Advertisement
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Science News

৬৫ পয়সায় ১ লিটার! সমুদ্রের জলেই এ বার তৃষ্ণা মেটানো যাবে

এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। অসম্ভব লবণাক্ত সমুদ্র বা মহাসাগরের জলকে পানীয় জলে পরিণত করার প্ল্যান্ট বানিয়ে। বিশ্বে এই প্রথম।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৪৪
Share: Save:

ভয়াবহ খরায় আর বুকের ছাতি ফেটে যাবে না জলের অভাবে? পানীয় জলের খোঁজে আর হা-হন্যে তল্লাশ করতে হবে না মানুষকে? জলের খোঁজে ভূগর্ভের গভীরে একটি শিলাস্তর থেকে আরেকটি শিলাস্তরে নেমে যৎসামান্য জলের ভাঁড়ার দেখে আর হতাশ হয়ে পড়তে হবে না আমাদের? দুর্গম দ্বীপে আর পানীয় জলের হাপিত্যেশ অপেক্ষায় থাকতে হবে না মানুষকে?

হ্যাঁ, এই প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরে এ বার ‘না’ বলার সময় বোধহয় আর খুব বেশি দূরে নেই আমাদের আধুনিক সভ্যতার। কারণ, এই দুরূহ কাজটিকে সম্ভব করে তুলেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। অসম্ভব লবণাক্ত সমুদ্র বা মহাসাগরের জলকে পানীয় জলে পরিণত করার প্ল্যান্ট বানিয়ে। ঘরের তাপমাত্রায়। বিশ্বে এই প্রথম। যে জলের উৎপাদন খরচ হবে লিটারে মাত্র ৬৫ পয়সা থেকে ১ টাকা!

চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশন টেকনোলজি (এনআইওটি)-র একটি গবেষকদলের বানানো ওই প্ল্যান্টের নাম- ‘লো-টেম্পারেচার থার্মাল ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট’ বা, ‘এলটিটিডি’। শুধুই ভাবনায় বা গবেষণাপত্রে না রেখে, ইতিমধ্যেই তাঁরা সেই প্ল্যান্ট বসানোর তোড়জোড়-প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন লাক্ষাদ্বীপের ‘কারাভাত্তি’, ‘মিনিকয়’ ও ‘আভাত্তি’ দ্বীপে।

এনআইওটি ওই ধরনের আরও কয়েকটি প্ল্যান্ট বসাতে চলেছে লাক্ষাদ্বীপের ‘আন্দ্রথ’, ‘আমিনি’, ‘কাদামাত’, ‘কিলতান’, ‘কালপেনি’ ও ‘চেতলাত’ দ্বীপেও। সমুদ্রমন্থন করে তুলে আনা পানীয় জল ওই দ্বীপগুলিতে দিনে সরবরাহ করা হবে অন্তত দেড় লক্ষ লিটার করে।

সেই পানীয় জলের দাম পড়বে কত?

সেই সাগর-মহাসাগরের নোনা জলকে এনআইওটি-র বিজ্ঞানী-গবেষকরা এত সহজে পানীয় জলে বদলে ফেলার পথ দেখিয়েছেন যে, সেই পানীয় জল বানাতে খরচও হবে যৎসামান্যই। ফলে, সেই পানীয় জল কিনতে আমাদের খরচও হবে খুব সামান্যই। সমুদ্রমন্থন করে তুলে আনা সেই ‘অমৃত’-এর দাম নির্ভর করবে কোথায় তা বানানো হচ্ছে, তার উপরেই। কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে হলে, তার দাম কিছুটা কম পড়বে, সাগর-মহাসাগর তার হাতের নাগালে বলে। আর কোনও ভূখণ্ডে বা মরুভূমিতে তার দাম হবে একটু বেশি, সমুদ্র তাদের থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে বলে। বিভিন্ন ভূখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের দর-দামে ফারাক থাকার জন্যেও সেই পানীয় জলের দামে কিছুটা তারতম্য ঘটবে। তবে যা-ই হোক, সমুদ্রমন্থন করে তুলে আনা সেই পানীয় জলের দাম লিটার-পিছু ৬৪ পয়সা থেকে খুব বেশি হলে এক টাকার মধ্যেই থাকবে। এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের।

কী ভাবে সাগর সেঁচা লবণাক্ত জলকে পানীয় জলে বদলে ফেলা যাবে?

এনআইওটি-র বিশিষ্ট সমুদ্রবিজ্ঞানী রামান্না মূর্তি চেন্নাই থেকে টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘‘লাক্ষাদ্বীপ লাগোয়া সমু্দ্র-এলাকার ৬০০ মিটার পরিধি থেকে সমুদ্রগর্ভের ৪০০ মিটার নীচ থেকে খুব ঠান্ডা (যার তাপমাত্রা ১২/১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস), অসম্ভব লবণাক্ত জল তুলে এনে তার সঙ্গে মেশানো যাবে ভূস্তরের জলকে। প্রায় স্বাভাবিক ঘরের তাপমাত্রায় (২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এই প্রক্রিয়াতেই সাগরের অসম্ভব নোনা জল পরিস্রুত পানীয় জল হয়ে উঠবে। এমনকি, ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও চালানো যাবে সেই প্ল্যান্ট। বিশ্বে এই প্রথম। ফলে, পল্যান্ট চালানোর খরচ অনেকটাই কমবে। সেই জলের দামও কমবে।’’

সমুদ্রের জল থেকে যে ভাবে বানানো হয় পানীয় জল, দেখুন ভিডিয়ো

কী ভাবে সমুদ্র থেকে তুলে আনা হবে জল?

এনআইওটি-র অধিকর্তা আত্মানন্দ আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার পাইপ বসিয়ে দ্বীপ লাগোয়া সমুদ্রের ৬০০ মিটার এলাকার মধ্যে প্রায় ৪০০ মিটার গভীরতা থেকে ওই ঠান্ডা জল তুলে আনা হবে। যা অসম্ভব লবণাক্ত। ওই গভীর সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা হবে ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তার পর নানা ধরনের ক্লোরাইড ও ক্লোরেট লবণে ভরা সেই জলকে পরিশোধনের জন্য পর পর পাঠানো হবে নাইট্রেট, নাইট্রাইট যৌগ এবং অক্সাইড ও নাইট্রেট যৌগের প্ল্যান্টগুলিতে। লবণ প্রায় পুরোপুরি শুষে নেওয়ার পর সেই জলকে পাঠানো হবে ভূগর্ভস্থ জল রাখা রয়েছে এমন একটি প্ল্যান্টে। সেখানে সমুদ্রের পরিশোধিত জলের সঙ্গে মেশানো হবে ভূগর্ভস্থ জলকে। পরীক্ষা করা হবে তার গুণমান। তার পর তা সরবরাহ করা হবে।

লাক্ষাদ্বীপে সেই নির্মীয়মাণ প্ল্যান্টের নকশা

সমুদ্র সেঁচে জল তোলার জন্য কি বিপন্ন হবে না বাস্তুতন্ত্র?

মূল গবেষক রামান্না মূর্তি জানাচ্ছেন, তার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তার জন্যই সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট এলাকা ও নির্দিষ্ট গভীরতা বেছে নেওয়া হয়েছে। যে এলাকা ও গভীরতায় সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই হয়।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

ছবি ও গ্রাফিক-তথ্য সৌজন্যে: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশন টেকনোলজি (এনআইওটি)

অন্য বিষয়গুলি:

Low Temperature Thermal Desalination Plant Ramana Murthy National Institute of Ocean Technology এলটিটিডি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy