গুজরাতে কচ্ছের রানে কাজ করছি। মে মাসের অসহ্য গরমে দুপুর একটা অবধি বাইরে কাজ। হাওয়ার সাথে গরম, জং-ধরা ছোট বালিপাথরের টুকরো উড়ে, গায়ে মুখে লেগে ফোস্কা পড়ে যেত। এ দিকে জলের জন্য হাহাকার। রাত তিনটেয় ট্রেনে করে জল আসে, সকালে গ্রামের ঘর-পিছু দু’বালতি জল রেশন। আমি একা মানুষ, আমার ভাগ্যে তাই এক বালতি, তাতেই চান-বাথরুম। কিন্তু কী করে যেন আমার ক্যাম্পখাটের নীচে আর এক বালতি জল চলে আসত। এ দিকে পঞ্চায়েত, স্টেশন মাস্টার আমাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করছে, যাতে আমার জলটা আর এক জন গ্রামবাসী পেতে পারে। আমিও ক্যাম্প বন্ধ করার অনুমতির অপেক্ষায় আছি। এক দিন ভোর চারটেয় হইচই, বাইরে এসে দেখি, ক্যাম্পের চৌকিদারের মেয়েকে এক বালতি জল সমেত ধরেছে কেউ। সকলে হাজির, বিচার চলছে। কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই বলছে না, কার জন্য সে জল চুরি করেছে। কয়েকটা বাচ্চার সঙ্গে ওই মেয়েটাকেও সন্ধেবেলা পড়াতাম। বুঝলাম, আমার ‘দুসরা’ জল কোত্থেকে আসত। মেয়েটা আমার সামনে ‘আমি চুরি করিনি’ বলে মাটিতে লুটিয়ে কাঁদতে লাগল। বললাম, তোর কোনও ভয় নেই, বাড়ি যা। ওদের বললাম, আমিই ওকে জল আনতে বলেছি। সকালেই তাঁবু গুটিয়ে ফেলা হল। জিপে মালপত্র চাপিয়ে বেরচ্ছি, পথের দু’ধারে তখন গ্রামের সব লোক জোড়হাতে দাঁড়িয়ে।
চন্দ্রদার বস-এর চেম্বার থেকে এক দিন কুকুরের আওয়াজ। বিদেশি কুকুর, ফাইল সই করাতে কেউ চেম্বারে ঢুকলেই প্রবল ঘেউঘেউ করে। সাহেব এ দিকে নিজে ক্যান্টিনে গিয়ে কুকুরের লাঞ্চের জন্যে দই-ভাত বানানো শিখিয়ে এসেছেন। ‘ভেজ কুকুর’ এক দিন এক স্টাফকে আঁচড়ে দিল। কর্মীদের মধ্যে প্রবল বিক্ষোভ। চন্দ্রদা সাহেবের ঘরে ঢুকে বললেন, ‘স্যর, আপনি রোজ কুকুর আনছেন, স্টাফেরা ভয় পাচ্ছে। সাহেব বললেন, ‘ভয়ের কী আছে? ও তো চেন দিয়ে বাঁধা। সে জন্যেই বোধহয় চেঁচায়। আসলে আমার স্ত্রী দেশে গেছেন, তাই ওকে নিয়ে আসছি। বাড়িতে একা থাকলে বেচারা মরেই যাবে।’
সোমবার অফিস শুরু হতেই বিকট হাম্বারব। দুটো বিশাল ষাঁড় অফিসের পেছনে একটা গাছের সঙ্গে বাঁধা, দুটোই অবিরাম চেঁচিয়ে যাচ্ছে। ষাঁড়ের আওয়াজে ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে কুকুরটাও। হুলুস্থুলু কাণ্ড। বিরক্ত সাহেব চন্দ্রদাকে ডেকে পাঠালেন। চন্দ্রদা বললেন, ‘ওরা আমার ষাঁড়, স্যর। কাল থেকে ওদের খাওয়া হয়নি, তাই বোধহয় চেঁচাচ্ছে। আসলে বাড়িতে তো আর কেউ নেই, তাই নিয়ে এসেছি। সবই তো বোঝেন।’ সাহেবের ফরসা মুখ লাল। চন্দ্রদা বাইরে বেরিয়ে হাসতে হাসতে সব খুলে বললেন। শনিবারই কলিন লেনে গিয়ে ষাঁড়দুটোকে বুক করে এসেছেন, বলে এসেছেন, আগের রাত থেকে ওদের যেন খেতে দেওয়া না হয়। তাই অমন হাঁকডাক। শুনে ক্যান্টিনে হাসির রোল উঠল। ষাঁড় দুটোর জন্য তাড়াতাড়ি এক্সট্রা দইভাত পাঠানো হল।
পর দিন অফিসে কুকুরও নেই, ষাঁড়ও নেই!
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিদেবপুর
amitavabandyo@gmail.com
যেখানেই কাজ করুন, ব্যাংক, রেস্তরাঁ, আইটি, অন্য কোথাও— আপনার অফিসের পরিবেশ পিএনপিসি
হুল্লোড় কোঁদল বস কলিগ ছাদ ক্যান্টিন— সব কিছু নিয়ে ৭০০ শব্দ লিখে পাঠান।
ঠিকানা: অফিসফিস, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১