Advertisement
১১ মে ২০২৪
Persian

রঙিন ডিম, জোড়া গোল্ডফিশ আর আগুনের উপাসনা

এমনই নানা উপকরণ আর প্রথায় তাদের নববর্ষের সূচনা বা ‘নওরোজ’কে স্বাগত জানায় পার্সিরা। উৎসবের কোনও কোনও আচার ঠিক সাহেবি হ্যালোয়িন বা বাংলার ন্যাড়াপোড়ার মতো।

নতুন পোশাক পরে উৎসবে মত্ত কলকাতার পার্সি শিশু-কিশোররা।

নতুন পোশাক পরে উৎসবে মত্ত কলকাতার পার্সি শিশু-কিশোররা।

সুমনা সাহা
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২১ ০৮:০১
Share: Save:

বেশ কয়েক বছর আগে আমার কর্তার এক ইরানি বন্ধুর ‘নওরোজ’-পার্টিতে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সেখানে আলাপ হল আব্বাস-এর সঙ্গে। জানতে চাইলাম, “এ ভরা বাদরে ‘নওরোজ’ কেন?” তিনি মিষ্টি হেসে বললেন, “ইরানিয়ান সৌর ক্যালেন্ডার অনুসারে ‘ফারবারদিন’, অর্থাৎ বছরের প্রথম দিনটি হল নওরোজ। পার্সিয়ান ক্যালেন্ডারের স্রষ্টা পারস্য-সম্রাট জামশেদ-ই-নওরোজ-এর নামানুসারেই এই বর্ষবরণ উৎসব ‘নওরোজ’। মার্চ মাসের ২০/২১ তারিখ সূর্য যখন নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে, দিন-রাত্রি সমান হয় (স্প্রিং ইকুইনক্স বা মহাবিষুব), এটি বিশ্ব জুড়ে ইরানিদের মধ্যে পালিত হয়। দিনটি পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বসন্তের সূচনা-দিবস। কিন্তু ভারতে ‘শাহেনশাহি’ ক্যালেন্ডার অনুসারে লিপ-ইয়ারগুলি গোনা হয় না। ফলে বিশ্বের অন্যত্র যে সময় নওরোজ পালিত হয়, ভারতে ও পাকিস্তানে তার প্রায় ১৫০ দিন পরে উদ্‌যাপিত হয়। জাহাঙ্গির ও আকবরের সময়ে দিল্লির দরবারে নাচ-গান-আতসবাজি সহযোগে ধুমধাম করে নওরোজ পালিত হত। ইরানি-তুরানিরা সম্রাটের জন্য ভেট নিয়ে আসতেন। খানাপিনাও চলত।”

আগ্রহী হয়ে পরে আব্বাসের কাছ থেকে জেনেছিলাম নওরোজ সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি। যেমন ওঁদের নওরোজ-এর ভোজ-টেবিল সাজানোর প্রথার নাম ‘হাফত-সিন’। সাড়ে তিন হাজার বছর আগে জরাথুস্ট্রপন্থীরা ছিলেন তেজ-এর উপাসক, তাঁদের আরাধ্য সূর্য ও অগ্নি। সূর্যের সাতরঙা রশ্মির রূপকল্পে এ দিন ভোজ-টেবিল সাজানো হয় এমন সাতটি জিনিস দিয়ে যাদের আরম্ভ ‘স/শ’ দিয়ে— শামা (মোমবাতি/দীপ), শেরবেত (মিষ্টি ফলের রস), শেরাব (ওয়াইন), শেহেদ (মধু), শীর (ঘন জ্বাল দেওয়া দুধ), শালগম, শিরিনি (সিমাই দিয়ে তৈরি মিঠাই)। ফারসি উচ্চারণে ‘স’ দিয়ে আরম্ভ এমন সাতটি পদ থাকে এ দিনের মেনুতে— সবজে (একটি থালায় অঙ্কুরিত গম, বার্লি, ছোলা, মুগ যা নবজীবনের প্রতীক), সামানু (গম থেকে তৈরি মিষ্টি পুডিং, সমৃদ্ধির প্রতীক), সেঞ্জেদ (শুকনো বেরির বীজ, প্রেমের প্রতীক), সির (রসুন, ওষধির প্রতীক), সিব (আপেল, সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের প্রতীক), সুমাক (উদীয়মান সূর্যের রঙের প্রতীক, বেরি-জাতীয় ফলের রস থেকে তৈরি লালচে-কমলা মশলা মাখানো কাবাব), সেরখে বা সিরকা (ভিনিগার, আয়ু ও ধৈর্যের প্রতীক)। সঙ্গে সাফল্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক রূপে কাচের ‘ফিশবোল’-এ রাখা হয় দু’টি গোল্ডফিশ। কিংবদন্তি, নতুন বছর আগমনের পূর্বমুহূর্তে, সূর্য যখন ঠিক বিষুবরেখার উপরে, মাছদু’টি উত্তরমেরুর দিকে মুখ করে স্থির হয়ে থাকে। এই বিশেষ ক্ষণকে বলা হয় ‘তাহ্বীল’, অনেকে এই পবিত্র মুহূর্তে হাতের মুঠোয় পয়সা রাখেন। অনেকে আবার টেবিলে একটি আয়না রাখেন, যাতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হতে পারে। রাখা হয় ধর্মগ্রন্থ কোরান, হাফেজ ও রুমির আধ্যাত্মিক কবিতার বই, একটি ঘড়ি (ইরানি ভাষায় ‘সাআত’) ও স্বর্ণমুদ্রা (সিক্কে)। এবং অতি অবশ্যই রং-করা ডিম। সবগুলোই নবীন প্রাণস্ফূর্তি ও সজীবতার ইতিবাচক রূপক। থাকে কিসমিস, সিলভার বেরি, হেজেল নাট, প্রুন, আখরোট ও আমন্ড সহযোগে প্রস্তুত শুকনো ফলের মিশ্রণ— ‘হাফত মেওয়া’। আর রাখা হয় ‘খোঞ্ছা’— একটা বড় রুপোর বা তামার থালার মাঝখানে রাখা হয় ‘সামানি’, অর্থাৎ অঙ্কুরিত গম এবং থালার চার পাশে পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুসারে ডিম, যেগুলোর খোলার উপরে সুন্দর রঙিন নকশা আঁকা থাকে।

আব্বাস বলে চলেন, “আমরা ডিম খেতে ভালবাসি। পার্সিদের মধ্যে চালু প্রবাদ, ‘হোয়েনেভার ইন প্রবলেম, ব্রেক অ্যান এগ।’ প্রায় সব রান্নাতেই আমরা ডিম ব্যবহার করি। পার্সি রেস্তরাঁয় ‘এক্সক্লুসিভ’ ডিশগুলোর নামের সঙ্গে ‘পে ইদা’ দেখলেই বুঝতে পারবেন। যেমন, সাল্লি পে ইদা (ডিম-আলুভাজা), ভিদা পে ইদা (ডিম-ঢেঁড়শ ভাজা), ভাজি পে ইদা (ডিমওয়ালা মেথিশাক) ইত্যাদি। পোরা (মশলা ওমলেট) থেকে শুরু করে আকুরি (স্ক্র্যাম্বলড এগ) এবং তাতেও বৈচিত্র! ‘ভারুচি আকুরি’ ঘি ও নানা মশলা দিয়ে প্রস্তুত এবং ‘বাফেলা ইদা নি আকুরি’ সেদ্ধ ডিম দিয়ে তৈরি জম্পেশ এক পদ!”

ইরানি পুজোর প্রধান উপকরণ ডিম। নবজীবনের প্রতীক ডিম তাঁদের কাছে শুভ ও পবিত্র। কোনও মানুষের উপর অশুভ আত্মার প্রভাব পড়লে তাঁরা একটা ডিমকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মাথার চার পাশে সাত বার ঘোরান, পার্সিদের বিশ্বাস, এতে নাকি সেই অশুভ শক্তি দূরে পালায়। ইতিহাসবিদরা বলেন, জরাথুস্ট্র সকল প্রাণীর রক্ষক ও আশ্রয়দাতা ছিলেন বলে তাঁর অনুসারীদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। ইরান, কাজাখস্তান, তুর্কিস্তান, রোমানিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে যথেষ্ট শাকসব্জির চাষও হত না। ফলে তাঁরা আমিষের প্রয়োজনে মাছ ও ডিমের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

টক-ঝাল-মিষ্টি সব রকম অভিজ্ঞতাতেই জীবনের ঝুলি পূর্ণ হয়, ‘খাট্টো-মিঠো’ পার্সি খানাপিনার নেপথ্য-দর্শন সেই বিশ্বাসেরই প্রতিফলন। কলকাতায় নিউ মার্কেটে দমকলের হেড কোয়ার্টারের কাছেই রয়েছে প্রাচীন পার্সি রেস্তরাঁ ‘মানছেড়জি’। যদিও বর্তমানে বাজারের চাহিদা মেটাতে এঁরা বাঙালি খাবার তৈরি করছেন, কিন্তু অর্ডার দিলে খাঁটি পার্সি পদ সরবরাহ করেন। এখানে চিকেন-বেরি পুলাও বিখ্যাত। এখনকার ইন্টারফেথ আলোচনাচক্রে বলা হয়, সকল বৈচিত্রের মধ্যে নিহিত ঐক্যের মূল সুরটি হৃদয়ঙ্গম করে আনন্দোৎসব করো, ‘টলারেট, অ্যাকসেপ্ট অ্যান্ড সেলিব্রেট ভ্যারাইটি’। অভিনেতা বোমান ইরানি, কবি-সুরকার জাভেদ আখতার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব স্মৃতি ইরানি প্রমুখদের নববর্ষ-বরণে শামিল হয়ে এ বছর নতুন স্বাদ চেখে দেখতে ঢুঁ মারা যেতেই পারে পার্সি রেস্তরাঁয়।

‘ইরানি-সান্তাক্লজ’ আমু নওরোজ ও হাজি ফিরুজ— ইরানে এঁরা যেন নববর্ষের চারণকবি, যাঁরা এ দিন পথে পথে গান গেয়ে বেড়ান আর ছোটদের উপহারও বিলি করেন। আমু নওরোজ তাঁর প্রিয়তমা পত্নী নানে সারমার সঙ্গে এই একটি দিনই সাক্ষাৎ করতে পারেন। আমু এক সাদা চুল ও লম্বা দাড়িওলা বুড়ো লোক, তার হাতে ওয়াকিং স্টিক, মাথায় পশুর লোমের টুপি, তিনি আকাশ-নীল রঙের লম্বা একটি কোট পরে আসেন। হাজি ফিরুজ-এর হাত-মুখ সব অঙ্কুরিত গমে ঢাকা, তারও মাথায় পশুলোমের টুপি আর পরনে একটি উজ্জ্বল লাল পোশাক। তিনি আমুর বন্ধু, নিজেকে আল্লার দাস পরিচয় দিয়ে তাঁর উদ্দেশ্যেই তাম্বুরিন বাজিয়ে নাচগান করে মানুষকে আনন্দ দেন।

ইরানে নওরোজ-এর পর ১৩ দিনে ‘সিজদা বেদার’ পালিত হয়। দলে দলে মানুষ সে দিন কাছাকাছি পার্কে প্রকৃতির কোলে বনভোজনে যান। নওরোজ উপলক্ষে যে গমের দানাগুলোকে অঙ্কুরিত করা হয়েছিল, এ দিন সেগুলো জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ভাসানোর আগে কুমারী মেয়েরা অঙ্কুরিত গমের প্রায় শুকিয়ে যাওয়া দু’টি শিস একত্রে বেঁধে দিয়ে মানত করেন, এ বছর যেন তাদের মনের মতো বর জুটে যায়, পরের বছর যেন এই সময়ে সন্তান কোলে নিয়ে পার্কে হাজির হতে পারেন— প্রাচীন এই প্রথাপালনের দৃশ্য আজও বিরল নয়। নওরোজে দরিদ্র, অসুস্থ মানুষকে খাবারদাবার, প্রয়োজনীয় জিনিস ও উপহার দান করা হয়। সবাই ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন, ঘর রং করান, বাগানের আগাছা, পার্কের জঞ্জাল পরিষ্কার করেন। ‘হ্যালোয়িন’-এর মতো নওরোজেও ছোট ছেলেমেয়েরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে দরজায় টোকা দেয় এবং মাথার টুপি খুলে চৌকাঠে রেখে আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখে টুপিতে চকোলেট আর ক্যান্ডি জমা হল কি না।

আব্বাস স্মৃতিকাতর কণ্ঠে বলে চলেন, “নওরোজ মানে নতুন দিন। পুরনো বছরের সমস্ত অন্যায়ের গ্লানি ধুয়ে মুছে আমরা নতুন হয়ে উঠব। সকালেই তাই অগ্নিদেবতার পুজো দিতে যাওয়া হয়। যাদের মধ্যে ঝগড়া ও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, কথা বন্ধ, সে সব পুরনো বন্ধুত্ব পুনরুজ্জীবিত করে তোলার এই হল সময়। নওরোজের আগের বুধবার সন্ধ্যায় দাদাজি ছাদে আগুন জ্বালতেন। পথের ধারে আগুন জ্বেলে ‘বনফায়ার’ করে অল্পবয়সি ছেলেছোকরারা তার উপর দিয়ে লাফিয়ে ডিঙিয়ে যায়, বাজি পোড়ায়, এর নাম ‘চাহার সানবে সুরি’। দোলের আগের দিন যেমন নেড়াপোড়া, তেমনই। সে সময় আমরা পরলোকগত পূর্বপুরুষ ও আত্মীয়স্বজনের প্রতীক হিসেবে মাটি বা আটা দিয়ে ছোট ছোট মূর্তি গড়ে ছাদের উপর রাখি, তাঁদের আমাদের মাঝে স্বাগত জানাই ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। শৈশবে নওরোজের আগে বাড়ির বাইরে গামলা পেতে রাখতাম। ওই দিন সাধারণত বৃষ্টি হয়। বর্ষসূচনার এই বর্ষাজল শুভফলদায়ী মনে করে বছরভর সংরক্ষণ করা হত নানা অসুখের ওষুধ হিসেবে।”

খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ইসলামি আগ্রাসনের সময় জরাথুস্ট্রপন্থীরা ধর্মাচরণের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে নিজের দেশ (পারস্য, বর্তমান ইরান) ছেড়ে শরণার্থী হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। ভারতে ইরানি শরণার্থীদের পার্সি বলা হয়। আধুনিকমনস্ক ও আমোদপ্রিয় পার্সি সম্প্রদায়ের হাত ধরেই একদা কলকাতা ও মুম্বই শহর বাণিজ্যে অগ্রগতির শিখর স্পর্শ করেছিল। ভারতীয় শিল্পের জনক, জামশেদজি টাটা ও তাঁর পুত্র রতন টাটা, রুস্তমজি বানাজি (খিদিরপুর ও সালকিয়া পোতাশ্রয়ের মালিক) প্রমুখের অবদান অবিস্মরণীয়। কলকাতায় পার্সি জনবসতি গড়ে ওঠে দাদাভাই বেহেরামজি বানাজির (১৭৬৭) হাত ধরে। ১৮২২ সালে নওরোজি সরাভাই তৈরি করেন পার্সিদের শবাগার— কলকাতার বুকে প্রথম ‘দাখমা’, ‘টাওয়ার অব সাইলেন্স’। ১৮৩৯ সালে এজরা স্ট্রিটে নির্মিত হয় পার্সি উপাসনালয়— অগ্নি-মন্দির, ‘আগিয়ারা’। বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত মন্দিরটির সংস্কার চলছে। কস্তুরী-সুবাসের মতোই অনন্য পার্সি-সংস্কৃতি ও সম্প্রদায় এখন বিলুপ্তির পথে। ভারত-সরকার প্রবর্তিত ‘জিও পার্সি’ স্কিমের মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নওরোজ-এ আগুনের সামনে বসে ইরানিরা গান গেয়ে প্রার্থনা করেন— ‘সোরখি তো আয মান, যারদি মান আয’, ইংরাজি তর্জমায়, ‘মাই ইয়েলো ইজ় ইয়োর্স, ইয়োর রেড ইজ় মাইন!’ নিজের দোষত্রুটি-দুর্বলতা, অসুস্থতা, সমস্যা অগ্নিতে আহুতি দিয়ে বিনিময়ে অগ্নির কাছে সজীবতা, স্বাস্থ্য ও উদ্দীপনায় পূর্ণ করে দেওয়ার প্রার্থনা। ভিন্ন হতে পারে মানুষের দেশ-জাতি-ধর্ম, কিন্তু অন্তরের চাওয়া-পাওয়া সর্বদাই অভিন্ন! তাই এই নওরোজে ‘দিবে আর নিবে, মেলাবে মিলিবে’-র সুরে সুর মিলিয়ে বলি, ‘নো-রুজ-মোবারক’— অগ্নিদেবতা মহামারি এবং খারাপ সময় অতিক্রম করে মানুষকে শুচিশুদ্ধ করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Persian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE