Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বুমরা আর স্টার্কই কিন্তু আসল নায়ক

এটাও সত্যি যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মন্থর ব্যাটিং করার জন্য অনেকেই যখন ওর সমালোচনা করছিল, আমি ধোনির পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ধোনিকে সমর্থন করার কারণও আছে।

যশপ্রীত বুমরা এবং মিচেল স্টার্ক। ইনসেটে জেফ থমসন।

যশপ্রীত বুমরা এবং মিচেল স্টার্ক। ইনসেটে জেফ থমসন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:৫৬
Share: Save:

শুরু থেকেই আমি এম এস ধোনির এক জন সমর্থক। আমি এও বিশ্বাস করি, ধোনির মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার যে গুণ রয়েছে, সেটা এই দলের সাফল্যের পিছনে কাজ করছে। ধোনির থেকে ব্যাটনটা সফল ভাবে নিয়েছে বিরাট কোহালি। এবং, দু’জনে মিলে ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

এটাও সত্যি যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মন্থর ব্যাটিং করার জন্য অনেকেই যখন ওর সমালোচনা করছিল, আমি ধোনির পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ধোনিকে সমর্থন করার কারণও আছে। ভারতের নেট রান রেট কিন্তু অনেক দলের থেকেই ভাল। আর এই বিশ্বকাপে এখনও ওরা অল আউট হয়ে যায়নি। যে জন্য ধোনিকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। নেট রান রেট খারাপ হলে ভাগ্যে কী থাকতে পারে, সেটা তো পাকিস্তানকে দেখে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত, তীক্ষ্ণ ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের মালিক হওয়ার জন্যই ধোনি ওই ভাবে নিজের উইকেট বাঁচিয়ে রাখছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ধোনির ব্যাটিংটা আমাকেও ধন্দে ফেলেছে। ওই ম্যাচে ভারত আগে ব্যাট করছিল। এটা পরিষ্কার, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত গোটা তিরিশেক রান কম করেছিল। আর যে জন্য দায়ী ধোনির অদ্ভুত ব্যাটিং। এ তো সেই ধোনি নয় যাকে আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখেছি। ধোনিকে এই ভাবে সমস্যায় পড়তে দেখে বিশ্বের বাকি ক্রিকেট ভক্তদের মতো আমিও যথেষ্ট হতাশ হয়েছি।

এই ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া দুটো দলই কিন্তু নানা দিক দিয়ে প্রায় একই রকমের। ভারতীয় দল থেকে রোহিত শর্মা আর বিরাটকে সরিয়ে নিন আর অস্ট্রেলিয়া দল থেকে বাদ দিন অ্যারন ফিঞ্চ আর ডেভিড ওয়ার্নারকে। তা হলে দেখবেন, দুটো দলের ব্যাটিং শক্তিই খুব সাদামাঠা। কে এল রাহুল বা উসমান খোয়াজা— কেউই খুব একটা ভরসা দিতে পারছে না। স্টিভ স্মিথ আর ধোনি দু’জনেই সমস্যায় পড়ছে। কারণ দু’জনেই একটু সময় নেয় উইকেটে থিতু হতে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বা হার্দিক পাণ্ড্য— কেউই নিজেদের সেরা ফর্মের ধারেকাছে নেই। দুটো দলের মিডল অর্ডারই তাই সমস্যার জায়গা।

দুটো দলের স্পিনাররাই লাইন-লেংথ নিয়ে সমস্যায় পড়ছে। কুলদীপ যাদব আর অ্যাডাম জ়াম্পা, দু’জনেই হয় খুব শর্ট নয় তো ব্যাটের খুব কাছে বলটা ফেলছে। পেস বোলিং বিভাগে প্যাট কামিন্স হল অস্ট্রেলিয়ার উইকেট নেওয়ার অন্যতম অস্ত্র। অথচ ও উইকেট পাচ্ছে না। কিন্তু কামিন্সের মতো বোলারকে কখনওই বাইরে রাখা যায় না। ভারতের ভুবনেশ্বর কুমারকে নিয়েও একই কথা বলা যায়। আগের ম্যাচে শামি যখন ডেথ ওভারে প্রচুর রান দিচ্ছিল, তখন ভুবনেশ্বরের বোলিংটা দেখেছিলেন? দুরন্ত বোলিং করল। তাই শামি যতই উইকেট নিক না কেন, কোনও অধিনায়কই ভুবনেশ্বরকে বাইরে রাখতে চাইবে না।

অস্ট্রেলিয়ার জেসন বেহরেনডর্ফের বোলিং দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। মিচেল স্টার্কের জীবন ও কিছুটা সহজ করে দিয়েছে। ঠিক জায়গায় বলটা ফেলছে বেহরেনডর্ফ। গুড লেংথ স্পট থেকে বলটা বাউন্স করাচ্ছে। নক আউট পর্বে ও অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা অস্ত্র হয়ে উঠবে। বেহরেনডর্ফ ব্যাটসম্যানদের কোনও সুযোগই দিচ্ছে না আড়াআড়ি শট খেলার।

যে কোনও দলের লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা বোলারদের বিরুদ্ধে সাধারণত ক্রস ব্যাটে শট খেলতে ভালবাসে। অর্থাৎ মিড উইকেট বা লং অন অঞ্চল দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠানোর চেষ্টায় থাকে। তাই বোলারদের সতর্ক থাকতে হয় শেষের দিকে বল করার সময়। লেংথে বৈচিত্র, স্লো বল, স্লোয়ার বাউন্সার, ইয়র্কার, লো ফুলটস— এগুলো বোলারের তূণে অস্ত্র হতে পারে। পরের বলটা কী হতে পারে, এটা বুঝতে দিলে হবে না। এও মনে রাখতে হবে, প্রতি বলে ব্যাটসম্যানের মাথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আমার চোখে বুমরা এবং স্টার্ক হল দু’দলের দুই দলের দুই প্রধান অস্ত্র। একটা কথা জেনে রাখুন। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়াকে ওদের মহাতারকা ব্যাটসম্যানরা কিন্তু ম্যাচ জেতাচ্ছে না। ম্যাচ জেতাচ্ছে বোলাররা। আরও ভাল করে বললে বুমরা এবং স্টার্ক। রোহিত বা ফিঞ্চ হয়তো সেঞ্চুরি করছে, কিন্তু আগুনে গতির মালিকরাই কাজের কাজটা করছে।

সেমিফাইনালে এই দুটো দেশ কাদের বিরুদ্ধে খেলবে, সেটা বড় ব্যাপার নয়। নক আউট পর্বে দারুণ উত্তেজক ম্যাচ দেখার জন্য তৈরি থাকুন। প্রথমে সেমিফাইনালে। তার পরে ফাইনালে। আমি কিন্তু ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল দেখার আশায় আছি।

এ বার শনিবারের শ্রীলঙ্কা ম্যাচের কথায় আসি। ভারতের উচিত হবে দীনেশ কার্তিকের জায়গায় রবীন্দ্র জাডেজাকে খেলানো। জাডেজা যেমন ব্যাটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রান করতে পারবে আবার ফিল্ডিংয়েও অন্তত ২০ রান বাঁচিয়ে দিতে পারবে। অর্ধেক সুযোগকে ক্যাচে বদলে ফেলতে পারে জাডেজা। সঙ্গে থাকবে ওর বাঁ হাতি স্পিন। যেটা খুব কাজে আসে। ধোনির জায়গা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। কিন্তু মনে হয় না, এই মুহূর্তে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার জন্য কেউ তৈরি আছে। (৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE