রাস্তায়, ঘরে: কাউকে বেঁচে থাকতে হয় লড়াই করে, কেউ থাকে সুখে-বৈভবে!
এক জন গবেষক মাঠের একটি জায়গায় রেখে আসেন দু’টি বাটি। কিছুটা দূরত্বে। একটি বাটিতে ছিল কাঁচা মুরগির মাংস। অন্য বাটিতে শুধুই মাংসের গন্ধ ভাল ভাবে মাখানো ছিল। কিন্তু তাতে কোনও মাংসের টুকরো ছিল না। এ বার দু’টি বাটির মধ্যে একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আর এক জন গবেষক কোনও একটি বাটির দিকে আঙুল দেখালেন। সামনে দাঁড়ানো পথের কুকুরদের চোখে চোখ না রেখেই। দ্বিতীয় গবেষকেরও জানা ছিল না কোন বাটিতে মাংস রয়েছে আর কোন বাটিতে সেটা নেই।
তাঁরা দেখেছেন, কুকুরদের অর্ধেক গবেষকদের ইশারায় কোনও সাড়া দিল না। বরং সন্দেহের চোখে তাকাল। ‘‘হয়তো অতীতে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে ঠকতে হয়েছে’’, বলছেন অনিন্দিতা।
অচেনার ইশারাও তাদের চেনা!
কুকুরদের বাকি অর্ধেক অংশটি কিন্তু গবেষকদের ইশারায় সাড়া দিয়েছিল। আর তারা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক গবেষকের আঙুলের ইশারা দেখে একটি বাটির কাছে পৌঁছেছিল।
অনিন্দিতার ব্যাখ্যা, ‘‘ইশারা দেওয়ার সময় যেহেতু কুকুরদের দেখেননি গবেষক, তাই অচেনা কুকুররাও তাঁর চোখের ভাষা বোঝার সুযোগ পায়নি। তারা বাটির দিকে এগিয়েছিল শুধুই সেই গবেষকের আঙুলের ইশারা বুঝে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, অচেনা পথের কুকুররাও আমাদের ইশারা, ইঙ্গিত বুঝতে পারে, তাদের আগেভাগে কিছু না শেখানো হলেও।’’
ইশারা, ইঙ্গিতে কী বলি, তারা মনেও রাখতে পারে
গবেষকরা এর পর আরও একটি পরীক্ষা করেন। ইশারা এক বার দেখিয়েই তা বন্ধ করেন। আবার কিছু ক্ষণ পর ইশারা করেন। তাতেও দেখা গিয়েছে, গবেষকদের ইশারা দেখেই বাটির কাছে পৌঁছে গিয়েছিল পথের কুকুররা।
অনিন্দিতার ব্যাখ্যা, ‘‘এটা বোঝাচ্ছে, ওরা আমাদের ইশারা, ইঙ্গিতগুলি কেমন, সেটা এক বার দেখার পর মনেও রাখে। ফলে ইশারা বন্ধ করে দিলেও তারা বাটির দিকেই এগিয়ে গিয়েছিল।’’
অভিজ্ঞতা থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে ওরা
পরীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। গবেষকের ইশারার সূত্র ধরে কোনও পথের কুকুর কোনও বাটির কাছে গিয়ে মাংসের টুকরো না পেয়ে থাকলে, তাকে দ্বিতীয় বার ইশারা করে আর টেনে আনা যায়নি।
অনিন্দিতার ব্যাখ্যা, ‘‘এটা প্রমাণ করছে, ওরা ঠকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে। তার পর ওরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর ঠকবে না।’’
কেন কুকুরের চোখে চোখ রেখে ইশারা করা হয়নি?
অনিন্দিতা জানাচ্ছেন, এর আগে বিদেশে কিছু কাজ হয়েছে পোষা কুকুর নিয়ে। যাতে দেখা গিয়েছে, কুকুরের চোখে আমাদের চোখাচোখি হলেই আমাদের রক্তে ‘অক্সিটোসিন’ নামে এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। তার ফলে, আমাদের মধ্যে অপত্য স্নেহের জন্ম হয়। আর কুকুর তখন লেজ নাড়াতে শুরু করে। কুকুর এই চোখাচোখিটা চায়। কুকুরের চোখের বিশেষ একটি গঠনও আমাদের মধ্যে অপত্য স্নেহের জন্ম দেয়। সেটা যাতে না হয়, তাই এ বারের পরীক্ষায় চোখাচোখি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল ভেবেচিন্তেই।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ মনে করছেন, অনিন্দিতাদের পরীক্ষানিরীক্ষা ও তার পদ্ধতির অভিনবত্ব যথেষ্টই। কারণ, রাস্তার কুকুরদের নিয়ে কাজ খুবই কম হয় গোটা বিশ্বে। ভারতে তো প্রায় হয়ই না। তাঁদের পর্যবেক্ষণগুলিও উল্লেখযোগ্য।