Advertisement
E-Paper

নিউ ইয়ার পুজো

বাঙালির শ্রেষ্ঠ নববর্ষপুজো ফার্স্ট জানুয়ারি। কলকাতায় শীতকালে, মেলবোর্নে ঠা-ঠা গ্রীষ্মে এবং আরও নানা জায়গায় নানা সময়ে এই পুজো হয়। রাজনীতি না করলেও এই দিন পার্টি করতে, শিবরাত্রি না হলেও রাত জাগতে এবং উঠোন বাঁকা হলেও নাচতে হয়। বাঙালির অনেক পুজো থাকা সত্ত্বেও ফার্স্ট জানুয়ারিই কেন সবচেয়ে বিখ্যাত, মতভেদ আছে। বাঙালির ক্যালেন্ডারে বছরে মাত্র তিনটি দিন।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৪

বাঙালির শ্রেষ্ঠ নববর্ষপুজো ফার্স্ট জানুয়ারি। কলকাতায় শীতকালে, মেলবোর্নে ঠা-ঠা গ্রীষ্মে এবং আরও নানা জায়গায় নানা সময়ে এই পুজো হয়। রাজনীতি না করলেও এই দিন পার্টি করতে, শিবরাত্রি না হলেও রাত জাগতে এবং উঠোন বাঁকা হলেও নাচতে হয়।

বাঙালির অনেক পুজো থাকা সত্ত্বেও ফার্স্ট জানুয়ারিই কেন সবচেয়ে বিখ্যাত, মতভেদ আছে। বাঙালির ক্যালেন্ডারে বছরে মাত্র তিনটি দিন। তিন দিনের বছর বলে পয়লা বৈশাখকে কেউ পাত্তা দেয় না। আর শাহরুখ খানের হ্যাপি-নিউ-ইয়ার সবে এক বছর শুরু হয়েছে। কিন্তু ফার্স্ট জানুয়ারি দু’হাজার বছরের পুরনো পুজো, তায় বিলিতি। ইংরেজরা আবার কায়দা করে নিউ-কে বলে ‘ন্যু’। ন্যু-ইয়ার থেকেই জা-ন্যু-ইয়ারি নামটির উদ্ভব। এ কারণে নিউ ইয়ার শুধু জানুয়ারি মাসেই হয়। অন্য মাসে অনেক চেষ্টা করেও জমানো যায়নি।

নারীবাদীরা অবশ্য নিউ ইয়ারের খ্যাতির জন্যও পুং-প্রাধান্যকে দায়ী করেন। এই দিনের প্রাক্কালে মেয়েরা অদৃশ্যপ্রায় পোশাক পরে ঘোরে। তাই তাদের নিউ-ইয়ার্স-ইভ বলা হয়। ছেলেরা নিউ ইয়ার্স ইভদের দেখে সিটি দেয়, তাই তাদের বলে ইভ-টিজার। পণ্ডিতরা বলেন, ‘ইয়ার’ অর্থাৎ বন্ধু শব্দটি পুংবাচক, এই পুং-প্রাধান্যই ইভ-টিজিং’এর আসল কারণ, সে জন্য তাঁরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে সূর্যকে সবিতা, ছেলেবেলাকে মেয়েবেলা এবং নববর্ষকে নববর্ষা বলে ডাকেন। এই পণ্ডিতদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ অন্যতম। তিনি এই মর্মে ‘নববর্ষা’ নামে একটি কবিতাও লিখেছেন। ইভটিজিং বন্ধ না হলেও, বিশ্বকবির আদর্শ অনুসরণ করে আজও এই দিনটিতে লোকে ময়ূরের মতো নাচে।

আমেরিকা নিউ ইয়ারের জন্য বিখ্যাত। নববর্ষিয়ে ও গর্জিয়ে ফাটিয়ে দেয় বলে নিউ ইয়র্কের লোকেদের নিউ-ইয়ার-কার বলা হয়। এর আসল অর্থ হল, ওরা জানে নিউ ইয়ার কার। শুধু ওদের। তাই অনেকেই এই পুজোর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদের কারসাজি দেখেন।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, পয়লা জানুয়ারির রমরমার আসল কারণ হল: এই পুজোর মন্ত্র। অন্য পুজোয় কত কষ্ট: উপোস, ঘেমো গায়ে আগুনের সামনে অংবংচং। নিউ ইয়ার রেজোলিউশনে (মন্ত্রের ইংরিজি রেজোলিউশন) সে সবের বালাই নেই। এই মন্ত্র আওড়াতে হয়, তার পরেই উলটো কাজ করতে হয়। কথা দিতে হয়, তার পরেই ভাঙতে হয়। তাই রিচুয়ালটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ জন্য সুদূর গুপ্তযুগ থেকেই এই আষাঢ়ে প্রতিজ্ঞা চলে আসছে, কালিদাসের ‘আষাঢ়ে প্রথম দিবসে’ শ্লোকে যার সাক্ষ্য আছে। চৈতন্যের গভীরে এই মন্ত্রের মজা প্রোথিত বলে কোনও চক্রান্তেই একে থামানো যায়নি। বরং সমস্ত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে, যুগ যুগ ধরে জানুয়ারির এক তারিখে কুঁড়ে লোকেরা ‘রোজ দৌড়ব’, বেঁটেরা ‘চাঁদ ধরব’, উপাচার্যরা ‘ছাত্র ঠ্যাঙাব না,’ রাজনীতিকরা ‘চিটফান্ডে জড়াব না’, ডাক্তাররা ‘পিটিয়ে মানুষ মারব না’ ইত্যাদি ভাল-ভাল প্রতিজ্ঞা করেন এবং চার তারিখ নাগাদ ভুলে যান। সমাজবাস্তবতার সঙ্গে এই গভীর যোগাযোগ অন্য কোনও পুজোয় নেই। তাই নিউ ইয়ারের কোনও বিকল্পও নেই।

bsaikat@gmail.com

anandabazar rabibasariya saikat bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy