Advertisement
১৬ মে ২০২৪

ওঁরা চার জন

ছোট ব্যবসাদার। খুবই গরিব। কিন্তু অন্য মানুষকে সাহায্য করতে সব সময় উৎসুক। কলকাতার মধ্যে আর একটা কলকাতা।রেড রোডে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। প্রথম বার ফোনে বললেন, তিনি আসছেন। বেলা গড়াচ্ছে। রোদ চড়া হচ্ছে। এর পর আরও দু’বার ফোন। বেজে গেল। ও-প্রান্ত থেকে কোনও সাড়া নেই। তার মানে কি আসবেন না? একটু বাদে তিনি হাজির। মুক্তার আহমেদ। যাঁরা তাঁকে চেনেন, ডাকেন অালম ভাই বলে। পরিচয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুটো মোবাইল নম্বর দিলেন। বললেন, আগে নম্বরগুলো রাখুন।

রূপক চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

রেড রোডে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। প্রথম বার ফোনে বললেন, তিনি আসছেন। বেলা গড়াচ্ছে। রোদ চড়া হচ্ছে। এর পর আরও দু’বার ফোন। বেজে গেল। ও-প্রান্ত থেকে কোনও সাড়া নেই। তার মানে কি আসবেন না? একটু বাদে তিনি হাজির। মুক্তার আহমেদ। যাঁরা তাঁকে চেনেন, ডাকেন অালম ভাই বলে। পরিচয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুটো মোবাইল নম্বর দিলেন। বললেন, আগে নম্বরগুলো রাখুন। আমার এলাকায় কখনও গাড়ি নিয়ে বিপদে পড়লে তক্ষুনি খবর েদবেন, পৌঁছে যাব। ৫৮ বছর বয়সি মানুষটি থাকেন এ কে মহম্মদ সিদ্দিকি লেনে। একটা মাত্র ঘর। ভাড়া ৫০ টাকা। লাইট-ফ্যানের জন্য আলাদা পয়সা দিতে হয়। বাথরুম সকলের সঙ্গে।

১৯৭১ সালে বিহারের ডুমরামা জেলা থেকে এসে পৌঁছেছিলেন কলকাতা শহরে। বাবার ছিল জামাকাপড়ের ব্যবসা। ধর্মতলা চত্বরে, রাজাবাজারে ঘুরে ঘুরে জামাকাপড় বিক্রি করতেন। আলম ভাই ছোটবেলায় গ্রামেই শুনেছিলেন, কলকাতায় গেলে কেউ খালি হাতে ফেরে না। কেউ না-খেতে পেয়ে মরে না। ফলে সেই ছোট বয়সেই— ছোট বলতে বয়স সাত কি আট হবে— উপস্থিত হয়েছিলেন কলকাতায়। ঠিক এখন যেখানে আছেন, সেই বাড়িতে উঠেছিলেন বাবার সঙ্গে।

এখনও তাঁর মনে পড়ে, ’৭০-এর বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় হাতে কালো রঙের বালতি নিয়ে আর মোটা তুলি নিয়ে গাড়ির পিছনে চকচকে বাম্পার বা ফুটপাতের ল্যাম্পপোস্ট কালো রং করে দিতেন, যাতে বোমারু বিমান সেগুলো চিনতে না পারে। সেই ছোট বয়স থেকেই গাড়ির প্রতি ছিল অদম্য ভালবাসা। আর সেটাকেই পেশা করে নিলেন। সকালে জলখাবার থেকে শুরু করে রাতের খাবার, দিনে তিন থেকে চার বার তাঁকে বাইরে খেতে হয়। তাতেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তিনি শুধু রাস্তাঘাটে গাড়ি খারাপ হলে খবর পেলেই পৌঁছে যান সেখানে। সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনও সময় হতে পারে। যদিও একটা নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে। ধর্মতলার মোড় থেকে শুরু করে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব। কারণ, তিনি দেখেছেন, এই সব এলাকায় গাড়ি খারাপ হলে চট করে মেকানিক পাওয়া খুব কঠিন।

দু’চাকা, চার চাকা— যে কোনও গাড়িই তিনি সারাতে পারেন। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছনোর জন্য তাঁর আছে একটা সাইকেল। সাইকেলের পিছনে কেরিয়ারে একটা পাঁচ লিটারের জ্যারিকেন। তাতে খদ্দেরের চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোল কিংবা ডিজেল নিয়ে চলে আসেন। তাঁর কোনও নির্দিষ্ট আর্থিক চাহিদা নেই। অর্থাৎ, গাড়ি সারাই করে দিলে এতটা টাকা দিতেই হবে, এমন কোনও দাবি নেই। যে যা ভালবেসে দেন, সেটুকুই রোজগার। এমন ব্যবস্থা করেছেন কেন? বললেন, আমি মনে করি, আমি জন্মেছি বিপদে পড়া মানুষকে সাহায্য করতে। সেটাই মাথায় নিয়ে চলি।

আলম ভাইয়ের স্ত্রী চাকরি করেন জামশেদপুরের একটা স্কুলে। ইংরেজি পড়ান। এক মেয়ে, দুই ছেলে। মেয়েকে বি এসসি পাশ করিয়েছেন। ছোট ছেলে আইএসসি পড়ছে। বড় ছেলের সদ্য বিয়ে দিয়েছেন। মাসে এক বার করে জামশেদপুর যাওয়া বাঁধা। শুধু মাঝেমধ্যে ভাবেন, আল্লাহ্ যদি করুণা করেন, তবে এক বারের জন্য অন্তত মক্কা ঘুরে আসতে পারবেন। তাঁর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা দুটি মোবাইলে ক্রমাগত খদ্দেরদের ফোন আসতেই থাকে। কেউ হয়তো চিড়িয়াখানার সামনে আটকে পড়েছেন, কেউ রেসকোর্সের সামনে। বললেন, এখানে আসার আগে রেড রোডের ওপর মিলিটারির ট্রাক সারাচ্ছিলাম। ওরা ভালবেসে ১০০ টাকা দিয়ে দিল। কথা বলতে বলতেই মোবাইলে ফোন এল। ওঁর কানে গোঁজা হেডফোন। ও-পার থেকে কী খবর এল কে জানে! বললেন, যাচ্ছি, যাচ্ছি। বলতে বলতেই উঠে পড়লেন। লোকটা জীবনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর এলাকার মধ্যে যদি কেউ বিপদে পড়েন, তবে তিনি দৌড়ে যাবেন তাঁদের বাঁচাতে। অর্থাৎ, গাড়ি ঠিক করে দিতে। তাঁকে কী ভাবে আটকাই!

দ্বিতীয় জন

তিনি যখন কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন, সেটা ১৯৮০ সাল। পড়শি বিহার থেকে এসে নেমেছিলেন হাওড়া স্টেশনে। বদিউজ্জামান খান। তখনও তিনি জানেন না কীসের ব্যবসা করবেন। শুধু এইটুকু জানেন, কলকাতা একটা বিরাট শহর। এই শহরে এসে যে এক বার পা রাখতে পেরেছে, তার কিছু না কিছু জুটে গিয়েছে। সঙ্গে পুঁজি অতি কম। যাকে বলে প্রায় কিছুই না। থাকার জায়গা জুটে গেল খিদিরপুরে। ৩০০ টাকা চট। মানে হচ্ছে, একটা ঘরে একটাই লাইট, একটাই পাখা। জনা বাইশ লোক এক সঙ্গে শোওয়া। একটা-দুটো জলের কল, একটাই বাথরুম। ভোর থেকে উঠে লাইন দিয়ে উঠে পরিষ্কার হওয়া। তার পর স্নান করে বেরিয়ে পড়া। সে রকমই বেরিয়ে পড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বড়বাজার। সেখানে নিজের পুঁজি থেকে টাকা লাগিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন, আতর আর সুরমা-র। ধর্মতলার মোড়ে, মসজিদের পাশের গলিতে একটা টুল নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিলেন। টুলের ওপর রাখা থাকে কালো রঙের চামড়ার আতরের বাক্সটা। ছোট ছোট শিশি। সবাই যে তুলোয় আতর মেখে কানে গুঁজে নেবেন এমন নয়, কেউ কেউ শিশি করে বাড়িতেও নিয়ে যান। সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি চার বেলাই খেতে হয় বাইরের কোনও না কোনও হোটেলে। তার পরে চট ভাড়া, তার পরে বাড়ি পাঠানো। ফলে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার না করলেই নয়। তিনি শুধু ধর্মতলায় বসেন না, আতরের বাক্স নিয়ে ঘুরে বেড়ান গোটা কলকাতা। সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনে বহু বার যান ক্রেতাদের আতর পৌঁছে দিতে। তা ছাড়াও যোগাযোগ ভবন, পিডব্লিউডি অফিস, লালবাজার অঞ্চল।

বাড়ি বিহারের মধুবনি জেলার মোমিনপুরে। ৫৫ বছর বয়সের বদিউজ্জামান খানের দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ছেলে ইন্টার করছে, ছোট ছেলে এখনও পড়াশোনা করে। মাত্র ১০ বছর বয়স। দেশে যাওয়া হয় বছরে দু-তিন বার। ফিরদৌস, গুলাব, জসমিন, রাত কি রানি ইত্যাদি নামের নবাবি আতর তিনি এখনও বিক্রি করেন। আর গরম কালের জন্য রাখেন খস। খস মাখলে গরমের অনুভূতিটা চলে যায়। অনেকে আবার স্নানের জলের মধ্যে খস মিশিয়ে স্নানও করেন। যে লোকটা গোটা কলকাতা জুড়ে সুগন্ধ বিক্রি করে বেড়ান, দিন শেষে তাঁকেই ফিরে যেতে হয় দুর্গন্ধময় একটা নিচু বাড়িতে। এখন খানিকটা পয়সা হলেও এ ব্যবসা আর ছাড়তে চান না। বলেন, এত মানুষকে ভাল গন্ধ দিয়ে মন ভাল করে দিই, এই ব্যবসাই থাক। বেশি লোভ করে কী করব?

তৃতীয় জন

সুখিচাচার গল্প শুনেছিলাম আগেই। তিনি প্রায় গেছোদাদার মতন। কখন, কোথায় তাঁকে পাওয়া যাবে, তা স্বয়ং ঈশ্বর এবং সুখিচাচাই জানেন। শুনেছিলাম, ভবানীপুরের গাঁজা পার্কের দিশি মদের আড্ডায় অথবা গরচা-র দিশি মদের আড্ডায় তাঁর দেখা মেলে। দেখা হয়ে গেল গাঁজা পার্কেই। ছ’ফুটের কাছাকাছি লম্বা। হাতা-গোটানো সাদা শার্ট প্রায় হাঁটু অবধি। আলিগড়ি পাজামা, ঘোর রঙের নাগরাই। সত্তরের কাছাকাছি বয়স। ডান হাতে স্টিলের মোটা বালা। আকাশি নীলের পাগড়ি। বয়স কত? শুনে অনেক ভেবেচিন্তে জানালেন, সত্তর হবে মনে হয়। এখনও ট্যাক্সি চালাতে রাতেও চশমা লাগে না। সুখিচাচাকে কথা বলানো আর সুইস ব্যাংককে মুখ খোলানো— একই জিনিস। আমাকে সুখিচাচার খবর দিয়েছিলেন রঞ্জিতবাবু। তিনি ওই দিশি পানশালার দীর্ঘ দিনের কর্মচারী। বলেছিলেন,‘সুখিচাচার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন, হেবি ক্যারেক্টার।’

একটা পাঁইট বাংলা খাওয়ার পর সুখিচাচার কাছ থেকে যা জানা গেল— নাম, সুখবিন্দার সিং। সেই কোন পঞ্চাশের দশকের প্রথমে না মাঝামাঝি কলকাতায় এসেছেন। হ্যাঁ, ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে, হ্যাঁ হ্যাঁ এখানেই পান করেছেন। এক বার খুব ভোরে উত্তমকুমারকেও সওয়ার করেছেন। সুখিচাচার দুই ছেলে। এক জন এখন কাজ করে বাবারই ব্যবসায়, অন্য জন নেই। নেই মানে নেই। মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি। অনেক কষ্টে বললেন, টাকা-পয়সা যা আছে তা আমার চলে যাবে। কিন্তু এখনও আমি ঘুরে ঘুরে বেড়াই, যেখানে যেখানে আমার ছেলে যেত। ওর বয়সি কেউ আউট হয়ে গেলে আমি আমার ট্যাক্সিতে করে তাকে পৌঁছে দিই, তার বাড়ির ঠিকানা জেনে সেইখানে। আমি তো আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারিনি। আমার ছেলের বয়সি যদি কোনও কাউকে এখন বাঁচাতে পারি। এর পর আর কোনও কথাই বলতে চান না। বার বার উঠে গিয়ে দেখছেন কার কী হল? কে কোথায় যাবে?

চতুর্থ জন

মহম্মদ আকবরের জীবনে একটাই লক্ষ্য, তিন মেয়েকে কমপক্ষে ক্লাস টেন অবধি পড়ানো। তার পর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। প্রশ্ন করলাম, তিনটিই মেয়ে হওয়ার জন্য কোনও দুঃখ আছে? উত্তরে বললেন, ‘ওরা আমার কলিজা আছে। জান কা টুকরা।’

পার্ক সার্কাস ময়দানের মুখে গেটের গায়েই তাঁর ঠান্ডা জলের দোকান। পাঁচ টাকা করে এক গ্লাস লেবুর জল বিক্রি করেন। গোটা গরমকালটা তাঁর ১৫০ টাকা লাগে জল কিনতে। কমপক্ষে আট ভার জল তাঁর খদ্দেরের জন্য খরচ হয়, তার পর লাগে ৩০০ টাকার পাতিলেবু। তার পর লাগে দিনে তিন বোতল স্যাকারিনের জল। পরিষ্কার ঝকঝকে কাচের গ্লাসে স্যাকারিনের জল বের করে, ওই গ্লাসের ওপর আর একটি ফাঁকা গ্লাস বসিয়ে বেশ কয়েক বার ঝাঁকিয়ে, পিপাসার্তকে জল দিয়ে দেওয়া। এই ব্যবসাই তাঁর চলে শীতকাল আসার আগে পর্যন্ত। সবচেয়ে ভাল বিক্রি দুর্গাপুজোর সময়, আর যখন ময়দানে সার্কাসের তাঁবু পড়ে।

এখন দিনে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মতো রোজগার। রবিবার দিনটায় আশপাশের বহু এলাকা থেকে লোকে ময়দানে হাওয়া খেতে আসে বলে বিক্রিটা আরও ভাল হয়। প্রায় ১৩০০-১৪০০ টাকার কাছাকাছি। ওই দিনটায় দোকান চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। আকবর গরমের সময়টা সকাল ন’টা থেকেই দোকান খুলে ফেলেন।

আকবরের শ্বশুরমশাই তাঁর দোকানটা তাঁকে চালাতে দেন। দোকান থেকে বাড়ির দূরত্ব ঢিল ছো়ড়া। কসাইবাজারে। আকবরের হাই প্রেশার আছে বলে মাঝে মাঝেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। আকবরের সঙ্গে কথা বলতে বলতে উপস্থিত তাঁর বন্ধু মহম্মদ তাজউদ্দিন। তিনি মুসাম্বির ব্যবসা করেন। দিনে অন্তত এক বার আকবরের দোকানে জল খাওয়া চাই-ই। অনেক দিনের বন্ধু।

তিনি বললেন, আকবর মানুষ খুব ভাল। কখনও কোনও দিন খারাপ জিনিস বিক্রি করেন না। আকবর বললেন, গরমের দিনে কত লোককে একেবারে বিনে পয়সায় জল খাইয়ে দিই। পয়সা পেলাম কি পেলাম না, ও সব কোনও হিসেব রাখি না। আল্লাহ্ যে ভাবে আমাকে রেখেছেন, সে ভাবেই আমি খুশি। শুনে আমি কতকটা দুষ্টুমি করেই বললাম, শুনেছি অনেক সময় অল্পবয়সি ছেলেপুলেরা এক গ্লাস ঠান্ডা জল নিয়ে, তার মধ্যে একটু দারু মিশিয়ে নেয়? শিউরে উঠে বললেন, তওবা তওবা। আমি নিজে এক জন সাদা লোক। সাদা নেশা করি। মানে পান খাই। আমার দোকানে ও-সব কিচ্ছু চলে না। তাতে আমার ব্যবসা না হলেও চলবে। আর কেউ যদি জল খেয়ে পয়সা না দিতে পারে, তা হলেও আমার চলবে। জীবন কাটিয়ে দেব। কিন্তু ঢকঢক করে আশ মিটিয়ে জল খাচ্ছে— এমন মানুষকে দেখতে, তাদের আরও জল খাওয়াতে আমার বড্ড ভাল লাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE