Advertisement
E-Paper

ফিশমেরিন

আজ স্কুল ছুটির পর দীপকস্যর তিতাসকে টিচার্স রুমে ডেকেছিলেন। নিজের ডান তর্জনী তিতাসের চোখের সামনে বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে বলেছিলেন, ‘কল্পলোক, কল্পলোক, কল্পলোক। কল্পজগতেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। ডু সাম ইউনিক।’ হাতে মাত্র সাতটা দিন। এর মধ্যেই প্রজেক্ট শেষ করে জমা দিতে হবে। বিষয় ‘আওয়ার আর্থ, আওয়ার ফিউচার’। কিন্তু কী করবে তিতাস? প্রতিবার নতুন নতুন আইডিয়া বের করাও সহজ কথা নয়।

শুভ্রদেব বল

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
ছবি: সুমিত্র বসাক

ছবি: সুমিত্র বসাক

আজ স্কুল ছুটির পর দীপকস্যর তিতাসকে টিচার্স রুমে ডেকেছিলেন। নিজের ডান তর্জনী তিতাসের চোখের সামনে বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে বলেছিলেন, ‘কল্পলোক, কল্পলোক, কল্পলোক। কল্পজগতেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। ডু সাম ইউনিক।’

হাতে মাত্র সাতটা দিন। এর মধ্যেই প্রজেক্ট শেষ করে জমা দিতে হবে। বিষয় ‘আওয়ার আর্থ, আওয়ার ফিউচার’। কিন্তু কী করবে তিতাস? প্রতিবার নতুন নতুন আইডিয়া বের করাও সহজ কথা নয়। পরীক্ষার নম্বরে রিহান আর দিয়াই এগিয়ে থাকে। কিন্তু প্রজেক্টের বিষয়ে তিতাসকে টেক্কা দেয় কে? অ্যাকোয়ারিয়ামের রঙিন মাছগুলোকে খাবার দিতে দিতে এ সবই ভাবছিল তিতাস। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, মেরুপ্রদেশের বরফের ক্রমবর্ধমান গলন, পৃথিবীর জলস্তর বৃদ্ধি... কী হবে ভাবী পৃথিবীর? হয়তো এই রঙিন মাছগুলোর মতো মানুষকেও থাকতে হবে জলের তলায়। ঘরের আলোটা নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল তিতাস। অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছগুলো তখনও খেলছে। নীল আলোয় ওদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তিতাসের চোখে নেমে এল গভীর ঘুম।

ছোট্ট কেবিন। তিতাসের সামনে বড় স্ক্রিন। পাশে ছোট ছোট কাচের জানালা। বাইরে শুধু জল আর জল। জলজ উদ্ভিদ আর ছোট বড় মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে। উপরে নীল-সাদা জল। গভীরে সবুজাভ নীল সমুদ্র। তিতাস ভাল করে লক্ষ করল। চার পাশে মাছের মতো দেখতে বেশ কয়েকটি সাবমেরিন।

একটু বদলে নিয়ে এদের ফিশমেরিনও বলা যেতে পারে।

স্ক্রিনের একটা অংশে ব্লিঙ্ক করছে। একটা ফোন কল। রিসিভ করল তিতাস। ‘হ্যালো তিতাস, দীপকস্যর বলছি।’ ‘হ্যাঁ স্যর বলুন।’ ‘একটু আসতে পারবে আমাদের স্কুলে?’ ‘হ্যাঁ স্যর আসছি।’ দশ নম্বর ওয়াটার লেন, এডুকেশন ক্যাম্পাস। স্কুলের এই অ্যাড্রেসটা স্ক্রিনে টাইপ করল তিতাস। সঙ্গে সঙ্গে তিতাসের ফিশমেরিনটা ঘুরে গেল সুনির্দিষ্ট পথে। তার ফিশমেরিনের সামনে আরও দুটো ছোট ফিশমেরিন। তিতাসকে এসকর্ট করার জন্য। তিতাস এখন আর সাধারণ কেউ নয়, সে এখন বিখ্যাত গবেষক।

বিশাল ধূমকেতু এসে আছড়ে পড়ে মেরুপ্রদেশে। গলে যায় সমস্ত বরফ। মুছে যায় ভূ-গোলকের সীমারেখা। এখন এক রাষ্ট্র, এক মানুষ। সবাই এখন সমুদ্র যুগের জীব।

‘আওয়ার আর্থ, আওয়ার ফিউচার’-এর উপর বিশেষ গবেষণায় তিতাস ব্যস্ত। এখন ওর অনেক কাজ। মেরুপ্রদেশে প্রচুর খনিজ সম্পদের সন্ধান মিলেছে। অবশিষ্ট এই সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। যে ভাবেই হোক মানুষের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতেই হবে।

হঠাৎই তিতাসের কেবিনের নিউজ স্ক্রিনে ফুটে উঠল ‘সেফ ডেলিভারি অব আ ফিশগার্ল’। দারুণ ব্যাপার। ডাক্তারদের গবেষণাও সাকসেসফুল। ফিশগার্লের পায়ের বদলে পাখনা আর চোখ দুটো রেড কালারের। বাকি সবটাই মানুষের মতো। পৃথিবীতে আবার বিবর্তন। বাঁচার জন্য মানুষ হবে ফিশমানুষ।

ফিশমেরিনটা এডুকেশন ক্যাম্পাসের সামনে এসে থামল। মোটা কাচনলের পথ ধরে তিতাস চলে এল দীপকস্যরের ঘরে। প্রিন্সিপালের চেয়ারে স্যর বসে আছেন। মাথার চুল পাকা। শরীরে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। স্যর তিতাসকে বসতে ইশারা করলেন।

‘অনেক দিন পর দেখলাম তোমাকে।’ তোমার গবেষণার কাজ কত দূর? স্যর, যে ধূমকেতু এখানে পড়েছিল, তাতে জলের সন্ধান মিলেছে। উন্নত জীবের পদচিহ্নও পাওয়া গিয়েছে। আমরা শিয়োর, এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই স্যর। মহাকাশে আরও একটা রিসার্চ সেন্টার খোলা হচ্ছে। ওটার দায়িত্ব আমার। ‘বাঃ দারুণ খবর, আগাম শুভেচ্ছা তোমাকে।’ হাতটা বাড়িয়ে দিলেন স্যর। তিতাস হ্যান্ডশেক করল।

‘আমাদের কয়েক জন স্টুডেন্টকে তোমার রিসার্চ সেন্টার পরিদর্শনে নিয়ে যেতে চাই। বেশ ব্রিলিয়ান্ট ওরা।’ ‘অবশ্যই স্যর।’ ‘বেশ তোমার যে দিন সময় হবে। আমায় জানিয়ো।’ ‘শিয়োর স্যর।’ স্যরের টেবিলে রাখা ছোট্ট বাক্স থেকে সবুজ রঙের একটা গোল ক্যাপসুল তুলে নিল তিতাস। খুব খিদে পেয়েছে। এক রকম সবুজ শ্যাওলা আর ছোট ছোট লাল চিংড়ি দিয়ে তৈরি হয় এই ক্যাপসুল। এগুলোই এখন জল মানুষের খাবার। ‘চলি স্যর’। ‘হ্যাঁ এসো।’ আবার কাচনলের পথ ধরে বেরিয়ে এসে নিজের ফিশমেরিনে পৌঁছল তিতাস। ওর ফিশমেরিনটা একটা গোল্ড ফিশমেরিন। জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন বিশেষ যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে চলে আসে কেবিনে। আর কেবিনের কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায় বাইরে। এসকর্ট ফিশমেরিন দুটো টাইগারফিশের মতো। কিছুটা যেতেই কেবিনে বিপদ সংকেত বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল বিশালাকার ক্রোকোডাইল ফিশ। টাইগার ফিশমেরিন থেকে নেমে এল এক ডুবুরি। সুদক্ষ হাতে ক্রোকোডাইল ফিশের গায়ে কিছু একটা লাগিয়ে দিল। অমনি দানবাকার ফিশটা সোজা উপরে উঠে গেল। নিঃশব্দে টুকরো টুকরো হয়ে গেল ওর শরীর। এ বার ডুবুরি তিতাসের কেবিনে জানালার পাশে এগিয়ে এল। মাস্কটা খুলে, তিতাতের দিকে তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি তুলে ধরল। চমকে উঠল তিতাস। ‘আরে রিহান তুই?’ রিহান মাস্ক পরে টাইগার ফিশমেরিনে চলে গেল। তিতাস ডাকতে লাগল, রিহান, রিহান। হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে গেল তিতাসের। পাশের জানালা দিয়ে রোদ পড়েছে বিছানায়। সামনের অ্যাকোয়ারিয়ামে খেলা করছে রঙিন ফিশ। ছোট্ট ক্রোকোডাইল ফিশটা একই ভাবে অ্যাকোয়ারিয়ামের গায়ে আটকে আছে।

subhradeb bal rabibasariya anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy