US top generals called for urgent meeting, is Trump planning for a major war dgtl
US Generals Meetings
আচমকা বাহিনীর সমস্ত শীর্ষকর্তাকে তলব, ‘আনফিট’ জেনারেলদের গণহারে ছাঁটাই? না কি বড় কোনও যুদ্ধে নামছেন ট্রাম্প?
হঠাৎ করেই দেশের সমস্ত জেনারেল এবং অ্যাডমিরালদের বৈঠকে ডেকেছেন মার্কিন যুদ্ধসচিব পিট হেথসেট। বড় কোনও লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকা? রাশিয়া না কি আফগানিস্তান, কোথায় বাহিনী পাঠাবেন ট্রাম্প? তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এ-যেন আপাত শান্ত নদীতে হঠাৎই হড়পা বান! বিশ্বের এক নম্বর ‘সুপার পাওয়ার’ দেশের শরীরী ভাষায় ফুটে উঠল সেই লক্ষণ। আচমকাই সমস্ত সেনাকর্তাকে তলব করেছেন সেখানকার যুদ্ধসচিব। তাঁর মাথার উপর আবার রয়েছে ‘খামখেয়ালি’ দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্টের হাত। ফের বড় কোনও সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি? না কি সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচের কঠিন চ্যালেঞ্জ? ফৌজি জেনারেলদের বৈঠকের খবর প্রকাশ্যে আসতেই এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
০২২০
চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন ফৌজকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদসংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’। সেখানে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর সমস্ত শীর্ষকর্তাদের জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্য তথা দেশের যুদ্ধসচিব পিট হেগসেথ। কিন্তু, অসময়ে কেন এই তলব? সরকারি ভাবে তার কারণ জানায়নি ওয়াশিংটন। ফলে এই খবরকে কেন্দ্র করে আমেরিকা তথা গোটা বিশ্ব জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
০৩২০
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ দফতরের মূল কার্যালয় পেন্টাগনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা ‘সিএনএন’ জানিয়েছে, হেগসেথের বৈঠকে হাজির থাকবেন কয়েকশো জেনারেল এবং অ্যাডমিরাল। এ ছাড়া বায়ুসেনা, সাইবার এবং স্পেস কমান্ডের শীর্ষ ফৌজি অফিসারদেরও ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভার্জিনিয়ার সেনাছাউনিতে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পিট। ‘টপ সিক্রেট’ ওই বৈঠকের আলোচ্য সূচি যাতে কোনও ভাবেই ফাঁস না হয়, তার দিকে কড়া নজর রাখছে তাঁর দফতর।
০৪২০
মার্কিন গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে জেনারেল এবং অ্যাডমিরালের সংখ্যা প্রায় ৮০০। এদের মধ্যে আমেরিকার ভিতরে মোতায়েন রয়েছেন অন্তত ৪৪ জন। দেশের বাইরের বিভিন্ন ছাউনিগুলির দায়িত্ব আছে বাকিদের কাঁধে। বিশ্বের অন্তত ৫৫টি রাষ্ট্রে ছড়িয়ে আছে ওয়াশিংটনের অসংখ্য সামরিক ঘাঁটি। এর সংখ্যা কমপক্ষে ১৫০ বলে জানা গিয়েছে।
০৫২০
যুদ্ধসচিব হেগসেথের সঙ্গে সেনার শীর্ষ অফিসারদের এই বৈঠকের খবর প্রথম বার প্রকাশ্যে আনে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। যুক্তরাষ্ট্রের এই জনপ্রিয় গণমাধ্যমটিও বৈঠকের আসল কারণ বলতে পারেনি। তবে তাদের দাবি, বেশ কিছু অস্বাভাবিক পদক্ষেপের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হল সামরিক বাহিনীতে ব্যাপক ছাঁটাই। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে যা ফের এক বার আমেরিকায় দেখতে পাওয়া যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
০৬২০
গত মে মাসে মার্কিন ফৌজের চার তারা যুক্ত জেনারেলদের ২০ শতাংশকে ছাঁটাইয়ের নির্দেশ দেন হেগসেথ। পাশাপাশি সমস্ত জেনারেল এবং ফ্ল্যাগ অফিসারদের মধ্যে থেকে অতিরিক্ত ১০ শতাংশকে বরখাস্ত করতে বলেছেন তিনি। এ ছাড়া ন্যাশনাল গার্ডের শীর্ষপদে ২০ শতাংশ আধিকারিক কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
০৭২০
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে নৌবাহিনীর অন্যতম শীর্ষকর্তা অ্যাডমিরাল লিসা ফ্রাঞ্চেটি এবং বিমানবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী জেনারেল জেমস স্লাইফকে কোনও কারণ না দেখিয়ে বরখাস্ত করেন মার্কিন যুদ্ধসচিব। ওই সময় তাঁর নির্দেশে সেনাবাহিনীর শীর্ষ আইনজীবীদেরও ছাঁটাই করা হয়। পরে ‘ফক্স নিউজ়’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গোটা বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন পিট হেগসেথ।
০৮২০
মার্কিন যুদ্ধসচিবের যুক্তি, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাহিনীতে চার তারা যুক্ত জেনারেলের সংখ্যা ছিল মাত্র সাত। তা সত্ত্বেও ফ্রান্সের নর্ম্যান্ডি জার্মানি এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় জাপানি সাম্রাজ্যকে গুঁড়িয়ে দিতে আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি। লড়াইয়ে জিততে হলে বাহিনীর নীচু স্তরে অফিসার ও সৈনিকের সংখ্যা বেশি রাখতে হবে। কারণ, রণাঙ্গনে তাঁদেরই মোতায়েন রাখতে হয়।’’ এর পরই ফৌজের উপরের তলার অফিসারের সংখ্যা হ্রাস করার ইঙ্গিত দেন তিনি।
০৯২০
আমেরিকার সংবাদসংস্থাগুলির একাংশের দাবি, ভার্জিনিয়ার বৈঠকে ট্রাম্পের নতুন রণনীতি ঘোষণা করবেন হেগসেথ। ফলে সংশ্লিষ্ট সম্মেলনের পর চাকরি খোয়াতে পারেন ফৌজের উপরতলার একগুচ্ছ জেনারেল ও অ্যাডমিরাল। কেউ কেউ অবশ্য এতে সহমত নন। তাঁদের যুক্তি, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কমান্ড সেন্টারগুলিতে এ বার রদবদল করবে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে নতুন কাজের দায়িত্ব পাবেন জেনারেল এবং অ্যাডমিরালরা। বাহিনীতে দেখা যাবে ব্যাপক রদবদল।
১০২০
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা অবশ্য এই ধরনের জল্পনা মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, সেনা অফিসারদের বরখাস্তের জন্য জেনারেল ও অ্যা়ডমিরাল পর্যায়ে সম্মেলন ডাকার কোনও প্রয়োজন নেই। আগেও সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হেগসেথ। তার জন্য তাঁকে বৈঠক করতে হয়নি। একই কথা বদলি বা নতুন দায়িত্ব বিলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পেন্টাগনে বসে যে কাজ করা যায়, তার জন্য কেন ভার্জিনিয়া ছুটবেন মার্কিন যুদ্ধসচিব? আর তাই এর নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন তাঁরা।
১১২০
বিশ্লেষকদের অনুমান, আগামী দিনে দু’টি জায়গাকে নিশানা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে রাশিয়ার নাম। গত ২৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই ১৮০ ডিগ্রি বেঁকে গিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে মদত দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিভ তার হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতেই পারে বলে বিবৃতি দেন তিনি। পাশাপাশি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি হতাশাও ব্যক্ত করতে শোনা যায় তাঁকে।
১২২০
সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ড্রাগনভূমির তিয়েনজ়িনে ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিওর (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন) শীর্ষ বৈঠকে ভারত-রাশিয়া-চিন কাছাকাছি আসায় উষ্মা প্রকাশ করে ওয়াশিংটন। ঠিক তার পরেই জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে বেজিঙের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের আয়োজন করেন মান্দারিনভাষী প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং ডেমোক্রেটিক পিপল্স রিপাবলিক অফ কোরিয়া বা ডিপিআরকের (উত্তর কোরিয়া) সুপ্রিম লিডার কিম জং-উন।
১৩২০
ভারত-রাশিয়া-চিন এবং শি-পুতিন-কিমকে এক মঞ্চে দেখে কটাক্ষ করেন ট্রাম্প। এই ঘটনাকে আমেরিকার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানো অক্ষশক্তি হিসাবেই দেখেছে ওয়াশিংটন। ফলস্বরূপ তড়িঘড়ি প্রতিরক্ষা দফতরের নাম বদলে তা যুদ্ধ দফতর করে দেন বর্ষীয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্য দিকে, বেজিং থেকে ফিরে গিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় সামরিক জোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটোকে (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) উস্কানি দিতে শুরু করেন পুতিন।
১৪২০
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে একগুচ্ছ রুশ ড্রোন। এর পর মস্কোর বিমানবাহিনী ও মানববিহীন উড়ুক্কু যানের বিরুদ্ধে ওঠে এস্টোনিয়া-সহ একাধিক নেটো-ভুক্ত দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার গা ঘেঁষে লড়াকু জেট বেশ কয়েক বার উড়িয়েছে ক্রেমলিন। বিশ্লেষকদের দাবি, এই কৌশলেই ট্রাম্পের উপর পাল্টা চাপ তৈরি করছেন পুতিন। তারই পরিণতি হল ভার্জিনিয়ার সেনা পর্যায়ের বৈঠক।
১৫২০
এ ব্যাপারে আর একটি মতবাদ রয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন সফরে গিয়ে আচমকাই তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের কাছে বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত চেয়ে বসেন ট্রাম্প। ২০০১ সালে পঠানভূমি দখল করার পর থেকে সংশ্লিষ্ট ছাউনিটি ছিল মার্কিন সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে। একে কেন্দ্র করে হিন্দুকুশের কোলের দেশটিতে একের পর এক সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল তারা।
১৬২০
কিন্তু, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে খুব সহজেই বাগরাম বিমানঘাঁটিটি চলে যায় তালিবানের কব্জায়। ট্রাম্পের যুক্তি, চিনের পরমাণু কর্মসূচির উপর নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। তাই বাগরাম ফেরত চাইছেন তিনি। তালিবান নেতৃত্ব অবশ্য সংশ্লিষ্ট ছাউনিকে ফিরিয়ে দিতে নারাজ। এর জন্য প্রয়োজনে আমেরিকার সঙ্গে ২০ বছর যুদ্ধ চালানোর হুঙ্কারও দিয়ে রেখেছে তারা।
১৭২০
বিশ্লেষকদের দাবি, বাগরামের জন্য ফের এক বার আফগানিস্তান আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকা। হিন্দুকুশের কোলের দেশটি স্থলবেষ্টিত হওয়ায় সেখানে সামরিক অভিযান চালানো মোটেই সহজ নয়। অতীতে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করে পাকিস্তান। এ বারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
১৮২০
গত ২৫ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এবং দেশটির সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ট্রাম্প। সূত্রের খবর, যা চলে প্রায় ৮০ মিনিট। আলোচনা শেষে সরকারি ভাবে দুই রাষ্ট্রনেতার কোনও ছবি প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। প্রথা মেনে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকও করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর এ-হেন পদক্ষেপ ঘিরে ধোঁয়াশা দানা বেঁধেছে।
১৯২০
সাবেক সেনাকর্তারা মনে করেন, আফগানিস্তান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া ট্রাম্পের পক্ষে মোটেই সহজ নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরমাণু কর্মসূচির উপর নজরদারি চালাক, তা মেনে নেওয়া চিনের পক্ষে অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, আমেরিকাকে মধ্য এশিয়ার যুদ্ধে ব্যস্ত রাখতে তালিবানকে খোলা সমর্থন করতে পারে রাশিয়া ও ইরান। সাবেক পারস্য দেশটির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ‘সাপে-নেউলে’ বললে অত্যুক্তি হবে না।
২০২০
তবে জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর থেকে শুল্ক, বাণিজ্য নীতি-সহ একাধিক ইস্যুতে দেশের ভিতরেই কমেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা। ফলে আগামী দিনে ‘মিড টার্ম’ নির্বাচনে খারাপ ফল করতে পারে তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টি। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধে জড়িয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলার চেষ্টা করতে পারেন বর্ষীয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সে ক্ষেত্রে পূর্ব ইউরোপ না কি আফগানিস্তান— কোন রণাঙ্গন তিনি বেছে নেবেন, তার উত্তর দেবে সময়।