Advertisement
E-Paper

গাছ থেকে জালে ঝাঁপ চিতাবাঘের

গ্রামের মধ্যেখানে বাঁশঝাড়ের পাশে একটি লামপাতি গাছ। রবিবার সকালে ওই গাছের নীচেই গরু বাঁধতে এসেছিলেন দীপক সরকার। গাছের ডালে নাগাড়ে কাকের ডাক শুনে মুখ তুলতেই, চমকে ওঠেন তিনি। পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে হলুদ ডোরাকাটা। কোনওরকমে সামলে নিয়ে চিৎকার শুরু করেন তিনি। চিৎকার শুনে চিতাবাঘটিও উঁচু ডালে চড়ে বসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৫
জাল-বন্দি চিতাবাঘ নিয়ে যাচ্ছেন বনকর্মীরা। ছবিটি তুলেছেন রাজু সাহা।

জাল-বন্দি চিতাবাঘ নিয়ে যাচ্ছেন বনকর্মীরা। ছবিটি তুলেছেন রাজু সাহা।

গ্রামের মধ্যেখানে বাঁশঝাড়ের পাশে একটি লামপাতি গাছ। রবিবার সকালে ওই গাছের নীচেই গরু বাঁধতে এসেছিলেন দীপক সরকার। গাছের ডালে নাগাড়ে কাকের ডাক শুনে মুখ তুলতেই, চমকে ওঠেন তিনি। পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে হলুদ ডোরাকাটা। কোনওরকমে সামলে নিয়ে চিৎকার শুরু করেন তিনি। চিৎকার শুনে চিতাবাঘটিও উঁচু ডালে চড়ে বসে। গাছের নীচে হাজারখানেক বাসিন্দা চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিলেও সকাল থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত এ ডাল, সে ডাল করে বেরিয়েছে চিতাবাঘটি। রবিবার সকালে এমনই ঘটেছে ডুয়ার্সের কুমারগ্রাম ব্লকের ছোট দলদলি গ্রামে। বিকেল চারটে নাগাদ অবশ্য চিতাবাঘটি ‘স্বেচ্ছায়’ গাছের ডাল থেকে লাফ দিলে, নীচে পেতে রাখা জালে সেটিকে জড়িয়ে বনকর্মীরা জঙ্গলে ফিরিয়ে দেয়।

গত কয়েকদিন ধরেই গ্রামে চিতাবাঘের হানা শুরু হয়েছিল বলে গ্রামবাসীরা জানান। শনিবার রাতে দু’টো নাগাদ পোষা মুরগিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায় গ্কামের বাসিন্দা নিরঞ্জন বিশ্বাসের। পাশের ঘরে বাক্সে মুরগি রাখা। সেই ঘরের সামনের বারান্দার আলো জ্বালাতেই, ঘরের ভিতরে চিতাবাঘ দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন তিনি। চলে আসেন পড়শিরাও। তার আগেই অবশ্য মুখে মুরগি নিয়ে ছুট লাগায় চিতাবাঘটি। রাত দু’টো নাগাদ এই ঘটনার পরে এ দিন সকাল দশটায় চিতাবাঘটিকে লামপাতি গাছের উপরে দেখতে পান বাসিন্দারা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রী চিতাবাঘটির আনুমানিক বয়স তিন বছর।

গাছের ডালে বাঘ উঠে বসেছে খবর পেয়েই, নীচে বাসিন্দাদের ভিড় জমতে শুরু করে। চেঁচামেচিতে চিতাবাঘটি ঘাবনে গিয়ে এক ডাল থেকে অন্যডালে যেতেই বাসিন্দারা তুমুল চিৎকার শুরু করে, কেউ কেউ নীচ থেকে ঢিলও ছোঁড়ে। ঘটনাস্থলে থাকা বনকর্মীরাও চিতাবাঘটিকে কী ভাবে নীচে নামাবেন তা ভাবতে থাকেন। দুপুরের পরে গাছের চারপাশে জাল বিছিয়ে দেয় বনকর্মীরা। উপস্থিত বন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকও। চলে আসে কুমারগ্রাম থানার পুলিশও। চিতাবাঘটিকে গাছ থেকে নামাতে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোঁড়ারও প্রস্তুতি নেয় বনকর্মীরা। গাছটিকে ঝাঁকুনিও দেওয়া হয় বেশ কয়েকবার। কিছুতেই চিতাবাঘটিকে নামানো যায়নি। প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গাছে লাফালাফি করার পরে, বিকেল চারটে নাগাদ নিজেই গাছ থেকে লাফ দেয় চিতাবাঘটি। বিছিয়ে রাখা জালে পড়ার পরে সেটিকে বেঁধে জয়ন্তীর জঙ্গলে ছেড়ে দেন বনকর্মীরা।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে কুমারগ্রামের শিসা বাড়ি, মারাখাতা ও ছোটদলদলি গ্রামে চিতাবাঘ প্রতিরাতে হানা দিচ্ছিল। গত চার দিনে অন্তত সাতটি ছাগল ও কুড়িটা মুরগি মেরে খেয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। গত শনিবার সন্ধ্যায় চিতাবাঘটিকে ধরতে ছাগলের টোপ দিয়ে খাঁচাও পাতে বন দফতর। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের (পূর্ব) উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা ভাস্কর জেভি বলেন, “কয়েকদিন ধরে চিতাবাঘটিকে ধরার চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। খাঁচাও পাতা হয়েছিল। এ দিন চিতাবাঘটি গাছে উঠে পড়ে। পরে চিতাবাঘটিকে এদিনই জয়ন্তীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

leopard
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy