Advertisement
২১ মে ২০২৪

এক ঝাঁক রোবট

দেখতে ঠিক খেলনা গাড়ি। কিন্তু ওরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে। নিজের তৈরি রোবট নিয়ে ঘুরে গেলেন জেমস ম্যাকলারকিন। লিখছেন কুন্তক চট্টোপাধ্যায়রোবট বলতেই চোখে ভেসে ওঠে, একটা যন্ত্র-মানবের কথা। কখনও তার বাইরেটাও যন্ত্রের মতো, কখনও বা বাইরেটা আম-আদমির হলেও অন্তরে পুরোটাই ‘মেকানিকাল’! চটজলদি উদাহরণ বলতে, ‘টার্মিনেটর টু’-র শোয়ার্জেনেগর কিংবা হালফিলের ‘রা-ওয়ান’-এর শাহরুখ।

ছবি: সুমন বল্লভ।

ছবি: সুমন বল্লভ।

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

রোবট বলতেই চোখে ভেসে ওঠে, একটা যন্ত্র-মানবের কথা। কখনও তার বাইরেটাও যন্ত্রের মতো, কখনও বা বাইরেটা আম-আদমির হলেও অন্তরে পুরোটাই ‘মেকানিকাল’! চটজলদি উদাহরণ বলতে, ‘টার্মিনেটর টু’-র শোয়ার্জেনেগর কিংবা হালফিলের ‘রা-ওয়ান’-এর শাহরুখ।

কিন্তু রোবট ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। বরং, সহজ কথায় বলতে গেলে, রোবট একটি যন্ত্র, তার মাথায় ঠাসা থাকে কম্পিউটার প্রোগ্রাম। সেই প্রোগ্রামের নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে মেনে কাজ করে। মানুষের কাজ আরও সহজ করে দেয়। নিখুঁতও করে। সেই রোবট হতে পারে খেলনা গাড়ি, এমনকী পোকামাকড়ের মতোও!

এমন ধারার রোবট নিয়েই সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে গেলেন মার্কিন রোবট-বিশেষজ্ঞ জেমস ম্যাকলারকিন (পাশের ছবিতে)। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর বিখ্যাত সোয়ার্ম রোবট। এই রোবট দেখতে অনেকটা ছোট-ছোট গাড়ির মতো। আর বৈশিষ্ট্য? এই রোবটগুলি একে অন্যের ‘কথা’ দিব্যি বুঝতে পারে! কী ভাবে?

জেমস বলছেন, উইপোকা কিংবা মৌমাছিরা যে ভাবে নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে, সে ভাবেই। তবে কায়দাটা একটু আলাদা। জেমসের রোবটেরা বুঝতে পারে, কোন সঙ্গী কতটা দূরে রয়েছে। সেই মতো নির্দেশও পাঠায় সে। জেমস বললেন, “জিপিএস দিয়ে এটা করা যেতেই পারত।কিন্তু সেটা অনেক খরচসাপেক্ষ। কাজেও জটিলতা আসত।” তা হলে করলেন কী ভাবে?

জেমস রোবটের মাথায় পুরে দিলেন সাধারণ জ্যামিতির জ্ঞান। সেই জ্ঞান ব্যবহার করেই একটি রোবট বুঝে যায় তার থেকে ৬০ ডিগ্রি কোণে কে রয়েছে, ১৮০ ডিগ্রি কোণে-ই বা কার সাড়া মিলবে! তার পরেই নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় শুরু। বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি সংস্থা এই রোবটের ব্যবহারও শুরু করেছে। এই প্রযুক্তি বড় এলাকায় কাজ করার উপযোগী। এবং এই প্রযুক্তিতে রোবটের মধ্যে শ্রম-বিভাজনও সম্ভব।

কলকাতায় এসে এই রোবট নিয়ে স্কুলকলেজের পড়ুয়াদের সঙ্গেও আলাপ জুড়েছিলেন জেমস। বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে সেই খুদেদের চোখা-চোখা প্রশ্নবাণকে রীতিমতো উপভোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, “কলকাতার পড়ুয়াদের জ্ঞানের বহর আর আগ্রহ দেখে ভালই লাগল।”

আসলে জেমসও স্কুলে পড়ার সময় থেকেই রোবটিক্সে আগ্রহ পেয়েছিলেন। তার উত্‌স ছিল খেলনা গাড়ি কিংবা ভিডিও গেম বানানোর নেশা। সেই নেশাই যে পরে পেশা হয়ে দাঁড়াবে, সেটা অবশ্য তখন বোঝেননি। তবে বুঝেছিলেন, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে। সেই পেশার সূত্রেই যুক্ত ছিলেন

ডিজনির সঙ্গেও।

কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে রোবটিক্স নিয়ে নানা কথা বলার ফাঁকে উঠে এল ভবিষ্যতের রোবট প্রযুক্তি এবং রোবট-বানিয়েদের কথাও। জেমস বললেন, রোবট প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই মানুষের নিত্যকাজে লাগছে। লাগছে চিকিত্‌সার ক্ষেত্রেও। এখন অনেক নিউরোসার্জারি এবং রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন-এ রোবট প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে। যত দিন যাবে, এর ব্যবহার আরও বাড়বে। শুধু তাই নয়, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হবে রোবট। ন্যানোটেকনোলজির মতো বিষয়ও রোবটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে। আর রোবট-বানিয়েরা?

ভবিষ্যতের পড়ুয়াদের জেমস বললেন, রোবট তৈরি করতে গেলে ছোট থেকেই ভালবাসাটা তৈরি করতে হবে। ইন্টারনেটে রোবট-খেলনা তৈরির করার নানা উপকরণ তো মজুতই রয়েছে। আর বড় হলে?

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটা তো অবশ্যই দরকার। জেমসের কথায়, “মেকানিকাল, ইলেকট্রিকাল অথবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে রোবটিক্সে কাজ করাটা সহজ।” তবে ইদানীং রোবটিক্সে সোশিয়োলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মতো বিষয়ও জুড়ছে। তাই, নেহাত ইঞ্জিনিয়ার নয়, রোবট তৈরিতে শামিল হতে পারেন সাধারণ বিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞানের পড়ুয়ারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE