থানায় আনা হয়েছে সাপটিকে। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ পরামর্শ দেয়, বেদেরা হাজার টাকা দর দিয়েছে। বেচে দেওয়া হোক সাপ। কেউ আবার পিটিয়ে মারার পক্ষপাতী ছিল জালে জড়ানো বিষধর সাপটিকে। কিন্তু রুখে দাঁড়ান দুই যুবক। তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সাপ মারা অনুচিত। বার বার বলেন, সাপ আমাদের শত্রু নয়। দুই যুবকের তৎপরতায় শেষমেশ প্রাণে বেঁচেছে বিশালাকার কেউটে সাপটি।
মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিঙের গোপালপুর অঞ্চলের আমতলার আকন্দ পাড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই গ্রামে একটি ফুলের বাগান নাইলনের জাল দিয়ে ঘেরা ছিল। গ্রামের কয়েকটি বাচ্চা সকালে উঠে সেখান থেকে ফুল তুলতে যায়। তারা দেখে, জালে একটি বিরাট কেউটে সাপ জড়িয়ে রয়েছে। সাপ দেখে বাচ্চারা চিৎকার শুরু করে। লোকজন জড়ো হয়ে যায়।
গ্রামের করিৎকর্মা কিছু লোক ততক্ষণে লোকজন বাঁশ, লাঠি জোগাড় করে ফেলেছে। সাপটিকে এই মারে কী সেই মারে!
ইতিমধ্যে, ভিড়ের মধ্যে থেকে প্রতিবাদ জানান, গ্রামেরই দুই যুবক টুলু আকন্দ ও জাকারিয়া আকন্দ। দীর্ঘক্ষণ জমায়েতের বেশির ভাগ মানুষের সঙ্গে যুক্তির লড়াই লড়ে যান দুই যুবক। কিন্তু অন্য দিকে পাল্লা ভারি। কে শোনে কার কথা!
উপায়ন্তর না দেখে দুই যুবক ফোন করেন ক্যানিং থানার ওসি সতীনাথ চট্টোরাজকে। বলেন, ‘‘স্যার, গ্রামের লোকজন একটা কেউটে সাপকে মেরে ফেলতে চাইছে। আপনি কিছু একটা করুন। এরপরে ওসি গ্রামের কয়েকজনকে ফোন করে সাপটিকে মারতে নিষেধ করেন। দুই যুবকের কাছে জানতে চান, তারা সাপটিকে ধরে থানায় আনতে পারবে কিনা। ওই দুই যুবক জালে জড়ানো সাপটিকে একটি বস্তার মধ্যে ভরে থানায় নিয়ে আসে। পরে ওসি ওই সাপটিকে ক্যানিংয়ে সাপ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের হাতে তুলে দেন।
কিন্তু সাপ সংরক্ষণে এত সচেতনতা কী ভাবে এল টুলু- জাকারিয়াদের মধ্যে?
তাঁরা বলেন, ‘‘গ্রামে একবার যুক্তিবাদী সংস্থা একটি অনুষ্ঠান করে বলেছিল, সাপ আমাদের শত্রু নয়, বন্ধু। সাপে কামড়ালে ওঝা, গুণিন নয়, হাসপাতালে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করাতে হবে। সে কথা আমাদের মনে গেঁথে গিয়েছিল। যখন দেখলাম, গ্রামের লোকজন সাপটিকে পিটিয়ে মেরে দিতে কিংবা বিক্রি করে না করে পারিনি।’’
ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা ভয় রয়েছে। তাই সাপ দেখলেই মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু সাপ যে আমাদের বন্ধু, এ নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছি। কিছু মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা বাড়ছে, এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ।’’ বনগাঁর শোভন পাল ক’দিন আগেই টিভিতে সাপ ধরার কৌশল দেখে বাঁচিয়েছেন দু’টি সাপকে। তিনি ক্যানিঙের ঘটনাটি শুনে বলেন, ‘‘খুবই ভাল খবর। এ ভাবে যদি আরও মানুষ সচেতন হন, তা হলে জীবজগতের মঙ্গল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy