Advertisement
E-Paper

সুন্দরবনে বাড়তি নুনে দুর্দিন বাঘেদের

খাবারের ঘোর অনটন। আপন বাসভূমি সুন্দরবনে তাই বাঘেদের অস্তিত্বসঙ্কট। চোরাশিকারের সমস্যা আছে। তবে সেটা বাঘের দুর্দিনের মূল কারণ নয়। বাঘের সাম্রাজ্য জবরদখল করার মতো কেউ হাজির হয়েছে, এমনও নয়। আসলে বাঘের বিপদ ডেকে এনেছে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের দ্রুত পরিবর্তন। মাটিতে নুনের ভাগ বাড়তে থাকায় মধ্য সুন্দরবনে বাঘের খাদ্যশৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫১
শিল্পী সনাতন দিন্দার জীবন্ত ক্যানভাস। বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে বুধবার ভারতীয় জাদুঘরে। ছবি: দেবাশিস রায়।

শিল্পী সনাতন দিন্দার জীবন্ত ক্যানভাস। বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে বুধবার ভারতীয় জাদুঘরে। ছবি: দেবাশিস রায়।

খাবারের ঘোর অনটন। আপন বাসভূমি সুন্দরবনে তাই বাঘেদের অস্তিত্বসঙ্কট।

চোরাশিকারের সমস্যা আছে। তবে সেটা বাঘের দুর্দিনের মূল কারণ নয়। বাঘের সাম্রাজ্য জবরদখল করার মতো কেউ হাজির হয়েছে, এমনও নয়। আসলে বাঘের বিপদ ডেকে এনেছে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের দ্রুত পরিবর্তন। মাটিতে নুনের ভাগ বাড়তে থাকায় মধ্য সুন্দরবনে বাঘের খাদ্যশৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেটাই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আদত বাসভূমিতে তাদের দুঃসময় ঘনিয়ে আনছে বলে জানাচ্ছেন সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বা সংরক্ষিত জীবমণ্ডলের অধিকর্তা প্রদীপ ব্যাস।

বুধবার, আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে প্রদীপবাবু জানান, যে-ভাবে সুন্দরবনের মাটিতে নুনের পরিমাণ বাড়ছে, তা রীতিমতো ভয়ের। বিশেষ করে মধ্য সুন্দরবনের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে। সুন্দরী গাছ এবং কেওড়া গাছের মতো যে-সব ম্যানগ্রোভ বেশি নুন সহ্য করতে পারে না, সেগুলি হয় আকারে ছোট হয়ে যাচ্ছে অথবা মরে যাচ্ছে। বিপাকে পড়ছে এই জাতীয় বেশ কিছু গাছ ও তৃণজাতীয় উদ্ভিদ, যেগুলি হরিণের খাদ্য। আর খাবারের অভাবে দ্রুত কমছে হরিণের সংখ্যা। বাঘ তা হলে পেট ভরাবে কী দিয়ে!

মধ্য সুন্দরবনের জমিতে এমন দ্রুত হারে নুনের পরিমাণ বাড়ছে কেন?

এ দিনের অনুষ্ঠানে বক্তাদের কেউ কেউ সুন্দরবনে মিষ্টি জলের প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁরা মাতলা ও বিদ্যাধরী নদীর উৎসমুখ হারিয়ে যাওয়ার উল্লেখ করে বলেন, ওই সব নদী আগে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মিষ্টি জল বয়ে নিয়ে যেত সুন্দরবনে। কিন্তু তথাকথিত ‘উন্নয়ন’-এর কাছে নদী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হওয়ায় মিষ্টি জলের সেই পথটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই পথে এখন আর পর্যাপ্ত মিষ্টি জল পৌঁছয় না মধ্য সুন্দরবনে। বক্তাদের অনেকে আবার আঙুল তুলছেন বিশ্ব উষ্ণায়নের দিকে। কেউ কেউ বলছেন বাঘের বাসস্থান দ্রুত হাতবদলের কথাও।

এর মধ্যে কোন কারণটা সুন্দরবনের বেশি ক্ষতি করছে?

সংরক্ষিত জীবমণ্ডলের অধিকর্তা জানাচ্ছেন, মধ্য সুন্দরবনের এই হাল মূলত দু’টি কারণে।

মাতলা ও বিদ্যাধরীর করুণ অবস্থা।

বিশ্ব উষ্ণায়ন।

অধিকর্তা প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘মাতলা আর বিদ্যাধরী নদীতে যে-জল রয়েছে, তা সমুদ্রের নোনা জল। তাই জোয়ারের সময় সেই জল যখন বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভিজিয়ে দিচ্ছে, তখন মাটিতে গিয়ে মিশছে নুন।’’

কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে সুন্দরবনের মাটিতে নুনের পরিমাণ বাড়তে থাকার সম্পর্ক কী?

প্রদীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সুন্দরবনের লাগোয়া সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের তাপমাত্রা দ্রুত হারে বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়লে জলে নুনের পরিমাণও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত নোনা জল জোয়ারের সময় মাটি ভিজিয়ে দিতে থাকলে সেখানে নুনের অধঃক্ষেপ পড়ে। মাটিতে নুনের ভাগ বেড়ে যায়।’’

সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কী ভাবে এই সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলবে, সেই পথ বাতলাতে পারছেন না বন দফতরের কর্তারা। তবে অসমের বন্যপ্রাণপ্রেমী পার্বতী বড়ুয়া কিংবা অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর সুপারিশ, জঙ্গলে মানুষের আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ করাটাই সব থেকে বড় দাওয়াই। বাঘের বাসস্থানে যে মানুষের কোনও জায়গা নেই, সেই বিষয়টিই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ওই দুই প্রকৃতিপ্রেমী। উত্তরাখণ্ডের করবেট ন্যাশনাল পার্কের অধিকর্তা সমীর সিংহ আবার পরিবেশ-পর্যটনের বাড়াবাড়ি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এমন ভাবে পর্যটকেরা নিজেদের শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন যে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কাজটাই ব্যাহত হচ্ছে। তাই পরিবেশ-পর্যটন নিয়ে নির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের দাবিও উঠেছে বুধবার বাঘ দিবসের সভায়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy