স্বপ্নপূরণ: কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনে অনন্য নজির গড়ার পরে ভারতের মীরাবাই চানুর উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার গোল্ড কোস্টে। ছবি: পিটিআই
প্রশ্ন: এ রকম সাফল্যের পরেও কাঁদছেন? ভারোত্তোলনের সোনা জয়ী কাঁদছেন, সচরাচর দেখা যায় না।
চানু: কাঁদব না! রিও অলিম্পিক্সে ব্যর্থ হয়ে ফেরার পরে আমাকে এবং কোচ বিজয় শর্মাকে যে ভাবে বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছিল, সেটা ভাবলেই কান্না পায়। কী ভাবে হেনস্থা হতে হয়েছিল, বলে বোঝাতে পারব না। প্রচণ্ড পরিশ্রম করে রিও গিয়েছিলাম। তার পরও কেন আসল সময় মনঃসংযোগ হারিয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থ হলাম, সেই ব্যাখ্যা আমার কাছে আজও নেই।
প্রশ্ন: তার পর?
চানু: ভেবেছিলাম আর কোনও প্রতিযোগিতায় নামব না। রেলের চাকরি এবং পদ্মশ্রী তো পেয়ে গিয়েছি। মনে হচ্ছিল, অবসর নিয়ে নিই। সারাদিন পাতিয়ালার সাইয়ে থাকতাম। অনুশীলন করতাম আর অন্ধকার ঘরে বসে থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কোচ, মা-বাবা সবাই এসে বোঝাতো। বলত, ‘তোর বয়স মাত্র ২১। সারা জীবন পড়ে আছে। প্রচুর টুর্নামেন্ট আছে সামনে। আবারও অলিম্পিক্সে নামার সুযোগ আসবে। ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনও মানে হয় না।’ আজকের সোনা, রেকর্ড সব কিছুই তাই ওঁদেরই উৎসর্গ করছি। সেই সময় ওঁরা উৎসাহ না দিলে আজকের এই সাফল্য পেতাম না।
প্রশ্ন: আপনার কোচ বলছিলেন, গ্লাসগো কমনওয়েলথে রুপো পাওয়ার পর আপনি নাকি গত চার বছর মণিপুরের বাড়িতে যাননি। একদিনের জন্যও অনুশীলন নষ্ট করেননি। এই দাবি কতটা ঠিক?
চানু: গত চার বছর পাতিয়ালার শিবির ছেড়ে মণিপুরের যাইনি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে সাত দিন শুধু বিশ্রাম নিয়েছিলাম। তার বাইরে এমন একটা দিন নেই যে আমি অনুশীলনে নামিনি। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি— দিনে তিন বার অনুশীলনে নেমেছি। পরিশ্রমের মূল্য পেয়েছি।
আরও পড়ুন: প্রথম দিনে দুই পদক, এগোচ্ছেন সাইনারা
প্রশ্ন: বৃহস্পতিবার সকালে যখন গেমস ভিলেজ থেকে কারারা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আসছিলেন, তখন ভেবেছিলেন সোনা পাবেন?
চানু: গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পরে যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তাতে সোনা পাব নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু এ রকম একটা রেকর্ড হবে ভাবিনি। স্বপ্নেও ভাবিনি। (হেসে) নিজের ওজনের দু’গুণ ওজন তুলেছি। নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না।
প্রশ্ন: যখন স্কোরবোর্ডে দেখলেন সোনা জিতেছেন, অবিশ্বাস্য রেকর্ডও গড়েছেন, তখন প্রথম কার কথা মনে হল?
চানু: একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আমার কোচের মুখটা দেখলাম। আর মেরি কম দিদি-র কথা মনে পড়ল। বুধবার রাতে গেমস ভিলেজে আমার সঙ্গে মেরি দিদির দেখা হয়েছিল। আমার সঙ্গে ছবি তুললেন। উনি আমাকে বলেছিলেন, ‘সোনা জিততে হবেই এটা মাথায় রেখে যেও। রিও-তে পারোনি, এ বার তুমি পারবে।’ মেরি দিদি তো আমাদের রাজ্যের সব চেয়ে সম্মানীয় ক্রীড়াবিদ।
প্রশ্ন: উইকিপিডিয়াতে আপনার সম্পর্কে সেই অর্থে কোনও তথ্য নেই। কী ভাবে বেড়ে উঠলেন, কোথায় থাকেন? পরিবারে কে আছেন?
চানু: আমাদের বাড়ি ইম্ফল থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের নাম নোভটোক। তিন বোন, দুই ভাই। আমি সবার ছোট। ২০০৭ সালে মণিপুরের ভারোত্তোলন সেন্টারে প্রথম প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি। বারো বছরের মেয়ের শরীরিক গঠন দেখে কোচেরা আমাকে নিয়ে নেন।
প্রশ্ন: আপনাদের সঙ্গে কি ফিজিয়ো নিতে দেওয়া হয়নি?
চানু: বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সংগঠকরা ভিলেজে ফিজিয়ো নিয়ে যেতে দেননি। ফলে পেশির চিকিৎসা ঠিক করে হয়নি। আমরা একে অন্যকে সাহায্য করে সমস্যা মিটিয়েছি।
প্রশ্ন: আপনার পরের লক্ষ্য?
চানু: সামনের এশিয়ান গেমসেও পদক জেতা। সেখানে চিন, তাইল্যান্ডের মতো দেশ থাকবে। পদক পেতে তাই আরও পরিশ্রম করতে হবে। তার পরে তো ২০২০ টোকিও অলিম্পিক্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy