্নাখচিত দু’কেজি ওজনের একটি সোনার টিফিনবাক্স। মনে করা হয়, সোনার কৌটোটি ছিল খোদ সপ্তম নিজ়ামের। কৌটোর সঙ্গে থাকা চুনি এবং পান্নাখচিত সোনার কাপ, একটি প্লেট, একটি চামচ এবং একটি পাত্রও চুরি গিয়েছিল জাদুঘর থেকে।
০৮২০
টিফিনবাক্স এবং অন্য জিনিসগুলি চুরি করার পর পাশে রাখা সোনার আবরণে মোড়া একটি মূল্যবান কোরানের দিকে নজর পড়ে চোরেদের। কিন্তু তত ক্ষণে ভোরের আলো ফুটেছে। ফজরের আজান (মুসলিমদের ভোরের নমাজ) শুনতে পেয়ে পবিত্র ওই গ্রন্থে আর হাত দেয়নি তারা। চম্পট দেয় সেখান থেকে।
০৯২০
পরদিন সকালে জাদুঘরের সব ঠিকঠাক আছে কি না, তা দেখতে প্রতি দিনের মতোই নজরদারি চালাচ্ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। একটা ঘরের সামনে এসে থমকে যান তাঁরা। ঠিক দেখছেন তো! না কি চোখের ভুল? আরও একটু কাছে যেতেই আঁতকে ওঠেন তাঁরা। ঘরে রাখা মহামূল্যবান সোনার টিফিনবাক্সই যে উধাও! মুহূর্তে গোটা জাদুঘরে খবর চাউর হয়ে যায়। ছুটে আসেন ঊর্ধ্বতন কর্তারা। খবর ছড়াতে দেশ জুড়ে হইচই পড়ে।
১০২০
জানা যায়, সপ্তম নিজ়াম ব্যবহৃত সেই টিফিনবাক্সের দাম নয় নয় করে ৩০০ কোটি টাকা। বাকি জিনিসপত্র ধরলে টাকার অঙ্ক আকাশছোঁয়া। জিনিসগুলি দুবাইয়ের বাজারে বিক্রি হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞেরা।
১১২০
চোরেদের ধরতে ব্যাপক তদন্ত অভিযান শুরু করে পুলিশ। কিন্তু তদন্তের প্রথমেই ধাক্কা খায়। কারণ, জাদুঘরের ভিতরে থাকা ৩২টি সিসি ক্যামেরার একটিতেও তারা ধরা পড়েনি। সব ক’টি ক্যামেরার মুখই অন্য দিকে ঘুরিয়ে রেখেছিল চোরেরা। শুধু বাইরে বেরিয়ে বাইকে চেপে দুই চোরের পালানোর সময়ের দৃশ্য একটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তবে তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ, দুই চোরেরই মুখে মাফলার থাকায়, তাদের মুখ বোঝা যায়নি।
১২২০
তবে তদন্তকারী দল দেখে পালানোর সময় বাইকের পিছনে থাকা চোর ফোনে কথা বলছে। কল ট্র্যাক করতে ২২টি দলকে কাজে লাগানো হয়। প্রায় ৩০০টি মোবাইল টাওয়ার থেকে তথ্য পরীক্ষা করে দেখা হয়। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
১৩২০
তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন অভিযুক্তদ্বয় আসলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইচ্ছা করে ফোনে কথা বলার অভিনয় করেছিলেন। আদতে ওই ফোনে কোনও সিম ছিল না। এর পর পুলিশ ৩০-৪০ জন স্থানীয় চোর-ছিনতাইকারীকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে, যারা ভেন্টিলেটারের সঙ্কীর্ণ পথ দিয়ে যাতায়াত করতে সক্ষম। তাতেও সমাধানসূত্র মেলেনি।
১৪২০
এর পর চারমিনার এলাকার সিসি ক্যামেরায় নজরদারি চালানোর সময় ওই দুই যুবকের বাইকে করে পালানোর ভিডিয়ো হাতে আসে তদন্তকারীদের। কাছের জ়হিরাবাদ জেলায় একটি পরিত্যক্ত বাইকও উদ্ধার হয়।
১৫২০
আরও তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে দুই অভিযুক্ত মুম্বই পালিয়ে গিয়েছেন। মুম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলে থাকছিলেন তাঁরা। সেখানে দিন দুয়েক কাটিয়ে হায়দরাবাদে ফিরতেই তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
১৬২০
সোনার টিফিনবাক্স চুরির এক অভিযুক্তের নাম ছিল ঘৌস। পেশায় রাজমিস্ত্রি ২৫ বছর বয়সি ঘৌসের নামে আগেও ডাকাতি-সহ মোট ২৬টি মামলা চলছিল। জেলও খেটেছিলেন। তবে তিনি চুরির মূলচক্রী ছিলেন না। পরিকল্পনা ছিল অন্য জনের। তাঁর বয়স ছিল ঘৌসের থেকেও কম।
১৭২০
চুরির কয়েক মাস আগে নিজ়ামের জাদুঘরে ঘুরতে এসে নিজ়ামের ওই টিফিনবাক্সে হাত দেওয়ার জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ব্যাপক মার খেতে হয় ওই যুবককে। তখনই বদলার ভাবনা মাথায় আসে। ঘৌসের সঙ্গে মিলে ওই টিফিনবাক্স চুরির ফন্দি আঁটেন তিনি। এর পর পর্যটক সেজে গোটা জাদুঘর ঘুরেও এসেছিলেন তাঁরা।
১৮২০
তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারীরা এমন একটি কথা জানতে পারেন, যা শুনে হতবাক হয়ে যান। অভিযুক্তেরা জানান, নিজ়ামদের জাদুঘর থেকে ওই টিফিন কৌটো-সহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে সটান মুম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলে ওঠেন তাঁরা।
১৯২০
আর সেখানে প্রতি দিন দু’বেলা ওই হিরে-চুনি-পান্নাখচিত সোনার টিফিনবাক্সে বিরিয়ানি রাখেতেন। নবাবি চালে আয়েশ করে সেই বিরিয়ানি খেতেন। চা পান করতেন চুরি করা সোনার কাপে।
২০২০
সোনার টিফিনবাক্স থেকে হায়দরাবাদের নিজ়াম কখনও খেয়েছেন কি না, জানা নেই। তবে ওই দুই চোর তা থেকে আয়েশ করে খাবার খেয়েছিল! যদিও সেই আয়েশ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।