দুরন্ত: তরুণ শাস্ত্রী। ব্যাট হাতে যিনি দশ নম্বর থেকে উত্তীর্ণ একে।
সে ছিল অন্য সময়ের ক্রিকেট। যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেলে মুখোমুখি হতে হত অগ্নিযুগের চার ফাস্ট বোলারের। পাকিস্তানে গেলে অপেক্ষা করতেন ইমরান খান, সরফরাজ় নওয়াজ়েরা। সেই যুগে কুড়ি বছর বয়সে অগ্নিপরীক্ষা দেওয়া এক ক্রিকেটারের স্মৃতিচারণে ফিরে আসছে আশির দশকের অমর ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সাঁইত্রিশ বছর আগে এই দিনটাতেই (২৯ এপ্রিল) সেন্ট জনস অ্যান্টিগায় সেঞ্চুরি করেছিলেন রবি শাস্ত্রী। এখন যিনি বিরাট কোহালিদের হেড কোচ। প্রতিপক্ষ বোলারেরা? অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, উইন্সটন ডেভিস।
শাস্ত্রী তার কয়েক দিন আগেই দশ নম্বর থেকে উত্তীর্ণ হতে হতে ওপেনার হিসেবে সেঞ্চুরি করে এসেছেন করাচিতে। সেখানে খেলেছেন ইমরান, সরফরাজ়দের। এর পরে ক্যারিবিয়ান চ্যালেঞ্জ। অ্যান্টিগায় ছ’নম্বরে নেমে ১০২ করার স্মৃতি নিয়ে জিজ্ঞেস করায় বললেন, ‘‘কুড়ি বছর বয়স ছিল আমার তখন। ওই বয়সে যে সেরা ফাস্ট বোলারদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পেরেছিলাম, এটা ভেবেই তৃপ্তি হয়।’’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং আক্রমণ সেই সময় বিশ্বত্রাস। মনের মধ্যে কী চলছিল? শাস্ত্রীর জবাব, ‘‘সাহস নিয়ে ওদের সামনে দাঁড়াতে হবে। এটাই ভেবেছিলাম।’’ তখন ক্রিকেট পৃথিবীতে কথিত ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলারেরার হয় তোমার উইকেট নেবে নয়তো রক্তাক্ত করে মাঠ থেকে বার করবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে এর পরেও টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন শাস্ত্রী। ব্রিজটাউন গায়ানায় করেন ১০৭। সেখানে ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারি ছিল এ রকম— মার্শাল, অ্যামব্রোজ, ওয়ালশ, বিশপ। যদিও তিরাশির সেই সফর শাস্ত্রীর স্মৃতিতে বেশি আবেগপূর্ণ হয়ে থেকে যাবে। এর পরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে গিয়ে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ জেতেন কপিলের দৈত্যরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের স্মৃতি কী জানতে চাওয়ায় কোহালিদের এখনকার হেড কোচ বললেন, ‘‘সম্ভবত ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমার জীবনের প্রথম বলেই ভিভ রিচার্ডসকে আউট করেছিলাম। সেই সফরে বোলার হিসেবে রিচার্ডস, লয়েড, গ্রিনিজ প্রত্যেককেই আমি আউট করেছিলাম। অ্যান্টিগার সেঞ্চুরির পাশাপাশি সেটাও আমার মনে থাকবে কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের তখন যেমন দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার ছিল তেমনই ছিল অপ্রতিরোধ্য সব আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান।’’
তেমনই পাকিস্তানে গেলে জ়াহির আব্বাসের উইকেট ছিল সব ভারতীয় বোলারের স্বপ্নের শিকার। ‘‘জ়াহির ব্যাট ধরলেই ভারতের বিরুদ্ধে বড় রান করত। তাই জ়াহিরের উইকেট ছিল স্পেশ্যাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেলে তেমনই রিচার্ডস, লয়েড, গ্রিনিজ, হেনেস।’’ দুর্ধর্ষ সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের বিরুদ্ধে সাফল্যের দিকে ফিরে তাকিয়ে সাঁইত্রিশ বছর পরে কী মনে হচ্ছে? এ বার চিরাচরিত শাস্ত্রীয় ভঙ্গিতে ঠোঁটকাটা জবাব, ‘‘দেখে ভাল লাগছে যে, সেরা বোলারদের বিরুদ্ধে একটু-আধটু ব্যাটিং করতে পেরেছিলাম। আর সেরা সব ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে মোটামুটি দরের বোলিং করতে পেরেছিলাম।’’ দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘আর এমন একটা সময়ে যখন ওভার প্রতি মাত্র ছ’টা বাউন্সার দেওয়ার নিয়ম ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারেরা সেই আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করত।’’ বিরাটদের কোচ হিসেবে যে তাঁর মুখ থেকে বার বার ভয়ডরহীন ক্রিকেটের কথা শোনা যায়, কোথা থেকে তার উৎপত্তি, বুঝতে অসুবিধা হয় না।
আরও পড়ুন: দুর্দান্ত অ্যাকশন, ভাল ছন্দ, দেশের হয়ে নিশ্চিত ভাবেই খেলবে অর্জুন, মত বিশ্বকাপজয়ী পেসারের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy