Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Tears

আনন্দে, বিষাদে কাঁদতে পারেন না? এ বার পারবেন, অশ্রুগ্রন্থি বানানো হল গবেষণাগারে

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘সেল স্টেম সেল’-এ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১ ১৭:৫০
Share: Save:

যাঁদের অশ্রুগ্রন্থি একেবারেই শুকিয়ে গিয়েছে, যাঁরা কাঁদতে পারেন না, তাঁরা এ বার কাঁদতে পারবেন। আনন্দে, বিষাদে।

বিশ্বে এই প্রথম গবেষণাগারে তৈরি করা সম্ভব হল অশ্রুগ্রন্থি বা ‘টিয়ার গ্ল্যান্ডস’। পেট্রি ডিশে (গবেযণাগারে যে আধারে রেখে কোষগুলিকে পরীক্ষা করা হয়)। মানুষের শরীরের স্টেম সেল থেকে কোষ নিয়ে কৃত্রিম ভাবে বানানো হল অশ্রুগ্রন্থি। সেই অশ্রুগ্রন্থি প্রতিস্থাপন করলেই যে মানুষ আনন্দে, বিষাদে কাঁদতে পারেন না তিনিও কাঁদতে পারবেন। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সেল স্টেম সেল’-এ।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি আগামী দিনে মানুষের চোখে একেবারেই শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুগ্রন্থির পুনরুজ্জীবনেরও (‘রিজেনারেশন’) পথ দেখাতে পারে।

মানুষের অক্ষিকোটরে চোখের মণির ঠিক উপরেই থাকে অশ্রুগ্রন্থি। এই গ্রন্থি থেকে ক্ষরণই মানুষের চোখকে সব সময় ভিজিয়ে রাখে। ধুলোবালি ও নানা রকমের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচায়। এই গ্রন্থি থেকে ক্ষরণ স্বাভাবিকের চেয়ে খুব বেশি বেড়ে গেলে মানুষের চোখ বেশি আর্দ্র হয়ে পড়ে। তাতে দৃষ্টি ঝাপ্‌সা হয়ে পড়ে। আবার গ্রন্থি থেকে ক্ষরণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে মানুষের চোখ একেবারেই শুকিয়ে যায়। তখন চোখে যন্ত্রণা হয়। মানুষ আর কাঁদতে পারে না আনন্দে, বিষাদে।

অশ্রুগ্রন্থি শুকিয়ে গেলে এখন নানা ধরনের আই ড্রপ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কখনও কখনও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

‘‘কিন্তু কোনওটাতেই খুব বেশি কাজ হয় না। কারণ, টিয়ার গ্ল্যান্ড বা ল্যাক্রিম্যাল গ্ল্যান্ডকে এখনও পুরোপুরি জেনে, বুঝে ওঠা সম্ভবই হয়নি আমাদের পক্ষে’’, বলেছেন অন্যতম গবেষক নেদারল্যান্ডসের হিউব্রেখট ইনস্টিটিউটের মলিকিউলার জেনেটিসিস্ট অধ্যাপক হান্স ক্লেভার্স।

এ বার সেই পথ কিছুটা সুগম হল গবেষকদের দৌলতে। তাঁরা মানুষ ও ইঁদুরের চোখের অশ্রুগ্রন্থির উপরেই পরীক্ষা চালিয়েছেন।

গবেষকরা প্রথমে মানুষের শরীর থেকে প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল সংগ্রহ করেন। সেই কোষ থেকে তাঁরা তৈরি করেন খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ল্যাক্রিমাল কোষ বা টিয়ার গ্ল্যান্ডের অণু সংস্করণ। এগুলিই সংখ্যায় বেড়ে পূর্ণাঙ্গ টিয়ার গ্ল্যান্ড তৈরি করে। তাঁরা পেট্রি ডিশে যে ল্যাক্রিমাল কোষ বা টিয়ার গ্ল্যান্ডের অণু সংস্করণ তৈরি করেছিলেন, দেখা গিয়েছে তা পূর্ণাঙ্গ সক্ষম টিয়ার গ্ল্যান্ডের মতোই কাজ করতে পারছে। ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষগুলি থেকে অশ্রু বার করে আনার জন্য গবেষকরা কোষগুলির উপর ফেলেছিলেন নোরেপিনেফ্রিন নামে একটি রাসায়নিক। মানবমস্তিষ্কে এই রাসায়নিকটির ক্ষরণই অশ্রুর প্রধান কারণ। তাঁরা দেখেন, অশ্রু বার করার জন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষগুলি বেলুনের মতো ফুলে উঠছে।

গবেষকরা এও দেখেছেন, কোষগুলিকে মানুষের চোখে প্রতিস্থাপন করলে তা সমান ভাবেই কার্যকরী হয়ে উঠতে পারছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tears Eye
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE