তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। আমেরিকা তখনও এত আধুনিক হয়নি। মেয়েদের ভোটাধিকার ছিল না সে সময়ের মার্কিন মুলুকে। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজটা কোনও কৃষ্ণাঙ্গের হবে, সে তো ভাবাই যেত না সে সব দিনে।
সালটা ১৯১৬। ইতিহাসের পাতায় বেশ বড়সড় বিবরণই পাওয়া যায় সেই যুগটার। তাই বুটলার, আন্ডারউড আর রুথকে এখন জলজ্যান্ত ইতিহাসই বলছে ওয়াশিংটন। ১০০টা বসন্ত পার করেও ফি রোববার বিকেলে আড্ডা মারতে যান তিন জন। এই আড্ডা কিন্তু এক শতাব্দী ধরেই চলছে। তিন কন্যের আশপাশটা কত বদলে গেল। রাস্তাঘাট, যানবাহন, পোশাক-আশাক, জীবনযাত্রা হু হু করে পাল্টে গেল। এমন আকাশ-পাতাল পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেও বন্ধুত্বের রুটিনে কোনও বদল ঘটনে দেননি তাঁরা।
রুটিনে সামান্য একটু গোলমাল ঘটিয়ে দিয়ে গিয়েছেন বার্নেস। শতায়ু বান্ধবীদের এই দলে সদস্যসংখ্যা চার ছিল। এই মুহূর্তে সেটা ‘তিন’, কারণ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র দু’পা দূরে জীবনের গতিপথ শেষ হয়ে গিয়েছে তাঁদের আরও এক বান্ধবী লিওনা বার্নেসের।
দক্ষিণ পশ্চিম ওয়াশিংটনের বাসিন্দা বার্নেস, বুটলার, আন্ডারউড এবং রুথ হ্যামেট। চার জনেরই জন্ম ১৯১৬ সালের জুন ও জুলাই মাসের মধ্যে। ছোট থেকেই খুব ভাল বন্ধু ছিলেন চার জন। বড় হয়ে তাঁরা যাঁর যাঁর নিজের পছন্দ মতো জীবিকা বেছে নেন। বিয়ে করে সংসারীও হন। কিন্তু বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে দেননি এক মুহূর্তের জন্যও। এমন কি এঁদের মধ্যে তিন জন একই বছরে (১৯৩৩) মা হন।
১০০ বছরের চৌকাঠ পেরিয়ে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী নিয়ে এখন ভরা সংসার তিন বান্ধবীর। হ্যামেটের ছোট ছেলে ভার্ননের বয়স এখন ৬০। মায়ের শতবর্ষ উদযাপনের দিন জানালেন মায়ের বন্ধুদের কথা। বললেন, ‘‘মায়ের বান্ধবীরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছে অত্যন্ত স্পেশাল। ওঁদের তুলনা নেই।’’ শুধু তাই নয় জানালেন, বান্ধবীদের সম্বন্ধে মা রুথ হ্যামেট নাকি সবসময় তাঁকে বলেন, তাঁর বন্ধুরা সবসময় তাঁর কাছে সন্তানের মতো।
আরও খবর: ৬৩ বছর বয়সে মিস বামবাম হতে চান এলিজা
সদ্য ১০০-এ পা রাখা বুটলার জানান, যখন তাঁরা জন্মেছিলেন তখন আমেরিকায় মেয়েদের ভোটাধিকার ছিল না। কখনও তিনি ভাবেননি যে কোনও দিন একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পাবে আমেরিকা।
শনিবার ওয়াশিংটনের ‘জিওন ব্যপটিস্ট চার্চ’-এর আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সম্বর্ধনা জানানো হল একশ’র চৌকাঠ পেরনো এই তিন বাল্যবন্ধুকে। তিন বান্ধবীর সুস্থ ও সুন্দর জীবন কামনা করে গাওয়া হয় প্রার্থনা সঙ্গীতও। ফুল আর উপহারে ভরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।
এক শতক পথ পেরিয়ে এসে আজও তাঁরা বেঁচে রয়েছেন একে অপরকে সঙ্গী করেই। শুধু মনে একটাই দুঃখ, ১০০ ছোঁয়ার আগেই হারাতে হয়েছে অত্যন্ত প্রিয় বার্নেসকে। ৯০ মিনিটের অনুষ্ঠানে তিন বন্ধু অবশ্য একবারও কাছছাড়া করেননি বার্নেসের ছবি। জানিয়েছেন, এখনও রোজ তাঁরা ফোনে গল্পগুজব করেন। আর রবিবার মানেই অতিরিক্ত এক টুকরো আনন্দ। রবিবার বিকেলে তিনজনেই চলে আসেন এই চার্চে। দেদার আড্ডার পর সূর্য ডুবু ডুবু হলে বাড়ির পথ ধরেন। কিন্তু পরের রবিবার আবার দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং আদায় করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy