Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কর্নিক হাতে নিয়ে স্বপ্নের উড়ানে গুরুবারি

গত সপ্তাহে বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপি সদস্য তুইমাবাড়াডি গ্রামের গুরুবারিদেবী। তুমড়াশোল পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে শৌচালয় নির্মাণ করেন দুই সন্তানের জননী গুরুবারি এবং গ্রামের মহিলাদের একটি দল।

ইট-সাজিয়ে: কাজে ব্যস্ত গুরুবারি মাণ্ডি। নিজস্ব চিত্র

ইট-সাজিয়ে: কাজে ব্যস্ত গুরুবারি মাণ্ডি। নিজস্ব চিত্র

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
বরাবাজার শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:৩৮
Share: Save:

বধূ থেকে রাজমিস্ত্রি। তার পরে ভোট-রণাঙ্গনে। ভোট-যুদ্ধে জেতার পরে এখন তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। স্বপ্নের ‘ট্র্যাকে’ দৌড়চ্ছেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের তুমড়াশোল পঞ্চায়েতের গুরুবারি মাণ্ডি। ক্রমশ বাড়ছে তাঁর কাজের পরিসর।

গত সপ্তাহে বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপি সদস্য তুইমাবাড়াডি গ্রামের গুরুবারিদেবী। তুমড়াশোল পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে শৌচালয় নির্মাণ করেন দুই সন্তানের জননী গুরুবারি এবং গ্রামের মহিলাদের একটি দল। গত কয়েক বছরে দলের সদস্য বেড়েছে। রোজই গাঁইতি, শাবল, কর্নিক হাতে তাঁদের দেখা যায় কোনও না কোনও গ্রামে। ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে নির্মাণ করছেন একের পরে এক শৌচালয়। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে দায়িত্ব বেড়েছে গুরুবারিদেবীর। ঘরের কাজ এবং পেশা সামলে সরকারি কাজ করবেন কী করে?

বছর বত্রিশের গুরুবারির প্রত্যয়ী জবাব, ‘‘যে রাঁধে সে চুল-ও বাঁধে। সকালে ঘরের কাজ সেরে বেরিয়ে পড়ব রাজমিস্ত্রির কাজে। তার পরে পঞ্চায়েত সমিতির কাজ করব। অসুবিধা হবে না।’’ রাজনীতিতে এসেছেন সমাজসেবার টানে। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। বিজেপি দলটাকে ভাল লাগে। তাই বিজেপি নির্বাচনে লড়তে বললে রাজি হয়ে যাই। মানুষের কাজ করব, এই ভাবনা থেকেই রাজনীতিতে এসেছি।’’ খুশি তাঁর স্বামী রূপসিং মান্ডিও। তাঁর কথায়, ‘‘ও সমাজসেবা করতে চায়। সেই কারণেই রাজনীতিতে এসেছে। ওকে সহসভাপতি করায় আমি খুশি। কাজের আরও আগ্রহ পাবে।’’

গুরুবারিকে সহকারী হিসেবে পেয়ে খুশি বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রামজীবন মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটি খুব পরিশ্রমী। ওর কাজ করার ইচ্ছা প্রবল। ওর মতো মহিলাদের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন।’’

গুরুবারিদেবীর স্বামীও রাজমিস্ত্রি। তাই কাজ শিখতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি তাঁর। তাঁর মতো ওই এলাকার শিখা সিং সর্দার, জ্বলেশ্বরী হাসদা, রূপসানা বিবি, শিখারানি মাহাতো, সোনামণি সরেনের মতো বেশ কয়েকজন এখন রাজমিস্ত্রির কাজে যুক্ত। ব্লক প্রশাসন সূত্রের দাবি, গত কয়েক মাসে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে প্রায় ১,৩০০ শৌচালয় তৈরি করেছেন ওই মহিলারা।

মহিলারা হাতে কর্নিক ধরলে গ্রামের যাঁরা এক সময় চোখ কুঁচকোতেন, এখন তাঁরাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মহিলাদের এই কাজ প্রচারে আনতে পুরুলিয়ার বরাবাজার ব্লক প্রশাসন তৈরি করেছে একটি ভিডিয়ো। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘উড়ান’। ইতিমধ্যেই ভিডিয়োটি আপলোড করা হয়েছে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য়। শনিবার গুরুবারি-সহ মহিলা রাজমিস্ত্রির গোটা দলটিকে পুরস্কার দিয়েছে প্রশাসন।

ব্লক প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, রাজমিস্ত্রির কাজে দক্ষ করে তুলতে ২০ জন মহিলাকে বেছে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই সংস্থার কো-অর্ডিনেটর চিন্তামণি কুমারের কথায়, ‘‘গ্রামের অনেকেই ওই মহিলাদের কাজ করতে দিতেন না। কাজ বন্ধ করে দিতেন। এখন ওই মহিলারা শৌচালয় তৈরির কাজ করে প্রতি মাসে আট-ন’হাজার টাকা রোজগার করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barabazar Purulia Woman Mason
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE