Advertisement
১১ মে ২০২৪

কর্পোরেটের নামতা

যিনি প্রতি দিন সকাল দশটায় ঘুম থেকে ওঠেন, বারোটায় অফিসে যান, সন্ধে ছ’টা অব্দি আড্ডা মারেন, রাত বারোটা পর্যন্ত পি-আর করে বাড়ি ফেরেন, কাজ করেন পরের দিন, তিনিই কর্পোরেট। তিনিই কর্পোরেট যিনি জলের বদলে কোক পান করেন, গীতার বদলে ম্যানেজমেন্ট, সরকারি বুরোক্র্যাসিকে তুলোধোনা আর ম্যানেজ করার নামে সোজা কাজকে জটিল করেন।

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

যিনি প্রতি দিন সকাল দশটায় ঘুম থেকে ওঠেন, বারোটায় অফিসে যান, সন্ধে ছ’টা অব্দি আড্ডা মারেন, রাত বারোটা পর্যন্ত পি-আর করে বাড়ি ফেরেন, কাজ করেন পরের দিন, তিনিই কর্পোরেট। তিনিই কর্পোরেট যিনি জলের বদলে কোক পান করেন, গীতার বদলে ম্যানেজমেন্ট, সরকারি বুরোক্র্যাসিকে তুলোধোনা আর ম্যানেজ করার নামে সোজা কাজকে জটিল করেন। তিনি সারা দিন ফেসবুকে নাকানিচোবানি খান, সন্ধ্যায় ক্লায়েন্টের কাছে ঝাঁটাপেটা, রাতে বিয়ারে হাবুডুবু খান আর বৌয়ের কাছে দিবারাত্র মুখঝামটা। আপিসে গরমকালে টাই পরেন, ঘামতে-ঘামতে সুট, শোবার ঘরে জুতো পরেন, মল-এ হাফপ্যান্ট। গুলিয়ে গেলে ‘ইউ নো’ বলেন, আনন্দকে ওয়াও, হাগুখানাকে রেস্টরুম বলেন, দুঃখকে শিট্‌। কনফিডেন্স নিয়ে সুইট ইংলিশ বলেন, ক্রেডিট কার্ড নিয়ে মুদির দোকান যান, লোন নিয়ে গাড়ি কেনেন, রেলা নিয়ে ল্যাপটপ। তাঁরা মুখ খুললেই ম্যানেজমেন্টের বাণী বেরিয়ে আসে, স্মার্টফোন খুললেই শেয়ার-বাজারের গোপন খবর।

কর্পোরেটরা নানা ধরনের। তাঁরা ছোটবেলায় ম্যানেজার থাকেন, বড় হলে ডিরেক্টর, চুল পাকলে ভিপি হন, ল্যাজ গজালে সিইও। মিড-লেভেল ম্যানেজারে কোম্পানি ভুঁড়িওয়ালা হয়, ডিরেক্টরে মাথাভারী, ভিপিতে পুচ্ছধারী, সিইও-তে বৃহল্লাঙ্গুল। ম্যানেজাররা সর্ব ক্ষণ ভুঁড়ি কমানোর ভয়ে থাকেন, কোলেস্টেরলের ভয়ে তেলছাড়া তেলেভাজা খান, হার্ট অ্যাটাকের ভয়ে জলছাড়া সরবিট্রেট। আর ল্যাজবিশিষ্টরা স্লিম-ট্রিম-ফিট। তাঁদের হাতিশালে হাতি থাকে, হেলিপ্যাডে ঘোড়া, জেটিতে প্রাইভেট টাইটানিক। তাঁরা ডায়বেটিস সামলাতে মর্নিং ওয়াক করেন, ওবেসিটি সামলাতে জিম। কাজ সামলাতে সুন্দরী সেক্রেটারি রাখেন, আর স্ট্রেস সামলাতে ইয়োগা ইনস্ট্রাক্টর। নিজের প্যাশনে গল্‌ফ খেলেন, কোম্পানির পয়সায় শেয়ার নিয়ে লোপালুপি। লস হলে গাদা লোকের চাকরি খান, প্রফিট হলে স্কচ। বিজনেস ডিলের নামে পাঁচতারায় যান, বিজনেস টুরে প্রাইভেট জেটে হিল্লি-দিল্লি, স্ট্রেস সামলাতে ট্রেডমিলে যান, ক্রিসমাসে বাহামা ক্রুজ। তাঁরা সুখের দিনে বোনাস পান, মন্দার দিনে মোটা পেনশন। তেজির দিনে লালফিতের মুণ্ডপাত ও ফ্রি-মার্কেটের জয়ধ্বনি করেন, সরকারকে সাদা-হাতি, ভর্তুকিকে মধ্যযুগীয়, প্রতিযোগিতাকে এফিশিয়েন্ট এবং কর্মসংস্কৃতিকে ইন থিং বলেন, আর কোম্পানি লালবাতি জ্বাললে দেশ ও দশের কল্যাণার্থে সরকারের কাছেই হাত পাতেন। এই বহুমুখী কৌশলের সুবাদেই রিসেশন এঁদের মারতে পারে না, লে-অফ পোড়াতে পারে না, বিবর্তনকে কাঁচকলা দেখিয়ে এঁরা নানা কায়দায় টিকে থাকেন। শরীর টেকান ওয়ার্ক-আউটে, কোম্পানি লক-আউটে আর দেশ বাঁচান বেল-আউটে। তাঁরা পাঁকে পড়লে, সরকারও তাঁদের টাকা উপুড় করে দেয়। লাইসেন্স-রাজের পিন্ডি চটকে ও মুক্তবাজারের জয়পতাকা তুলে ধরে পাবলিকের পয়সায় কর্পোরেটরা তখন দেশোদ্ধার করে। এই অভূতপূর্ব কর্মসংস্কৃতির জন্যই তাঁরা পড়শির ঈর্ষা হলেও আমাদের গর্ব।

bsaikat@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

corporate job government money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE