কুশল মেন্ডিস: দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৬।
শ্রীলঙ্কার টেস্ট ইতিহাসে এক সোনালি অধ্যায় লিখে দিলেন দুই নায়ক। এক জন, আটত্রিশের সাদা চুলের স্পিনার। অন্য জন, একুশের তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
রঙ্গনা হেরাথ এবং কুশল মেন্ডিস। প্রথম জন দু’ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন ন’টা উইকেট। দ্বিতীয় জনের ১৭৬ রানের ইনিংস তার আগে তৈরি করে দিয়েছে ঐতিহাসিক জয়ের ভিত।
শনিবারের পাল্লেকেলে বাদ দিলে ১৯৯৯-এর ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম এবং শেষ বার অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট ম্যাচে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ক্যান্ডির সেই ঐতিহাসিক টেস্টে খেলেছিলেন অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুন রণতুঙ্গা, সনৎ জয়সূর্য, মাহেলা জয়বর্ধনে, মুথাইয়া মুরলীধরন, চামিন্ডা ব্যাসের মতো সর্বকালের সেরা শ্রীলঙ্কানরা। সেই টেস্টের সঙ্গে পাল্লেকেলে টেস্টের প্রধান তফাত, শ্রীলঙ্কার দুই দলে। কুমার সঙ্গকারা এবং জয়বর্ধনের অবসরের পর এই শ্রীলঙ্কা টিম নতুন করে নিজেদের পরিচয় খুঁজতে ব্যস্ত। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সাতে নেমে যাওয়া যে টিম বিশ্বের এক নম্বর টিমকে হারিয়ে দিল ১০৬ রানে।
দুটো জয়ের মধ্যে একটা মিল যদিও থাকছে। সেই মিলের নামও রঙ্গনা হেরাথ। সতেরো বছর আগে ক্যান্ডির ড্রেসিংরুমে বসে টিমের জয় দেখেছিলেন আনকোরা একুশের এক তরুণ। গলে পরের টেস্টে তাঁর জাতীয় অভিষেক ঘটে। সেই হেরাথই এ দিন অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট তুলে নিয়ে তাঁর দেশকে নতুন ইতিহাস উপহার দিলেন।
পাল্লেকেলেতে সিরিজের প্রথম টেস্টের শেষ দিন নাটক কম ছিল না। জেতার জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১৮৫ রান। শ্রীলঙ্কার, সাত উইকেট। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ (৫৫) লড়ছিলেন, কিন্তু হেরাথ তাঁকেও তুলে নেওয়ার পরে মনে করা হচ্ছিল অস্ট্রেলীয় প্রতিরোধ শেষ। সেখান থেকে নবম উইকেটে অভাবনীয় জুটি গড়তে থাকেন পিটার নেভিল (১১৫ বলে ৯) এবং স্টিভ ও’কিফ (৯৮ বলে ৪)। ১৭৮ বল খেলে যে জুটি যোগ করে ৪ রান! একটা সময় টানা ১৫৪ বলে কোনও রানই আসেনি, টেস্ট ইতিহাসে যা রেকর্ড।
আবহাওয়ার আতঙ্ক, প্রায় নিশ্চিত ক্যাচের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়া, সব বাধা টপকে শ্রীলঙ্কাকে জয় এনে দেন হেরাথ। তাঁর ফ্লাইট, ধারাবাহিক নিখুঁত বোলিং এবং সূক্ষ্ম বৈচিত্র এক ওভারের জন্যও বিপক্ষকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। তার আগে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে মেন্ডিসের ১৭৬ না থাকলে প্রথম ইনিংসে ১১৭ অল আউট হয়ে যাওয়ার পরেও এ ভাবে ম্যাচে ফেরা সম্ভব হত না। সঙ্গে রয়েছে টেস্ট অভিষেকে চায়নাম্যান লক্ষ্মণ সান্দাকানের সাত উইকেট।
এই জয় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজকে বসিয়ে দিল সনৎ জয়সূর্যর পাশে, অস্ট্রেলিয়াকে হারানো শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের অতি-সংক্ষিপ্ত তালিকায়। অন্য দিকে স্টিভ ওয়ের সঙ্গে জুড়ে গেল স্মিথের নাম, শ্রীলঙ্কার কাছে হারার ‘নজিরে’। টেস্ট শেষে টিমের ব্যাটিংকে একহাত নেন স্মিথ। দ্বিতীয় ইনিংসে যাঁর ৫৫ টেস্টে তাঁর টিমের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ‘‘এই উইকেটে ২৬০-এর উপর রান তাড়া করা কঠিন হত। আমাদের ব্যাটিংয়ে শৃঙ্খলা ছিল না। কুশলের ১৭৬ ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট,’’ বলেন স্মিথ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা ১১৭ (লায়ন ৩-১২, হ্যাজলউড ৩-২১) ও ৩৫৩ (কুশল ১৭৬, স্টার্ক ৪-৮৪)। অস্ট্রেলিয়া ২০৩ (ভোগস ৪৭, হেরাথ ৪-৪৯, সান্দাকান ৪-৫৮) ও ১৬১ (স্মিথ ৫৫, হেরাথ ৫-৫৪)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy