What is Sir Creek for which the dispute between India and Pakistan is still running even after partition dgtl
Sir Creek
কাশ্মীর ছাড়া আরও একটি আন্তর্জাতিক সীমানা নিয়ে ভারত-পাকিস্তান বিবাদ এখনও জারি
কী এই স্যর ক্রিক? এই নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ কিসের? বিবাদ মেটাতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছিল কি?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদের কথা উঠলেই সবার প্রথমে সামনে আসে সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের কথা। ভারতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই সীমান্তকে বিশ্বের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সীমান্ত বলে মনে করা হয়।
০২২৩
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় স্যর ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ এই সীমান্ত নির্ধারণ করেন। এর ফলে স্বাধীনতার পরবর্তী কালেও বেশ কয়েক বার যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছে এই দুই দেশকে।
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
০৩২৩
১৯৪৮ সালের প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি রেখা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে দুই দেশের মধ্যে শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, জম্মু এবং কাশ্মীর যুদ্ধবিরতি রেখা ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ বা এলওসি-তে পরিবর্তিত হয়।
০৪২৩
এলওসি বা নিয়ন্ত্রণরেখার সবচেয়ে উত্তরের পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত ‘এনজে৯৮৪২’। এই এনজে৯৮৪২ কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত। এর নিকটেই রয়েছে সিয়াচেন হিমবাহ। এই এনজে৯৮৪২ পয়েন্টকে নিয়েই ১৯৮৪-তে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিয়াচেনের সংঘর্ষ বাধে। প্রায় ১৯ বছর ধরে এই বিবাদ স্থায়ী হয়েছিল।
০৫২৩
নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) যেমন কাশ্মীর থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে আলাদা করে রেখেছে, সেই রকমই দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতের গুজরাত এবং পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশকে আলাদা করে রেখেছে ‘স্যর ক্রিক’। এই ‘স্যর ক্রিক’ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
০৬২৩
১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বায়ুসেনার বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে এই এলাকা দিয়ে ভারতের আকাশে ঢুকে পড়ে। ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২১ বিমান পাকিস্তানি বিমানটিকে কচ্ছের রণের কাছে ধ্বংস করে। এই ঘটনায় ১৬ জন পাক সেনা নিহত হন।
০৭২৩
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই দেশের আলোচনা কাশ্মীর এবং সিয়াচেনেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর ফলে স্যর ক্রিকে সীমান্ত সমস্যাকে কোনও দেশই বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় না।
০৮২৩
কী এই স্যর ক্রিক? এই নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ কিসের? বিবাদ মেটাতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছিল কি?
০৯২৩
‘ক্রিক’ হল এক রকমের কম গভীরতাযুক্ত জলের প্রবাহ। নদীর মতো মনে হলেও এগুলি আসলে নদী নয়। ভারত পাকিস্তান-সহ বহু দেশে এ রকম জলের প্রবাহ দেখতে পাওয়া যায়। স্যর ক্রিকের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। যাত্রাপথের শেষে আরব সাগরে মিশেছে এটি।
১০২৩
সিন্ধু নদের ব-দ্বীপে তৈরি হয়েছে এই ক্রিক। এই অঞ্চলটি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অবস্থিত একটি বিতর্কিত ভূখণ্ড। এটি ভারতের কচ্ছের রণের পশ্চিমে অবস্থিত। কচ্ছ এলাকাকে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে আলাদা করে রেখেছে স্যর ক্রিক। ভারতে একে আগে ‘বান গঙ্গা’ বলে ডাকা হত।
১১২৩
ব্রিটিশ আমলে কোনও এক ইংরেজের নামে এর নাম রাখা হয় স্যর ক্রিক। ভূগোল অনুযায়ী ভারতের দিকে স্যর ক্রিক ছাড়াও আরও পাঁচটি ক্রিক রয়েছে। সেগুলি হল— ভিয়ান ওয়ারি, পির সানাই, পাবেভারি, পাডালা ক্রিক। এইগুলি স্যর ক্রিকের ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এ ছাড়াও আছে ‘করি ক্রিক’। এটি স্যর ক্রিকের ৩৪ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
১২২৩
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অবস্থিত এই স্যর ক্রিক অঞ্চলের জমি ভেজা হওয়ায় এই জমিতে টহল দেওয়া বেশ কঠিন। এখানে কোনও কাঁটাতারের বেড়াও নেই। এত সমস্যা সত্ত্বেও দুই দেশের দ্বন্দ্ব এই সীমান্ত নিয়ে। ভারত-পাকিস্তানের জলসীমার ব্যাখ্যা নিয়েই বিতর্কের শুরু। স্যর ক্রিকের সীমান্ত এখনও পর্যন্ত অনির্ধারিত।
১৩২৩
এই অংশ নিয়ে বিতর্ক স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই চলছে। ১৯০৮ সালে সিন্ধু প্রদেশের রাজা এবং কচ্ছের রাও মহারাজের মধ্যে প্রথম বার এই সীমান্ত নিয়ে কথোপকথন হয়। স্বাধীনতার পূর্বে এই পুরো এলাকা ব্রিটিশ রাজের বম্বে প্রেসিডেন্সির মধ্যে পড়ত। তখন বম্বে সরকার একটি সমীক্ষা করে তখনকার মতো এই বিতর্কে জল ঢেলে দেয়।পরবর্তী ৪০-৫০ বছর বিতর্কটি চাপা পড়েই ছিল।
১৪২৩
স্বাধীনতার পর সিন্ধ প্রদেশ পাকিস্তানের এবং গুজরাত ভারতের অংশ হয়ে যায়। ১৯৬২ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় এই বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দেয়। পাকিস্তানের দাবি ছিল, সীমান্ত নির্ধারণের ২৪তম সমান্তরাল রেখা অনুযায়ী কচ্ছের রণের অর্ধেক অংশ তাদের। ভারত তাদের এই দাবি নস্যাৎ করে।
১৫২৩
১৯৬৫-র যুদ্ধের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনের পরামর্শে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের শরণাপন্ন হয় দুই দেশ। ১৯৬৮-তে ট্রাইবুনাল তাদের রায়ে জানায়, রণের ৯০ শতাংশ ভারতের মধ্যে পড়ে এবং ১০ শতাংশ পাকিস্তানের।
১৬২৩
এর পর পাকিস্তান দাবি করে, স্যর ক্রিক সিন্ধ প্রদেশের মধ্যে অবস্থিত। এই দাবির ফলে ট্রাইবুনালের দ্বারা নির্ধারিত সীমা ক্রিকের আরও পশ্চিমে সরে যায়। ১৯১৪ সালে সিন্ধ প্রদেশ এবং রাও মহারাজের মধ্যে হওয়া চুক্তির ভিত্তিতে পাকিস্তান এই দাবি করতে থাকে।
১৭২৩
১৯২৫ সালে আন্তর্জাতিক সীমার থালউইগ প্রিন্সিপালের উপর ভিত্তি করে একটি মানচিত্র প্রকাশিত হয়। এই মানচিত্রের উপর ভিত্তি করে স্যর ক্রিকের মাঝামাঝি খুঁটিও বসানো হয়। পাকিস্তান এই মানচিত্রকে স্বীকৃতি দেয় না।
১৮২৩
সময় যত অতিক্রান্ত হয়েছে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে স্যর ক্রিকের। পরিবর্তিত গতিপথ অনুযায়ী যদি সীমা নির্ধারণ করা হয় তবে দুই দেশকেই নিজের অংশের বেশ কিছু জমি খোয়াতে হতে পারে।
১৯২৩
এই বিতর্ক মেটাতে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে মোট ১২ বার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কেউই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। ২০০৮ সালে দুই দেশ একসঙ্গে সমীক্ষা করতে রাজি হয়। কিন্তু ওই বছরই মুম্বইয়ের তাজ হেটেলে জঙ্গি হানার পর ওই প্রস্তাব ভেস্তে যায়।
২০২৩
এর পরও ভারত আন্তর্জাতিক জলসীমা নির্ধারণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। তারা প্রথমে স্যর ক্রিকের সীমা নির্ধারণ করতে চায়। পাকিস্তান এর জন্য কোনও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাতেও রাজি ছিল। কিন্তু ভারত তা নাকচ করে দেয়। কারণ ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে হওয়া কোনও সমস্যায় তৃতীয় কোনও পক্ষ নাক গলাতে পারবে না।
২১২৩
স্যর ক্রিক কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? কৌশলগত এবং সামরিক দিক থেকে এর এত গুরুত্ব না থাকলেও এই জলপ্রবাহ প্রচুর মাছের সম্ভার রয়েছে। এই অঞ্চলকে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মৎস্যভান্ডার বলে মনে করা হয়। দুই দেশের মৎস্যজীবীরা এখানে মাছ ধরতে এসে প্রায়শই সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেন। এর ফলে দুই দেশেই অনেকে জেলবন্দি হয়ে যান। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছেই।
২২২৩
এ ছাড়াও মনে করা হয় এই অঞ্চলের মাটির নীচে বিপুল পরিমাণে গ্যাস এবং হাইড্রোকার্বন রয়েছে। যে দেশই এর পুরো দখল নিতে পারবে তাদেরই জ্বালানির চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা থাকবে। এই ক্রিকে অবস্থিত বেশ কয়েকটি নালার মাধ্যমে চোরাচালানের কারবারও হয়।
২৩২৩
এই স্যর ক্রিকের একটি বড় অংশের নাম ‘হারামি নালা’। এই নালা দিয়েই মাঝেমধ্যে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটনা ঘটে। ২৬/১১-র মুম্বই হামলার আগে জঙ্গিরা এই পথেই ভারতে ঢুকেছিল। এই ক্রিক সীমান্তে পাহারার দায়িত্বে রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বিশেষ বিভাগ ‘ক্রিক ক্রোকোডাইল কমান্ডো’। ২০০৯ সালে এই শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। সিন্ধু নদের ব-দ্বীপ এবং ক্রিক অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় এরা বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।