Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাউদাম্পটনে বৃষ্টি, জিতেও ময়না-তদন্ত

ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পরে সপ্তাহ খানেকের উপর বসে থেকেছে। ৯ জুন ওভালে কোহালিরা হারান স্টিভ স্মিথদের। তার পরে তাঁরা সটান মাঠে ফেরেন ১৬ জুন ম্যাঞ্চেস্টারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

বৃষ্টির কারণে ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।—ছবি এপি।

বৃষ্টির কারণে ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।—ছবি এপি।

সুমিত ঘোষ 
সাউদাম্পটন শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ০৩:৩৬
Share: Save:

বিরাট কোহালি টসে জিতে প্রথম সাঁতার কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ট্রেন্ট ব্রিজে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচ একটাও বল না হয়ে ভেস্তে যাওয়ার পরে ছড়িয়ে পড়া সেই বিখ্যাত রসিকতা। তার পর বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ। কিন্তু রসিকতা যেন সত্যি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে।

ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পরে সপ্তাহ খানেকের উপর বসে থেকেছে। ৯ জুন ওভালে কোহালিরা হারান স্টিভ স্মিথদের। তার পরে তাঁরা সটান মাঠে ফেরেন ১৬ জুন ম্যাঞ্চেস্টারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মাঝে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ট্রেন্ট ব্রিজের ম্যাচ বানচাল হয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টির মন্দভাগ্য কোহালিদের পিছু ছাড়ছে না। ম্যাঞ্চেস্টারে ছিলেন, সারাক্ষণ মেঘ আর বৃষ্টির পূর্বাভাস সঙ্গে নিয়ে। তা-ও ভাল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটা হল এবং পুরো পয়েন্ট ঘরে তোলা গেল। সাউদাম্পটনে যখন তাঁরা সোমবার এলেন, বেশ রোদ্দুর ছিল। কিন্তু এ দিন আবার সেই ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি চলল। দু’দিনের ছুটি কাটিয়ে বুধবারেই প্র্যাক্টিসে ফেরার কথা রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের। কিন্তু আকাশের যা অবস্থা, আউটডোর প্র্যাক্টিস করা যাবে কি না, সন্দেহ। শুধু ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার আতঙ্কই তাড়া করছে না ক্রিকেটারদের, সঙ্গে থাকছে আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত প্র্যাক্টিস করতে না পারা। যা পরিস্থিতি, সব সময় কিটব্যাগ নিয়ে তৈরি থাকতে হবে। রোদ উঠলেই প্র্যাক্টিস করতে দৌড়াও। বিশ্রামের কথা ভাবো শুধু বৃষ্টি হওয়ার সময়।

সমস্যা মারাত্মক আকার নেওয়ার কারণ শুধু আবহাওয়া নয়, তাকে কেন্দ্র করে আইসিসি-র উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাব। একে তো প্রত্যেকটা ম্যাচের রিজার্ভ ডে নেই কেন, তা নিয়ে রীতিমতো সরব দলগুলো। বৃষ্টিতে ম্যাচ হারানোর পরে বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডসের কথা এখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে— আমরা চাঁদে লোক পাঠাতে পারি আর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রিজার্ভ ডে রাখতে পারি না!’’ জোরালো সমালোচনা শুরু হয়েছে আইসিসি-র যে, টিভি সম্প্রচারকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই রিজার্ভ ডে না রাখার কেলেঙ্কারি তারা করেছে কি না? তার কারণ, লম্বা টুর্নামেন্ট ইচ্ছা করলেই ছোট করে ফেলা যেত যদি এক দিনে দু’টো করে ম্যাচ করা হত। তা না করতে চাওয়ার কারণ হিসেবে শোনা যাচ্ছে, টিভি-র বাজার ধরার প্রলোভন। যত বেশি দিন ধরে চলবে টুর্নামেন্ট, তত বেশি টাকা আসবে। সব চেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই বিশ্বকাপ যে ইংল্যান্ডে হবে, তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল ২০০৬ সালে। তার মানে ১৩ বছর পেয়েছে আইসিসি টুর্নামেন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করার জন্য। ইংল্যান্ডে কী রকম আবহাওয়া থাকতে পারে, সেটা জানার জন্য শার্লক হোমস হওয়ার দরকার পড়ত না। কারও কারও মনে হচ্ছে, স্রেফ আইসিসি-র গাফিলতির কারণে এত বড় একটা টুর্নামেন্ট প্রহসনে পরিণত হতে পারে। ইতিমধ্যেই বলাবলি শুরু হয়েছে, কোনও একটা দল বৃষ্টির বরাত পেয়ে শেষ চারে গেলেও যেতে পারে। আবার কেউ যোগ্য হয়েও ছিটকে যেতে পারে। আইসিসি রিজার্ভ ডে নিয়ে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করলেও কেউ তাতে কর্ণপাতও করছে না।

বরং নিয়ামক সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে, বৃষ্টির পরে মাঠকে দ্রুত খেলার উপযুক্ত করে না তুলতে পারার জন্য। ম্যাঞ্চেস্টারে ভারত বনাম পাকিস্তানের মতো ম্যাচে পর্যন্ত অব্যবস্থা চোখে পড়েছে। বৃষ্টির পরে খেলা শুরু হতে অনেক দেরি হয়েছে। মাঠে যথেষ্ট কর্মী ছিল না। অনেক মাঠে একটা মাত্র সুপারসপার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। অনেকে বলতে শুরু করেছেন, ভারতে এর চেয়ে অনেক ভাল সিস্টেম রয়েছে মাঠ শুকনোর। কর্মী সংখ্যাও অনেক বেশি থাকে। কথা উঠছে, আইসিসি এই টুর্নামেন্টের জন্য স্থানীয় সংগঠকদের জন্য বসে না থেকে নিজেদের উদ্যোগে আরও মাঠ কর্মী নিয়োগ করল না কেন?

যদি সাউদাম্পটনে কোহালিদের আফগানিস্তান ম্যাচ ভেস্তে যায়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা, মাথায় রেখেও বলা যায়, এই ম্যাচ থেকে পুরো পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করতে চাইবে ভারত। শুধু তাই নয়, ম্যাচ ভেস্তে গেলে সেমিফাইনালে গেলেও টেবলে স্থান এদিক-ওদিক হয়ে যেতে পারে। তখন আবহাওয়ার কারণে এক নম্বর দল হয়েও দু’নম্বরে বা আরও নীচে শেষ করতে হতে পারে।

ভারতীয় দলের অবশ্য এ দিন এমনিতেও প্র্যাক্টিস ছিল না। তাই বৃষ্টিতে খুব ক্ষতি কিছু হয়নি। বুধবার আকাশ ঠিক থাকলেই হল। তবে মাঠে না গেলেও এ দিন টিমের সদস্যরা বসে পাকিস্তান ম্যাচের ময়না-তদন্ত করলেন। শাস্ত্রী-কোহালি জমানায় এটা আর একটা অভিনব উদ্যোগ। জিতলেও ময়না-তদন্ত হয়। জিতেছি মানেই তো আর সব কিছু ঠিক চলতে পারে না। জয়ের উচ্ছ্বাসে যেন ভুলভ্রান্তিগুলো উপেক্ষিত হয়ে পড়ে না থাকে— এটাই হল ভাবনা।

ক্রিকেট যে বড় নিষ্ঠুরও। কখন ওই ছিদ্র দিয়েই বাসরঘরে ঢুকে পড়বে সাপ, জানাও যাবে না। তাই সব ঠিক চললেও ছিদ্র বুজিয়ে রাখো। কালনাগিনী যাতে ঢুকতে না পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE