শোক: ভেঙে গেল ডাকওয়ার্থ ও লুইসের (ডান দিকে) জুটি। ফাইল চিত্র
চলে গেলেন ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতির অন্যতম আবিষ্কর্তা টোনি লুইস। সীমিত ওভারের ক্রিকেটকে নতুন পথ দেখিয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল এই জুটি। যা ভেঙে গেল বৃহস্পতিবার সকালে। শুধু রয়ে গেল তাঁদের আবিষ্কার। যা স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমী ও ক্রিকেটারদের মনে।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করা এক সময় আতঙ্কে পরিণত হয়েছিল। সব চেয়ে বড় উদাহরণ, ১৯৯২ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বৈরথ। রান তাড়া করতে নেমে এক সময় ১৩ বলে ২২ রান প্রয়োজন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। যে লক্ষ্য বেশ সহজই ছিল। কিন্তু বৃষ্টিই কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। সেই বিশ্বকাপে “অ্যাভারেজ রেন রুল” ব্যবহার করে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের ফল প্রকাশ করা হত। কী সেই পদ্ধতি? প্রাক্তন আম্পায়ার পিলু রিপোর্টার বলছিলেন, “এই পদ্ধতিতে দ্বিতীয় ইনিংস খেলা দলের উইকেটের পতন ধরা হত না। এমনকি প্রথম ইনিংস যারা খেলত, তাদের কম রান ওঠা ওভারগুলোকেও ধরা হত না।”
যার ফল? বৃষ্টি থামার পরে ১৩ বলে ২২ রানের লক্ষ্য গিয়ে দাঁড়ায় ১ বলে ২২ রানে (পরে জানা যায়, স্কোরবোর্ড ভুল দেখিয়েছিল। ১ বলে প্রয়োজন ছিল ২১ রান)। ক্রিকেট বিশ্বকাপের মর্যাদা রাখতে মাঠে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যথারীতি হেরে বিদায় নেয়। পিলু বলছিলেন, “সেই ম্যাচের পরেই ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রতিবাদ শুরু করেন। নতুন নিয়মের জন্য আবেদন করেন। এমনকি রেডিয়োতে বিখ্যাত ক্রিকেট লিখিয়ে ক্রিস্টোফার মার্টিন-জেনিংসও বিকল্প নিয়ম আনার দাবি তোলেন। ডাকওয়ার্থ সেই আবেদন শুনেছিলেন। ১৯৯২-এর শেষের দিকেই রয়্যাল স্ট্যাটিস্টিকাল কনফারেন্সে এ বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন ডাকওয়ার্থ। তাঁর বিষয়ের নাম, ‘ফেয়ার প্লে ইন ফাউল ওয়েদার’। লুইসও উপস্থিত ছিলেন সেই কনফারেন্সে। তখনই তাঁরা ঠিক করেন, দু’জনে মিলে এ বিষয়ে গবেষণা করবেন।
যার ফল সেই ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি। প্রথম যা প্রয়োগ করা হয় ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ড বনাম জ়িম্বাবোয়ে ম্যাচে। অঙ্কের দুই অধ্যাপকের এই পদ্ধতিকে আইসিসি স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ বিশ্বকাপের আগে। কিন্তু তবুও বিতর্ক থেকেই গিয়েছিল। টি-টোয়েন্টি যুগ ও ওয়ান ডে-তে পাওয়ার প্লে-র ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে রানের গতি অনেক বেড়ে যায়। তাই বিষয়টি আরও সহজ করে তুলতে এগিয়ে আসেন অস্ট্রেলীয় অধ্যাপক স্টিভন স্টার্ন। ২০১৫ বিশ্বকাপে নতুন পদ্ধতির সংস্করণ হয়। যার নাম দেওয়া হয় ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতি। রিপোর্টার বলছিলেন, “লুইসের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছিল। উনি কিন্তু সমালোচনাকে খুব ভাল ভাবে গ্রহণ করতেন। জিজ্ঞাসাও করতেন, কোথায় সংস্কারের প্রয়োজন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে রান তাড়া করার সময়ে অনেক ভারসাম্য এনেছিলেন লুইসরা।”
প্রাক্তন ভারতীয় ব্যাটসম্যান অরুণ লাল ক্রিকেটের আইনকানুন এবং রানরেট পদ্ধতির মাস্টার। বলছিলেন, “কোন বিশ্বকাপ ঠিক মনে পড়ছে না। খুব সম্ভবত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও হতে পারে। এ রকমই একটি প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ডিএল পার স্কোর অনুযায়ী খেলছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু বৃষ্টি নামার সময় রান বেশি থাকলেও উইকেট হারায়। ওদের কাছে তখনও পরিষ্কার ছিল না, উইকেট হারালে পার স্কোরও বেড়ে যায়। আসলে শুরুর দিকে ডিএল পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক ছিল। তবে সেটা যত বেশি ব্যবহার হয়েছে, ততই সাবলীল হয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব।”
যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত লুইসের মৃত্যুসংবাদ পাননি অরুণ। খবর শোনার পরে বলেন, “খুবই খারাপ খবর। পৃথিবীর সব চেয়ে সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে ওঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে আমি শোকাহত। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy