Advertisement
E-Paper

মুম্বইয়ের সেই সন্ধ্যা, ছাঁইয়া ছাঁইয়ায় দুলে চলেছেন তিনি...

বিজ্ঞানের এই সেলিব্রিটির মুখোমুখি হওয়াটাই এক বিরল অভিজ্ঞতা। স্মৃতিচারণায় পথিক গুহবিজ্ঞানের এই সেলিব্রিটির মুখোমুখি হওয়াটাই এক বিরল অভিজ্ঞতা। স্মৃতিচারণায় পথিক গুহ

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ১৫:১৮
১৯৯৫-এ সস্ত্রীক হকিং। —ফাইল চিত্র।

১৯৯৫-এ সস্ত্রীক হকিং। —ফাইল চিত্র।

বিজ্ঞানে ইন্দ্রপতন! কারণ, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পর স্টিফেন হকিং-এর মতো সেলিব্রিটি আর এই দুনিয়ায় আসেননি।

হকিং-এর এই খ্যাতির পিছনে যতটা অবদান তাঁর উচ্চমানের গবেষণার, প্রায় ততটাই ছিল বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব প্রচেষ্টা। নিন্দুকেরা বলে থাকেন, হকিং-এর সেলিব্রিটিহুড তাঁর নিজের তৈরি। এর পিছনে একটা কাকতালীয় যোগাযোগ নিশ্চয়ই আছে। সেটা তাঁর দৈহিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গিয়ে— এত দিন বাঁচার কথাই নয় যাঁর, সেই রকম মানুষের পক্ষে অভাবনীয়— জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায় একের পর এক দুরূহ গবেষণায় ব্রতী হওয়া। তিনি নিজেই তো লিখেছেন, দৈহিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে খ্যাতির উপাদান জুগিয়েছে।

যখন থেকে হকিং বুঝেছেন যে, তিনি বিজ্ঞানের সেলেব, তখন থেকেই নানা বিষয়ে মন্তব্য করে প্রচারের আলোয় থেকেছেন। যেমন, ভিন‌্গ্রহের জীব (ইটি) সম্পর্কে এক বার বলেছিলেন, ওরা আমাদের ধ্বংস করে দেবে। ব্যস, দুনিয়া জুড়ে আলোচনার ঝড়! আবার এক বার মত প্রকাশ করলেন, পরিবেশ দূষণ এবং যুদ্ধবিগ্রহে পৃথিবীর ধ্বংস সমাসন্ন। সুতরাং মানুষের উচিত অন্য গ্রহে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করা। এর পরেও একই প্রতিক্রিয়া। ‘জিরো গ্রাভিটি’র মহাকাশযানে গিয়ে শূন্যে ভেসে থেকেছেন। ‘বিগ ব্যাং থিয়োরি’ নামের জনপ্রিয় সিরিয়ালে তাঁকে বারে বারেই নিজের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে দর্শকদের সামনে আসতে। বিজ্ঞানী হিসেবে কেউই মার্কিন প্রেসিডেন্টের নৈশভোজে কোনওদিনই ডাক পাননি। একমাত্র ব্যতিক্রম স্টিফেন হকিং। বিল ক্লিন্টন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাঁকে নৈশভোজে ডেকেছিলেন হোয়াইট হাউসে। বিরল সম্মান তো বটেই!

আরও খবর
আইনস্টাইনের জন্মদিনেই চলে গেলেন হকিং

হকিং-এর জীবনের সেরা গবেষণা ‘ব্ল্যাক হোল’ বিষয়ে। অথচ, কোনও বিশেষ মৃত নক্ষত্র ‘ব্ল্যাক হোল’ কি না, সে বিষয়ে বাজি ধরেছেন তিনি। প্রতিপক্ষ ব্ল্যাক হোল-বিশেষজ্ঞ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী কিপ থর্ন। বাজির বিষয়? হকিং বলছেন, ‘ওই মৃত নক্ষত্র ব্ল্যাক হোল নয়।’ আর থর্নের দাবি, ‘হ্যাঁ, ওটাই ব্ল্যাক হোল।’ বাজির পুরস্কারও বেশ চমকপ্রদ! হকিং জিতলে ২ বছরের জন্য বিনামূল্যে পাবেন স্যাটায়ারধর্মী পৃথিবীখ্যাত পত্রিকা ‘প্রাইভেট আই’। আর থর্ন জিতলে পাবেন, এক বছরের জন্য ‘পেন্টহাউস’— রগরগে অশ্লীল পত্রিকা। বাজিতে জিতলেন থর্ন। এক বছর ধরে ওঁর বাড়িতে গেল ‘পেন্ট হাউস’। থর্নের বউ তো রেগে কাঁই!

১৯৮৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে হকিং-এর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ওঁর বিষয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। অবাক হয়েছিলাম, এই তথ্য পেয়ে যে, ওঁর চেম্বারে নাকি রাখা আছে মেরিলিন মনরোর-র লাস্যময়ী বিশাল ছবি। গিয়ে দেখি, ঠিক তাই! বড় সাধ ছিল, কলকাতার রাস্তা থেকে কেনা ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইখানায় ওঁর সই নেব। গিয়ে দেখলাম, হকিং-এর আঙুল চলে না। সুতরাং স্বাক্ষর দেওয়ার প্রশ্নই নেই। কথা বলেন কম্পিউটার ভয়েসে। আমার হাতে বইখানা দেখে যন্ত্রের খ্যানখেনে গলায় ওঁর প্রশ্ন শুনে আমি তো হতবাক! জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘হোঁয়ার ডিঁড ইঁউ গেঁট দিঁস বুঁক ফ্রঁম?’’ প্রশ্নের মানে বুঝলাম। হকিং-এর ধারণা হয়েছে, পেপারব্যাক বইখানা পাইরেটেড এডিশন। সুতরাং তিনি রয়্যালটি থেকে বঞ্চিত।

আরও খবর
স্টিফেন হকিং এক বিস্ময় প্রতিভার নাম

মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ (টিআইএফআর)-এ হকিং ২০০১ সালে এসেছিলেন ‘স্ট্রিং থিয়োরি’ বিষয়ে সম্মেলনে যোগ দিতে। উঠেছিলেন তাজ হোটেলে। টিআইএফআর-এর বিজ্ঞানীদের কাছে যে তথ্য পেয়েছিলাম, তাতে আমার আর এক বার অবাক হওয়ার পালা। তখন ‘ছাঁইয়া ছাঁইয়া’ গানটি খুব জনপ্রিয়। শুনেছিলাম, এক রাতে নাকি সম্মেলনে আগত পৃথিবীর নানা দেশের বিজ্ঞানীরা মত্ত ছিলেন পানোল্লাসে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল ওই গানটা। আর হকিং নাকি হুইল চেয়ার চালিয়ে ওই গানের তালে নেচেওছিলেন!

Stephen Hawking Scientist Physicist Black Hole Theory
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy