US boycotts G20 foreign ministers summit in Johannesburg South Africa know impact on India dgtl
G20 Boycotted By US
ভূমি সংস্কারের কথা শুনে গোঁসাঘরে খিল! এ বার জি২০ ছাড়বেন ট্রাম্প? বিপদ বাড়বে নয়াদিল্লির?
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জ়োহানেসবার্গে বসবে জি২০ ভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। ওই সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজ়েশন বা হু)। তার পর রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউনাইটেড নেশন্স হিউম্যান রাইট্স কাউন্সিল বা ইউএনএইচআরসি)। কুর্সিতে বসেই দুই আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই তালিকায় এ বার কি যুক্ত হতে চলেছে জি২০?
০২২১
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন নতুন মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও। সমাজমাধ্যমে করা একটি পোস্টে সাফ জানিয়ে দেন, আসন্ন জি২০ বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন না তিনি। তাঁর ওই পোস্ট প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা।
০৩২১
আগামী ২০-২১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার জ়োহানেসবার্গে চলবে জি২০-ভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) করা পোস্টে রুবিও জানিয়েছেন, ওই সম্মেলন বয়কট করছেন তিনি। কারণ হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী’ মনোভাব এবং পদক্ষেপের কথা বলেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব।
০৪২১
সমাজমাধ্যমে করা পোস্টে রুবিও লিখেছেন, ‘‘জি২০ সম্মেলনের নাম করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল করছে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার। এটা কখনওই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’ এ বারের জি২০ বৈঠকের থিম অবশ্য ‘সংহতি, সমতা এবং স্থায়িত্ব’ রেখেছে আফ্রিকার দক্ষিণ বিন্দুর ওই দেশ।
০৫২১
দিন কয়েক আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নীতির কড়া সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও তাতে আমল দেয়নি কেপ টাউন। তাদের যুক্তি ছিল, বর্ণবৈষম্য দূর করতেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
০৬২১
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ট্রাম্প। ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বৈচিত্র, সাম্য এবং অন্তর্ভুক্তি’ নীতির কড়া সমালোচনা শুরু করেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। ফলে রুবিওর জি২০ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০৭২১
এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের নীতি নিয়েও আপত্তি রয়েছে আমেরিকার। এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে তার উল্লেখ করেছেন বিদেশ সচিব রুবিও। অন্য দিকে এই পরিস্থিতিতে হাল ছাড়তে নারাজ কেপ টাউন। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে তারা।
০৮২১
ট্রাম্পের সাফ কথা, আমেরিকার জাতীয় স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করবেন তিনি। করদাতাদের অর্থ নষ্ট করা বা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কোনও কিছুকেই সমর্থন করতে রাজি নন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসা অবশ্য বলেছেন, ‘‘ভূমি সংস্কার নীতির ব্যাখ্যা ওয়াশিংটনের সামনে রাখতে আমরা প্রস্তুত।’’
০৯২১
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্কের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রামফোসা। পরে এই নিয়ে বিবৃতি দেয় তাঁর অফিস। সেখানে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ভুল বোঝানো’ হচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের।
১০২১
দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বর্ণবৈষম্যের অবসানের তিন দশক পরেও দেশটির অধিকাংশ কৃষিজমি রয়েছে শ্বেতাঙ্গদের হাতে। ফলে ভূমি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রামফোসা সরকার। কিন্তু, বিষয়টি নিয়ে দেশটির উপর ক্রমাগত চাপ তৈরি করে চলেছে ওয়াশিংটন।
১১২১
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ভূমি সংস্কারের কথা বলে মার্কিন বিদেশ সচিব রুবিও জি২০ সম্মেলন বয়কট আসলে একটি বাহানা। এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণ। বন্ধু রাষ্ট্র ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা।
১২২১
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে দেড় বছর ধরে চলা ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে ইহুদি ফৌজের উপর উঠেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি) দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।
১৩২১
এই ঘটনায় খোলাখুলি ভাবে ইহুদিভূমির পাশে দাঁড়ায় আমেরিকা। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার কয়েক দিনের মাথাতেই আইসিসির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায় যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে।
১৪২১
২০১৭-’২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রথম জমানায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উপর ছিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রত্যাহার করে নেন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এর কয়েক মাসের মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।
১৫২১
পুতিনের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের হয়। এর নেপথ্যে ছিল আমেরিকা। কিন্তু ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে সংস্থাটি একই রকমের পদক্ষেপ করতে গেলে বেঁকে বসে ওয়াশিংটন।
১৬২১
এ বছরের নভেম্বরে জি২০-ভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনের আয়োজন করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ওই বৈঠক বয়কট করবেন ট্রাম্প। সেই কারণেই বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না রুবিও। শুধু তা-ই নয়, জি২০ ত্যাগের কথাও ঘোষণা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
১৭২১
ফেব্রুয়ারির জি২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারে ক্রমাগত চাপ দিয়ে চলেছে আমেরিকা। রুবিও সেখানে গেলে লেভরভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা ছিল। সেটা না হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।
১৮২১
জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে জ়োহানেসবার্গ উড়ে যাবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। রুবিও সেখানে গেলে তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারতে পারতেন তিনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সুযোগ পাবেন না নয়াদিল্লির সাবেক দুঁদে আমলা।
১৯২১
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আমেরিকা শেষ পর্যন্ত জি২০ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে তাতে বিপাকে পড়বে ভারত। কারণ, সে ক্ষেত্রে সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চিন এবং রাশিয়ার হাতে চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২১
২০২৩ সালে দিল্লিতে বসেছিল জি২০-ভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলন। সেখানে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর নেতা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরে নয়াদিল্লি। শুধু তা-ই নয়, একসঙ্গে আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনকে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
২১২১
প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার মুখে ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে হওয়া ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন’ (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন বা নেটো) থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প। তবে এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। জি২০ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নমনীয় হন কি না, সেটাই এখন দেখার।