Unknown Disease Claims Lives of Residents Over 40 in Doodh Paniya Village of Bihar dgtl
Bihar's Mysterious Illness
৪০ পেরোলেই হাত-পা অসাড় হয়ে মৃত্যু! অজানা রোগে আতঙ্কিত গোটা এলাকা, বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম কি ‘অভিশপ্ত’?
অজানা রোগে কাবু বিহারের দুধ পানিয়া। ৪০ পেরোলেই গ্রাস করছে মৃত্যু। জল না অন্য কোনও সমস্যা— খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
৪০ পেরোনো মানেই যে কোনও সময় গ্রাস করতে পারে মৃত্যু। বিহারের এক ছোট গ্রামকে এমন ভাবেই মৃত্যুর আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেন!
০২১৮
এক অজানা রোগে ভুগছে বিহারের মুঙ্গের জেলার একটি ছোট গ্রাম। দুধ পানিয়া নামক ওই গ্রামের বাসিন্দা মেরেকেটে ২৫০ জন। এঁদের প্রত্যেকেই মৃত্যুর আশঙ্কায় ভুগছেন।
০৩১৮
কী হয়েছে দুধ পানিয়ার? কেন মৃত্যুভয় জাঁকিয়ে বসেছে সেখানে? এমন প্রশ্নের সঠিক কোনও উত্তরই জানা নেই গ্রামের বাসিন্দাদের। প্রশাসনও খুঁজছে কারণ। যদিও, গ্রামের প্রতিটি মানুষ এইটুকু বুঝে গিয়েছেন, যদি এই সমস্যা দ্রুত না মেটানো যায় তা হলে খুব তাড়াতাড়ি গোটা গ্রামই শেষ হয়ে যাবে।
০৪১৮
পাহাড়ি এলাকার সবুজ প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে থাকা একটি ছোট আদিবাসী গ্রাম হল দুধ পানিয়া। গ্রামবাসীরা মূলত জঙ্গল থেকে কাঠ, পাতা সংগ্রহ করে সেগুলিতে দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বেশির ভাগ মানুষেরই হাল নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো।
০৫১৮
বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন গ্রামবাসীরা। বয়স ৪০ কি ৫০ ছুঁইছুঁই হলেই পঙ্গু হয়ে পড়ছেন তাঁরা। বিশেষ করে পা দু’টি যেন গ্রাস করে ফেলছে কেউ। পায়ের অসাড়তা বলে দিচ্ছে বাকি দিনগুলি এই ভাবেই কাটাতে হবে তাঁদের।
০৬১৮
এমন এক রোগ, যা প্রথমে দেখা দিচ্ছে হাড় ও গাঁটে অসহ্য ব্যথা দিয়ে। ধীরে ধীরে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা শরীরে। একটা সময়ের পর শরীরের সমস্ত পেশি ও হাড় ক্ষয় হতে শুরু করছে।
০৭১৮
শেষমেশ, রোগী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কোমর ও পা সম্পূর্ণ অসাড় হয়ে যাচ্ছে। তবে এই রোগে কিন্তু মৃত্যু চটজলদি আসছে না। বেশ কিছু বছর ভোগান্তির পর রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
০৮১৮
একটি প্রতিবেদন সূত্রে, ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বিনোদ বেসরা বলেছেন, ‘‘আমার বয়স ৫৬ বছর, ২০১৯ সাল থেকে আমি এমন ভাবে জীবন কাটাচ্ছি। আমি ঘরের বাইরে এক পা-ও দিতে পারি না।”
০৯১৮
বহু চিকিৎসা করেও কোনও সাড়া মিলছে না। বিনোদ আরও জানিয়েছেন, তিনি পটনা-সহ অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। এক বার তাঁর পায়ে সামান্য চোট লেগেছিল যদিও পরে সেরে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস যেতেই পা এবং পিঠ ধীরে ধীরে অকেজো হতে শুরু করে তাঁর।
১০১৮
এই ঘটনা শুধু বিনোদের সঙ্গেই ঘটেনি, গোটা গ্রামের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে গিয়েছে এই রোগ। একই পরিবারের সকল সদস্য একসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন। কারও পিঠ বেঁকে যাচ্ছে, কেউ উঠে বসার ক্ষমতা হারাচ্ছেন।
১১১৮
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ছ’জন গ্রামবাসী অজানা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন। এঁদের বেশির ভাগের বয়স ৩৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। এঁরা হলেন বিনোদ বেসরা, কমলেশ্বরী মুর্মু, ছোটা দুর্গা, বড়া দুর্গা, রেখা এবং সূর্য নারায়ণ মুর্মু। যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারে এঁদের।
১২১৮
এ হেন অবস্থার জন্য গ্রামের দীর্ঘকালীন অনুন্নয়নকেই দায়ী করেছেন বেশির ভাগ গ্রামবাসী। তাঁদের ধারণা, এই রোগের উৎপত্তি জল থেকে।
১৩১৮
গ্রামবাসীদের কথায়, সরকার কর্তৃক নলবাহিত জল গ্রামে সরবরাহ হওয়ার পর থেকেই এমন সমস্যায় ভুগছে দুধ পানিয়া। ওই জল সম্পূর্ণ ভাবে দূষিত বলেই দাবি তাঁদের।
১৪১৮
শুরুর দিকে প্রশাসনকে বার বার লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা মিলছিল না। তবে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
১৫১৮
বিহারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের আধিকারিকদের দ্রুত গ্রামে জল পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
১৬১৮
একটি প্রতিবেদন সূত্রে খবর, ওই গ্রামের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক জানিয়েছেন এই সমস্যা জলের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের একটি দলও গ্রামে গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
১৭১৮
সূত্রের খবর, চিকিৎসক সুবোধ কুমার বিশ্বাস তাঁর দল নিয়ে দুধ পানিয়া পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাঁর মতে, দ্রুত গ্রামে চিকিৎসকদের একটি প্যানেল বসানো হবে। গ্রামবাসীদের চিকিৎসার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন সুবোধ। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই সমস্যা মূলত খনিজ পদার্থের অভাব এবং দুর্বল খাদ্যাভ্যাসের কারণে হতে পারে।
১৮১৮
কবে চিকিৎসা হবে, কবেই বা জল পরীক্ষা হবে সেই সব নিয়েই দিন গুনছেন গ্রামের প্রতিটি মানুষ। এখনও পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে দুধ পানিয়া হারিয়েছে ফুলমনি দেবী, রমেশ মুর্মু, মালতি দেবী, সালমা দেবী, রাঙালাল মারান্ডি এবং নান্দু মুর্মুকে। সকলেরই বয়স ৩০ থেকে ৬০-এর মধ্যে।