US lagged behind from China in war preparation despite trillion-dollar defence budget, says survey report dgtl
US War Preparation
মার্কিন হাতিয়ারে বাসা বেঁধেছে চিনা ঘুণপোকা! যুদ্ধপ্রস্তুতিতে ‘বিপজ্জনক ভাবে’ ড্রাগনের থেকে পিছিয়ে আমেরিকা, বলছে সমীক্ষা
আধুনিক লড়াইয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে চিন এবং রাশিয়ার থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের সমীক্ষক সংস্থার রিপোর্টে তার উল্লেখ মিলতেই দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে হইচই।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে লড়াই করার প্রস্তুতিই নেই আমেরিকার। বাহিনীর জন্য বিপুল ব্যয় বরাদ্দ করা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা শিল্পে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ও বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে মাতামাতির মধ্যেই ওয়াশিংটনের সমীক্ষক সংস্থা ‘গোভিনি’র এ-হেন রিপোর্ট ঘিরে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। তাদের দাবি, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় অভিযান চালানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সৈনিকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে পারছে না পেন্টাগন।
০২১৮
সম্প্রতি, ‘২০২৫ ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্কোরকার্ড’ শীর্ষক একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘গোভিনি’। সেখানে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে লাগাতার চেষ্টা করা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণে চিনা নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দিকে, দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মস্কো এবং বেজিং এ ব্যাপারে কারও মুখাপেক্ষী নয়। সেই কারণে যুদ্ধের সময়ে হাতিয়ারের নিরিখে যুক্তরাষ্ট্র যে অনেকটা পিছিয়ে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।
০৩১৮
সংশ্লিষ্ট সমীক্ষার রিপোর্টে একটি উদাহরণের সাহায্যে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝানোর চেষ্টা করেছে ‘গোভিনি’। তাদের দাবি, গত বছর আমেরিকার ন’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা কর্মসূচির প্রাথমিক ঠিকাদার ছিল চিন। বেজিঙের সংস্থাগুলির সেখানে প্রায় ১০ শতাংশ অবদান লক্ষ করা গিয়েছে। এই প্রবণতা আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটনের ওই সমীক্ষক সংস্থা। যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি পেন্টাগন।
০৪১৮
রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্র বা ডিআইবির (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেস) ফাঁকফোকরগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে চিন ও রাশিয়া কেন আমেরিকার থেকে এগিয়ে, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন সমীক্ষকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘শেষ তিন দশক ধরে দ্রুত গতিতে সামরিক আধুনিকীকরণের কাজ চালিয়ে গিয়েছে বেজিং। গত বছর প্রতিরক্ষা খাতে ২৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় বরাদ্দ করে ড্রাগন সরকার। অন্য দিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রুশ হাতিয়ার নির্মাণ শিল্প চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে।’’
০৫১৮
২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে কিভে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ (পড়ুন স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন) চালিয়ে আসছে মস্কো। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ে রুশ অস্ত্র কারখানাগুলি যে পরিমাণ কামানের গোলা (আর্টিলারি শেল) উৎপাদন করত, তিন বছর পেরিয়ে তার পাঁচ গুণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমীক্ষকদের দাবি, এই ছবি মার্কিন ডিআইবির সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে হাতিয়ার নির্মাণে রয়েছে গদাইলশকরি চাল। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি অত্যাধুনিক হাতিয়ার নির্মাণের সময়ে একাধিক চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হচ্ছে।
০৬১৮
‘গোভিনি’র সমীক্ষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্রের ‘দুরবস্থার’ জন্য মূলত মার্কিন আমলাতান্ত্রিক অনমনীয়তাকে দায়ী করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামরিক শিল্পোৎপাদনে লগ্নি কমে গিয়েছে, এমনটা নয়। কিন্তু সমস্যা হল, প্রায় প্রতিটি হাতিয়ারের ক্ষেত্রেই দেখা যাবে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, খুচরো যন্ত্রাংশ এবং প্রযুক্তির ব্যাপারে বিদেশি সরবরাহকারীদের উপর সেখানকার সংস্থাগুলি নির্ভরশীল। শুধু তা-ই নয়, প্রতিপক্ষ দেশগুলি থেকেও বিপুল পরিমাণে আসছে ওই সমস্ত উপাদান।
০৭১৮
সূত্রের খবর, যে ন’টি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি নির্ভরশীলতা রয়েছে সেগুলি হল যুদ্ধবিমান, রণতরী, স্থলবাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র, মহাকাশের গুপ্তচর কৃত্রিম উপগ্রহ, কমান্ড কন্ট্রোল কমিউনিকেশনস কম্পিউটার অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স সেন্টার তৈরি, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স) এবং পরমাণু হাতিয়ার। এগুলির নির্মাণকাজে যে জটিল যৌগ বা খনিজ পদার্থের প্রয়োজন হয়, তার পুরোটাই আসে ড্রাগনভূমি থেকে।
০৮১৮
এ প্রসঙ্গে ‘গোভিনি’র চিফ এক্জ়িকিউটিভ মার্ফি ডগার্টি বলেছেন, ‘‘চিন ইচ্ছা করলে জটিল যৌগ বা খনিজ পদার্থের সরবরাহ বন্ধ করতে পারে। আর তাই বেজিঙের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বেশ কঠিন। আমেরিকার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলির দিকে তাকালেই সেই সত্যটা উপলব্ধি করা যাবে। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারগুলির নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রয়েছে ড্রাগনের বিভিন্ন সংস্থার।”
০৯১৮
পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে বেজিঙের উপর নির্ভরশীলতা ছিল সবচেয়ে কম। কিন্তু সমীক্ষকদের দাবি, গত কয়েক বছরে সেটাও মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই মারণাস্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে চিনা সরবরাহকারীদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৫৩৪-এ পৌঁছে গিয়েছে। সেখানে ব্রিটেন, জাপান ও কানাডার থেকে অনেকটা এগিয়ে আছে ড্রাগন সরকার। আমেরিকার আণবিক হাতিয়ার নির্মাণে ওই তিন দেশের ৩৬৬, ২৩০ এবং ৪০৫টি সরবরাহকারী সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
১০১৮
একই ভাবে গোলা-বারুদ উৎপাদন এবং সরবরাহের ক্ষেত্রেও চিনের যথেষ্ট মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সমীক্ষকদের দাবি, ওই জায়গায় বেজিঙের উপর প্রায় ১১ শতাংশ নির্ভরশীলতা রয়েছে আমেরিকার। পাশাপাশি, সামুদ্রিক ক্ষেত্রে ১০.১ শতাংশ, বিমানের ক্ষেত্রে ৮.৫ শতাংশ এবং মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ ড্রাগনের অবদানকে মেনে নিয়ে এগোচ্ছে ওয়াশিংটন। সব মিলিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের মোট ন’টি জায়গায় ৩৭ শতাংশ দখল করে ফেলেছে চিন।
১১১৮
সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, আমেরিকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণের উপাদানগুলির ১০ শতাংশ এমন কয়েকটি দেশের থেকে আসছে, যাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। এর মধ্যে ন’শতাংশ সরঞ্জাম আসে শুধুমাত্র চিন থেকে। তবে ৩৫ শতাংশ উপাদান ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রগুলির থেকে পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ১৮ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করে কিছু নিরপেক্ষ দেশ, যার মধ্যে ভারতও রয়েছে।
১২১৮
এই নির্ভরশীলতা কী ভাবে আমেরিকা কাটাতে পারবে, তার অবশ্য কোনও উত্তর দিতে পারেননি মার্ফি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণের মূল উপাদানগুলির সরবরাহ শৃঙ্খল খুবই ভঙ্গুর। শত্রুরা এর পূর্ণ সুযোগ নিতে পারে। বিদেশি সরবরাহকারীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলে প্রতিরক্ষা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। আবার অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকাটাও কোনও কাজের কথা নয়।’’
১৩১৮
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর চিনের থেকে বিপুল পরিমাণে বিরল খনিজ পদার্থ কিনে থাকে মার্কিন সরকার। এর প্রায় পুরোটাই যায় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থাগুলির কারখানায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর বেজিঙের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরই ওই খনিজগুলি ওয়াশিংটনে রফতানি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ড্রাগনভূমির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের প্রশাসন। এতে আমেরিকার হাতিয়ার নির্মাণ শিল্পে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৪১৮
পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি সামলাতে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলে আমেরিকা। কিন্তু তার পরেও সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি বেজিং। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গত বছর সংবেদনশীল পারমাণবিক ক্ষেত্রে দু’পক্ষের বেশি পেটেন্ট দাখিল করে ড্রাগন সরকার। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ হাজার।
১৫১৮
একই ভাবে গত বছর মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত শিল্পক্ষেত্রে পেটেন্ট পাওয়ার জন্য চিনের আবেদনের সংখ্যা ছিল তিন লক্ষ। আমেরিকার ক্ষেত্রে ওই সংখ্যা এক লক্ষে গিয়ে থেমে যায় বলে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণকারী সংস্থাগুলির উপাদান সরবরাহের দিকে নজর দিয়েছে পেন্টাগন। এ ব্যাপারে ড্রাগনের উপরে নির্ভরশীলতা কমাতে দেশীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে পেন্টাগন। যদিও সেটা গড়ে উঠতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৬১৮
‘গোভিনি’র রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা খাতে মার্কিন সরকারের খরচের বড় অংশই যায় শীর্ষ হাতিয়ার সরবরাহকারী সংস্থাগুলির পকেটে। সেই তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে আমেরিকার নৌবিভাগ। তাদের জন্য বরাদ্দ করা ডলারের ৭৭ শতাংশ পায় রণতরী ও ডুবোজাহাজ নির্মাণকারী মাত্র ১০টি কোম্পানি। বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে ৭৩ শতাংশ এবং সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ব্যয়বরাদ্দের দখল রয়েছে মূল ১০টি অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থার হাতে।
১৭১৮
মার্ফি ডগার্টি জানিয়েছেন, এই কারণে অস্ত্রের উপাদান সরবরাহ করতে ইচ্ছুক নয় কোনও আমেরিকান সংস্থা। প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্ষেত্রে সেই বাস্তুতন্ত্রটা সঠিক ভাবে এখনও যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ওঠেনি। সমস্যার বিষয় হল, এ ব্যাপারে সরকার এবং শীর্ষ হাতিয়ার নির্মাণকারী সংস্থাগুলি বেশ উদাসীন। যুদ্ধের সময়ে ওয়াশিংটনের বড় বিপদের কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
১৮১৮
চিনের পাশাপাশি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে রাশিয়াও। ইউক্রেনে যুদ্ধের মধ্যে হাতিয়ার নির্মাণ শিল্পকে আরও উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে মস্কো। অস্ত্র উৎপাদনে কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ক্রেমলিনের বেজিঙের উপরে নির্ভরশীলতা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির যে জায়গাগুলি রুশ সৈন্যদের দখলে রয়েছে, সেখানে আছে বিপুল পরিমাণে বিরল খনিজের ভান্ডার। ফলে আগামী দিনে ওই ব্যাপারেও আর ড্রাগনের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না সেখানকার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।