Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কেচ্ছা

বারাক হুসেন ওবামাও নাকি চুরি করেছেন! এক বার নয়, একাধিক বার! চুরি করেছেন, ধরাও পড়েছেন এবং লোকে আঙুল তুলেছে... কিন্তু তার ঠিক পর পরই সে সব পাশ কাটিয়ে মুচকি হেসে বেমালুম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার পর, আবার চুরি করেছেন! কী চুরি করেছিলেন ওবামা? না, ডলার বা সোনাদানা নয়। চুরি করেছিলেন স্রেফ কথা। বক্তৃতায় নাকি দিনের পর দিন অন্যের কথা ঝেড়ে স্মার্টলি নিজের নামে চালিয়ে গিয়েছেন ওবামা। হয়তো ভেবেছিলেন, পাবলিক বোকা। ধরতে পারবেই না। তা হয়নি।

সুস্নাত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

বারাক হুসেন ওবামাও নাকি চুরি করেছেন! এক বার নয়, একাধিক বার! চুরি করেছেন, ধরাও পড়েছেন এবং লোকে আঙুল তুলেছে... কিন্তু তার ঠিক পর পরই সে সব পাশ কাটিয়ে মুচকি হেসে বেমালুম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার পর, আবার চুরি করেছেন!

কী চুরি করেছিলেন ওবামা? না, ডলার বা সোনাদানা নয়। চুরি করেছিলেন স্রেফ কথা। বক্তৃতায় নাকি দিনের পর দিন অন্যের কথা ঝেড়ে স্মার্টলি নিজের নামে চালিয়ে গিয়েছেন ওবামা। হয়তো ভেবেছিলেন, পাবলিক বোকা। ধরতে পারবেই না। তা হয়নি। সে সব বক্তৃতার ঘণ্টাকয়েকের মধ্যেই ইউটিউবে পোস্ট হয়ে গিয়েছে একের পর এক ক্লিপ। কাট টু কাট ওবামার কথন আর অতীত খুঁড়ে তুলে আনা অরিজিনাল ভার্সন। কেউ বা টু-উইন্ডোয় ফুটেজ গুঁজে একেবারে আন্ডারলাইন করে দিয়েছেন।

একটা-দুটো নয়, ওবামার এমন চেষ্টার দৃষ্টান্ত ঢের। ঘোটালা সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলছে পুরোদমে। চমত্‌কার বাক্য আউড়ে দেদার হাততালিও কুড়োচ্ছেন ওবামা। হঠাত্‌ই তাঁর একটি বক্তৃতার পর ধরা পড়ল, এই একই কথা দু’বছর আগে শোনা গিয়েছিল ম্যাসাচুসেট্স-এর গভর্নর ডেভল প্যাট্রিকের নির্বাচনী প্রচারে। কেবল বিষয়বস্তু নয়, লাইনকে লাইন, প্যারাকে প্যারা সেম! ‘শেম, শেম’ করে উঠলেন বিরোধী হিলারি ক্লিন্টনের সমর্থকরা। মার্কিন জনতাও জেনে হতভম্ব, যে ‘জাস্ট ওয়ার্ড’ শব্দবন্ধ ঘুরে-ফিরে ব্যবহার করে মুগ্ধ করছেন ওবামা, সে তো অবিকল প্যাট্রিক! যে ‘ইয়েস, উই ক্যান’ স্লোগান দিয়ে বাজার গরম করছেন, তা ১৯৭২-এর পুরনো কাসুন্দি! আমেরিকার খেটে-খাওয়া মানুষদের সংগঠন ইউনাইটেড ফার্ম ওয়ার্কার্স-এর ‘সি সে পুয়েদে’ মোটোটির এই ইংরেজি ভাষান্তরও যে পূর্বব্যবহৃত! বিরোধী শিবির আর সাংবাদিকরা চেপে ধরতেই ওবামার বড় গলা তিলকে তাল করা হচ্ছে। হিলারিও নাকি তাঁর বক্তব্য থেকেই বহু কথা টোকেন, কাজেই তাঁর সাত খুন মাফ। আরও বললেন, ডেমোক্র্যাট প্যাট্রিক তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু, নানা বিষয়ে তাঁদের ভাবনার আদানপ্রদান চলেই থাকে। মানে, বন্ধুত্ব থাকলে যেন কপিরাইট নেই, না কি তাঁরই নেই কপি-রাইটার।

কতকটা এমন প্রশ্নই তুলেছিলেন মার্কিন গবেষক এলভিন ফেলজেনবার্গ। সেটা ২০১১। ওবামা তত দিনে প্রেসিডেন্ট। জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর দ্বিতীয় ভাষণের পরও উঠল একই রকম অভিযোগ। ওবামা ও তাঁর ভাষণ-লিখিয়েদের ব্যঙ্গ করে এলভিন লিখলেন, ‘এই বক্তৃতাটি হয়তো স্মরণীয় থেকে যাবে অন্যদের পুরনো কাজের বিখ্যাত বা ততটা-বিখ্যাত-নয়, এমন সব মুহূর্তের কাট-পেস্টের জন্যই!’ বক্তৃতার শুরুর দিকে রবার্ট কেনেডির নাম করেই তাঁকে উদ্ধৃত করেন ওবামা। এর পর স্বভাবতই লোকে ভাববে বাকিটুকু যা বলছেন, সবই নিজের কথা, এক জন রাষ্ট্রপ্রধানের বাণী। স্বচিন্তিত ও সুচিন্তিত। কিন্তু ওবামা যা কইলেন, ছত্রে ছত্রে টুকলিফাই! উড্রো উইলসনের থেকে হুবহু মারলেন ‘লাইট টু দ্য ওয়ার্ল্ড’, মার্গারেট থ্যাচারের ১৯৯১-এর বক্তৃতা থেকে ‘নো আদার নেশন হ্যাজ বিন বিল্ট আপন অ্যান আইডিয়া’র ধারণা। এমনকী সবচেয়ে লম্বা হাততালিও পেলেন জন এফ কেনেডিকে কপি-পেস্ট করে। কোথাও কোথাও উঠে এলেন রোনাল্ড রেগনও। তবে ওবামার বক্তৃতায় সে দিন সর্বাধিক প্রতিধ্বনিত হয়েছিলেন নিউইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর মারিয়ো কোওমো। আশির দশকের শুরুতে দেওয়া সেই বিখ্যাত বক্তৃতা থেকে ‘আমেরিকান ফ্যামিলি’ কনসেপ্টটি নিয়ে এলেন। শুধু তা-ই নয়, কথার পিঠে কথা সাজানোয় অবিকল কোওমো-কে নকল করে গেলেন। আগাগোড়াই কারও নামোল্লেখ না করে, প্রাপ্য স্বীকৃতি না দিয়ে।

কিঞ্চিত্‌ মৃদু স্বরে হলেও এ বছরও ফের একই অভিযোগ। অভিযোগকারী: জর্জ ডব্লু বুশের স্পিচ রাইটার মার্ক থিয়েসেন। বুশকে বিঁধতে নাকি ২০০৭ সালে বুশের বলা কথাই এ বার আউড়েছেন তিনি। সত্যি, পৃথিবীর সব লোক হাঁ করে তাকিয়ে ওবামার দিকে, আর তাঁর স্পিচ-রাইটাররা কিনা তাকিয়ে কোটেশন-বইয়ের দিকে!

susnatoc@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

susnat chowdhury kechcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE