উদ্যোগ: আজ, শুক্রবার বিশ্ব এডস দিবস। সেই উপলক্ষে খুদেদের কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার, হাওড়ার বাজেকদমতলা ঘাটে। —নিজস্ব চিত্র।
মায়ের দুধে বাধা নয় এইচআইভি-ও!
এ বছর বিশ্ব এডস দিবসে তা নিয়েই মায়েদের সতর্ক করতে উদ্যোগী হয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
‘ন্যাশনাল এডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’-এর একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ফি বছর এ দেশে প্রায় ২৯ লক্ষ মহিলা সন্তানধারণ করেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার মহিলা এইচআইভি পজিটিভ। অধিকাংশ শিশু গর্ভে থাকাকালীন অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি শুরু হয় না। ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সদ্যোজাতদের অনেক বেশি থাকে।
এইচআইভি পজিটিভ মায়েরা বেশির ভাগ সময়ে সন্তানকে স্তন্যপান করাতে ভয় পান। তাঁদের দেহের ভাইরাস যেন সন্তানের শরীরে বাসা না বাঁধে, তা নিশ্চিত করতে চান অধিকাংশই। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, তাঁদের মতে সদ্যোজাতের বড় হয়ে ওঠায় মায়ের দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও তাঁরা মানছেন যে, মায়ের দেহে এইচআইভি বাসা বাঁধলে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।
স্ত্রীরোগ এবং শিশুরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শিশুর জন্মের পরে যদি জানা যায় যে তার মা এইচআইভি পজিটিভ, তবেও সে মায়ের দুধ খেতে পারে। তাঁদের যুক্তি, জন্মের পরে কিছু ওষুধের সাহায্যে শিশুকে এইচআইভি-র প্রকোপ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাইরে থেকে কোনও ওষুধের সাহায্যে মায়ের দুধের উপকারিতা পূর্ণ করা সম্ভব নয়। শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক মাসে পুষ্টির প্রধান উৎসই মায়ের দুধ। দেহের প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা কিংবা মস্তিষ্কের গঠনে প্রোটিন হিসেবে কাজ করে প্রধানত মায়ের বুকের দুধই। কৃত্রিম উপায়ে তা পূর্ণ করা অসম্ভব।
আরও পড়ুন: কী ভাবে বিষ পেলেন প্রালজাক, তদন্ত শুরু
এ প্রসঙ্গে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এইচআইভি পজিটিভ মায়ের দেহ থেকে শিশুর দেহে ভাইরাস যেতে পারে ভার্টিকাল ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে। অর্থাৎ, গর্ভে ভ্রূণ থেকে শরীর গঠনের সময়ে মায়ের রক্ত থেকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সন্তান প্রসবের সময়েও কিছুটা ঝুঁকি থাকে সদ্যোজাতের। স্তন্যপানের সময়েও যে ঝুঁকি একেবারে থাকে না, তা নয়। কিন্তু সেই ঝুঁকির তুলনায় স্তন্যপানের উপকারিতা অনেকটাই বেশি। ফলে এইচআইভি পজিটিভ মায়েদেরও সন্তানকে স্তন্যপান করাতেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘শিশুর বেড়ে ওঠায় ‘মিক্সড ফি়ড’ ক্ষতিকর। অর্থাৎ, কিছুটা স্তন্যপান আবার কিছুটা কৃত্রিম দুধ, শিশুর শরীরের পক্ষে খারাপ। এ দিকে, শুধু কৃত্রিম দুধ খাওয়ালে অপুষ্টি-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। ফলে এইচআইভি পজিটিভ মায়েরা বুকের দুধের উপকারিতার কথা মাথায় রেখে সন্তানদের স্তন্যপান করাতেই পারেন।’’
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় যদি ধরা পড়ে যে মা এইচআইভি পজিটিভ, তবে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয়। গর্ভস্থ শিশুর এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি। কিন্তু সেই পরীক্ষা না হলে স্তন্যপানের সময়ে সন্তানের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পাঁচ শতাংশ বেড়ে যায় বলে জানালেন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক বিভূতি সাহা। তবে তার পরেও তাঁর পরামর্শ, মায়ের দুধ বাদ না দেওয়াই ভাল। কারণ, সেটি সব চেয়ে জরুরি।
বিভূতিবাবুর কথায়, ‘‘এইচআইভি আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা যায় না। চিকিৎসা চলে আজীবন। তাই মায়ের থেকে সন্তানের দেহে ভাইরাস আক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘ সময় ধরেই চিকিৎসা চালাতে হবে। গর্ভস্থ অবস্থায় সেই চিকিৎসা শুরু হলে ঝুঁকি কমে। কিন্তু সচেতনতা বাড়লেই রোগের দাপট কিছুটা কমানো যেতে পারে। অনেক সময়ে গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা শুরু হয় না। কিন্তু তার পরেও মা সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারেন। কারণ, বাইরে থেকে ওষুধের মাধ্যমে এইচআইভি-র ঝুঁকি কমানো গেলেও স্তন্যপানের বিকল্প হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy