USA may get first buyer of F-47 sixth generation fighter jet, is it India dgtl
Boeing F-47
সবচেয়ে শক্তিশালী জেট তৈরি শুরু হতে না হতেই খদ্দেরের লাইন! ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রের হাতেই কি প্রথম ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ তুলে দেবেন ট্রাম্প?
ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেট এফ-৪৭-এর নির্মাণকাজ শুরু করতে না করতেই বিদেশি ক্রেতা পেতে চলেছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে রক্তচাপ বাড়বে চিনের। অত্যাধুনিক ওই মার্কিন যুদ্ধবিমান কি পেতে পারে ভারতও?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ ১০:৩৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেট এফ-৪৭কে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সেই ঘোষণার পর তিন মাসও কাটেনি। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির প্রথম ‘খদ্দের’ পেয়ে গেল আমেরিকা। কোন ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রের হাতে তা তুলে দেবে মার্কিন প্রশাসন? এতে কার কার বাড়বে রক্তচাপ? এই সমস্ত প্রশ্নে এখন সরগরম গোটা দুনিয়া।
০২১৮
দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকা অত্যাধুনিক এই লড়াকু জেট তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই তা বহরে শামিল করতে আগ্রহী হয়েছে জাপান। সূত্রের খবর, চলতি বছরের মে মাসে এ ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে একপ্রস্ত আলোচনাও সেরেছেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। যদিও সরকারি ভাবে এই বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি ওয়াশিংটন বা টোকিয়ো।
০৩১৮
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, জাপান চতুঃশক্তি জোট বা কোয়াডের (কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়লগ) সদস্য। আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই সংগঠনে রয়েছে ভারতও। কোয়াডকে ইতিমধ্যেই এশিয়ার ‘নেটো’ বলে উল্লেখ করেছে চিন। তা ছাড়া গত কয়েক বছরে বেজিঙের সঙ্গে ক্রমশ বেড়েছে টোকিয়োর দ্বন্দ্ব। এই পরিস্থিতিতে ‘সূর্যোদয়ের দেশ’টি ষষ্ঠ প্রজন্মের মার্কিন লড়াকু জেট হাতে পেলে ড্রাগনের রক্তচাপ যে কয়েক গুণ বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
০৪১৮
অন্য দিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমেরিকার বন্ধুরা এফ-৪৭ কেনার জন্য ফোনে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এই যুদ্ধবিমানের হালকা সংস্করণ তাদের কাছে বিক্রি করব। সেই লড়াকু জেটগুলি ১০ শতাংশ কম শক্তিশালী হবে।’’ তবে ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেট কত সংখ্যায় ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রগুলিকে বিক্রি করা হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট করেনি ওয়াশিংটন।
০৫১৮
গত ২১ মার্চ রাজধানী ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে বসে ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেটের বিষয়টি ফলাও করে ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ওই সময়ে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ এবং একগুচ্ছ পদস্থ সেনা অফিসার। ট্রাম্প ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তাঁর সম্মানে যুদ্ধবিমানটির নাম এফ-৪৭ রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
০৬১৮
ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেটটি নিয়ে কথা বলার সময় যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে অত্যাধুনিক, সক্ষম এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধবিমান হিসাবে এটি তৈরি করা হচ্ছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, কোনও শত্রু দেশ এর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না।’’ গত পাঁচ বছর ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে ‘এফ-৪৭’-এর লাগাতার পরীক্ষানিরীক্ষা চলেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
০৭১৮
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, তাঁর কার্যকালের মেয়াদের মধ্যেই (আগামী চার বছরে) এফ-৪৭ যুদ্ধবিমানের বহর হাতে পাবে আমেরিকার বায়ুসেনা। তবে প্রথম পর্যায়ে এই লড়াকু জেট কতগুলি তৈরি করা হবে, তা জানা যায়নি। বিখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িংয়ের কাঁধে এফ-৪৭ নির্মাণের ভার দিয়েছেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প।
০৮১৮
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘নেক্সট জে়নারেশন এয়ার ডোমিন্যান্স’ (এনজিএডি) প্রকল্পের আওতায় এফ-৪৭কে তৈরি করবে বোয়িং। সূত্রের খবর, এর জন্য প্রাথমিক ভাবে দু’হাজার কোটি ডলারের বরাত পেয়েছে বিমান নির্মাণকারী সংস্থা। বর্তমানে মার্কিন বায়ুসেনা এফ-২২ র্যাফটার নামের দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি লড়াকু জেট ব্যবহার করে। এরই বদলি হিসাবে আসবে এফ-৪৭।
০৯১৮
আমেরিকার বিমানবাহিনীর আশা, ২০৩০ সালের মধ্যে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলি হাতে পাবে তারা। এফ-৪৭ নির্মাণের বরাত জনপ্রিয় লড়াকু জেট নির্মাণকারী সংস্থা লকহিড মার্টিনের কাছে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোয়িং তা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানটি তৈরি হয়ে গেলে ধীরে ধীরে অস্তাচলে যাবে মার্কিন বায়ুসেনার বহরে থাকা এফ-১৫, এফ-১৬, এফ-১৮ এবং এফ-৩৫-এর মতো লড়াকু জেটগুলি।
১০১৮
ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণার সময়ে এর একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে আমেরিকা। এফ-৪৭-এর বিশেষত্ব অবশ্য নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটি একাধিক ড্রোন নিয়ে উড়বে আকাশে। ককপিটে বসে ড্রোনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন ফাইটার পাইলট। ফলে একাধিক স্তরে আক্রমণ শানাতে পারবে এফ-৪৭।
১১১৮
মার্কিন সেনা অফিসার মেজর জেনারেল জোসেফ কুঙ্কেল জানিয়েছেন, আগামী দিনে আমেরিকার বায়ুসেনার সমস্ত অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে এফ-৪৭কে। আকাশের লড়াইকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাবে এই লড়াকু জেট। এতে যুদ্ধবিমান এবং ড্রোনের মিশেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজ। তবে এফ-৪৭ নির্মাণের খরচ পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ লাইটনিং টুর চেয়ে বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১২১৮
সূত্রের খবর, ষষ্ঠ প্রজন্মের নতুন লড়াকু জেটটিতে বহুল পরিমাণে কৃত্রিম মেধা (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। আর তাই এর নকশা অন্যান্য যুদ্ধবিমানের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুসেনা প্রধান জেনারেল ডেভিড অ্যালভিন ইতিমধ্যেই একে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে উল্লেখ করেছেন।
১৩১৮
মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ আবার এফ-৪৭-এর ঘোষণার দিনকে আমেরিকার যুদ্ধবিমানের জন্য ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে এফ-১৫, এফ-১৬, এফ-২২ আর এফ-৩৫ লড়াকু জেট আছে। তাই বন্ধু আর প্রতিপক্ষদের কাছে একটা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি। আগামী দিনে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় শক্তি প্রদর্শন করতে আমরা প্রস্তুত।’’
১৪১৮
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান মাওয়ের জন্মদিনে সিচুয়ান প্রদেশের চেংডুতে ‘ঝুহাই এয়ার শো’র আয়োজন করে চিনের পিপল্স লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ-র বিমানবাহিনী। সেখানে প্রথম বার লেজকাটা কিম্ভূতদর্শন একটি যুদ্ধবিমান আকাশে ওড়ায় বেজিং। এটিকে ড্রাগনের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বলে দাবি করেছিলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ।
১৫১৮
লালফৌজের বায়ুবীরদের অস্ত্রাগারে শামিল হতে চলা নতুন ওই হাতিয়ারের পোশাকি নাম জে-৩৬। দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু বিমান তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বেজিং। মাঝে ২০১৯ সালে এই প্রকল্পে আরও গতি আনার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অবশেষে ২০২৪ সালের বিদায়বেলায় ক্ষমতা প্রদর্শন করেন তিনি।
১৬১৮
চিনের জে-৩৬ যুদ্ধবিমান একাধিক ড্রোন নিয়ে আকাশে উড়তে পারে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। সমর বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য মনে করেন এ ব্যাপারে খুব বেশি পিছিয়ে নেই ড্রাগন। বায়ুসেনাকে আমেরিকার সমকক্ষ করে তুলতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট শি। এর জন্য বিপুল অর্থও খরচ করছে বেজিং।
১৭১৮
অন্য দিকে দুই ম্যাক (পড়ুন শব্দের দ্বিগুণ) গতিতে মার্কিন লড়াকু জেট এফ-৪৭ ছুটতে পারবে বলে জানা গিয়েছে। রাডারকে ফাঁকি দিতে এর ‘স্টেল্থ’ ক্যাটেগরি বৃদ্ধি করেছেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, আগামী দিনে নেটো-ভুক্ত (উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন) দেশগুলিকে এই লড়াকু জেট বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। সে ক্ষেত্রে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশের বায়ুসেনার বহরে দেখা যেতে পারে এফ-৪৭।
১৮১৮
তবে জাপান এফ-৪৭র প্রথম ক্রেতা হলে ওয়াশিংটন ও টোকিয়োর মধ্যে আরও দৃঢ় হবে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, ভারত কোয়াডের সদস্য হওয়ায় আগামী দিনে এই লড়াকু জেট বিক্রির জন্য মেগা অফার দিতে পারে আমেরিকা। নয়াদিল্লি আরও বেশি করে মার্কিন হাতিয়ার কিনুক তা চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।