Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
স্পিনাররা সাহায্য পায়নি, বলছেন বয়কট থেকে দোশী

এই টার্ন আমার মা-ও খেলে দেবে

পারেন বটে জেফ্রি বয়কট! ভারত সফরে এসে কোনও বিদেশি টিম পাঁচশো তুললে ক্রিকেট-পৃথিবীর তার সম্পর্কে সম্যক ধারণাটা কী হতে পারে, বলা এবং বোঝার জন্য ক্রিকেট-প্রাজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

অশ্বিনদের শাসন করে সেঞ্চুরির পথে বেন স্টোকস। বৃহস্পতিবার রাজকোটে। ছবি: পিটিআই।

অশ্বিনদের শাসন করে সেঞ্চুরির পথে বেন স্টোকস। বৃহস্পতিবার রাজকোটে। ছবি: পিটিআই।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
রাজকোট শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

পারেন বটে জেফ্রি বয়কট!

ভারত সফরে এসে কোনও বিদেশি টিম পাঁচশো তুললে ক্রিকেট-পৃথিবীর তার সম্পর্কে সম্যক ধারণাটা কী হতে পারে, বলা এবং বোঝার জন্য ক্রিকেট-প্রাজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। যে কেউ সশ্রদ্ধ মেনে নেবে এটা নিছক কীর্তি নয়, বড়সড় কীর্তি। যে দেশে এসে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া ০-৪ উড়ে যায়, এবি ডে’ভিলিয়ার্সের দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরে পদপিষ্ট হয়ে, সে দেশে ঢুকে পাঁচশো মানে তো পাঁচশো-হাজারের নোট ফের চালু হওয়ার মতোই বিস্ময়কর ঘটনা!

কিন্তু তাঁর নাম জেফ্রি বয়কট। আর পাঁচ জন যে ভাবে দেখে, যে ভাবে বিচার করে ক্রিকেটকে, তিনি তা করেন না। ক্রিকেটকে দেখেন তিনি অন্য আঙ্গিকে। বিচার করেন অন্য মানদণ্ডে। যেখানে দেশজ লাভ-ক্ষতি গুরুত্ব পায় না। এক ইনিংসে তিন ইংরেজের সেঞ্চুরি-কৃতিত্ব তিনি উড়িয়ে দেন ফুত্কারে, উল্টে সমালোচনার দাঁত-নখ বার করে ঝাঁপিয়ে পড়েন উইকেটের উপর।

লাঞ্চের মধ্যেই ইংল্যান্ড সাড়ে চারশো পার করে দেওয়ায় বয়কটের কাছে স্বাভাবিক ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের গরিমা নিয়ে। কিন্তু তিনি কোনও তোষণ-টোষণের মধ্যে দিয়ে তো গেলেনই না, উল্টে ঠোঁট থেকে তাচ্ছিল্যের একটা শব্দ বার করে বলে বসলেন, “হুঁ, এই নাকি টার্ন! ভারতে আসার আগে কত শুনলাম, অমুক হবে, তমুক হবে। পিচটায় তো কিছুই নেই। শামি আর উমেশ ভাল বল করল। কিন্তু দাম পেল কী?” এটা ‘পুল’ হলে পরেরটা সোজা ‘হুক’। “ভাই, টেস্ট ম্যাচ পিচ হত আমাদের আমলে। কোনও কভার-টভার থাকত না। টেনশনে রাতে ঘুম আসত না। মনে আছে, কাউন্টির একটা ম্যাচে একবার আমাদের বিপক্ষ তেইশ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল! লাঞ্চের মধ্যে খেলা শেষ করে বাড়ি। এটা সেখানে কী? টার্ন বলতে বুঝি, এত বড়-বড় হবে। খেলতে কালঘাম ছুটে যাবে। কিন্তু এখানে যেটা হচ্ছে, তা খেলতে টেস্ট ব্যাটসম্যান হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।” বলে-টলে হাতের তালু অদ্ভুত ভাবে ছোট করে সর্বশেষ বোমা, “টার্ন, দিস মাচ? এ তো আমার মা-ও খেলে দেবে!”

বক্তব্য খুব চাঁচাছোলা এবং কাঠ-কাঠ। ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য নিয়ে অতিরিক্ত লম্ফঝম্ফের প্রয়োজন নেই। বরং চর্চিত বিষয় একটাই হওয়া উচিত রাজকোট বাইশ গজ।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেও ব্যাপারটা টের পাওয়া গেল। মুম্বইয়ের অজিত ওয়াড়েকর। কর্নাটকের গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। সৌরাষ্ট্রের দিলীপ দোশী। এবং ফের কর্নাটকেরই এরাপল্লি প্রসন্ন। একমাত্র প্রসন্নকে বাদ রাখলে, বাকিদের কেউ টিম রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের আরও একটা ব্যর্থতার দিন নিয়ে বিশদ কথাবার্তায় গেলেন না। বারবার টেনে আনলেন রাজকোট পিচকে। কেউ কেউ শুধু মনে করিয়ে দিলেন, ভাল উইকেটে এ বার থেকে বল করা শিখতে হবে অশ্বিনদের।

সেঞ্চুরি করেও মাস্টারের ক্লাসে। রাজকোটে জো রুট ও সুনীল গাওস্কর। ছবি টুইটার

দিলীপ দোশী যেমন। তেত্রিশ টেস্ট খেলা ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ন’শো উইকেট নেওয়া প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার এই মুহূর্তে রাজকোটে। রাজ্যের প্রথম টেস্ট ম্যাচ দেখতে। বৃহস্পতিবার মাঠ ছাড়ার আগে বলছিলেন, “আমি কিন্তু এ রকম পিচে খারাপ কিছু দেখি না। গুড টেস্ট উইকেট। থার্ড ডে থেকে এখানেও টার্ন হবে। খারাপটা কোথায়?” কিন্তু অশ্বিনরা তো সেখানে ভাল বোলিংও করেননি। শুনে দোশী বললেন, “আসলে আগের উইকেটগুলো এ রকম ছিল না। সেখানে টার্ন অনেক বেশি পাচ্ছিল অশ্বিনরা। এটা সে রকম নয়। এখানেও বল ঘুরবে, কিন্তু তিন দিনের পর। আমার মতে, ভাল উইকেটে বল করা অশ্বিনদের শিখতে হবে। আশা করি, ওরা সেটা শিখেও যাবে।” দোশীর মতে, গণ্ডগোলটা করেছে ফিল্ডিং। এতগুলো ক্যাচ ফেলা। স্টোকসের তিনটে ক্যাচ আর একটা স্টাম্পিংয়ের সুযোগ এ দিন ছেড়েছে ভারত। “এত ক্যাচ ফেললে বিপক্ষ তো সুযোগ নেবেই। আসলে বাংলাদেশের কাছে একটা টেস্ট হেরেছে বলে ইংল্যান্ড যে খারাপ টিম হয়ে গিয়েছে, তা তো নয়। ওদের এগারো নম্বরেরও টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। আমি এই টেস্টে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা আর দেখছি না। ভাল ব্যাটিং করে টেস্ট বাঁচানো যেতে পারে শুধু। কিন্তু সেটা না পারলে বিপদ আছে।”

অজিত ওয়াড়েকর— তিনি মনে করেন, সেটা হয়েও যাবে। টেস্ট বাঁচিয়ে দেওয়া যাবে। একাত্তরে ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজজয়ী ভারত অধিনায়ক মুম্বই থেকে ফোনে বলছিলেন, “উইকেটটা গণ্ডগোল করে দিল। তার মানে এটা বলছি না যে, ভারত হেরে যাবে। এ রকম ভাল ব্যাটিং ভারতও করবে। শেষমেশ ড্র হয়ে যাবে টেস্টটা। আর অশ্বিনদের অহেতুক দোষারোপ করে লাভ নেই। মানছি যে, আরও কিছুটা টাইট ওরা হতে পারত। ফিল্ডিংটাও ভাল হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, উইকেটটা থেকে ওরা কিছু পায়নি।” বিশ্বনাথ শুধু এর সঙ্গে আর একটা জিনিস ধরিয়ে দিতে চান। ইংল্যান্ডের মানসিকতা। ফোনে বলেও দিলেন, “ওদের অ্যাপ্রোচটাও ভারতের এমন ধাক্কা খাওয়ার পিছনে বড় কারণ। ভারত সফরে অধিকাংশ বিদেশি টিম স্পিন খেলার কথা ভেবে ভয় পেয়ে যায়। নামার আগেই গুটিয়ে থাকে। রুট, মইন আলিরা সেটা করেনি। পাল্টা মেরেছে।” ব্যতিক্রম শুধু প্রসন্ন। কোথাও অশ্বিনকে সরাসরি টেনে আনলেন না। কিন্তু ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন যে, ভাল উইকেটে অশ্বিনরা এক রকম, আর ঘূর্ণিতে আর এক। বললেন, “আমি কেন বলতে যাব অশ্বিনদের, কী করা উচিত ছিল? ওরা নিজেরাই তো জানবে। তা ছাড়া কুম্বলে আছে। ওর কাছে যাক।” শেষে শ্লেষ মেশানো সংযোজন, “উইকেট ভাল থাকলে কী দাঁড়ায়, সেটা তো বোঝা গেল!”

এখনও পর্যন্ত এটা ছুটকো আওয়াজ। পাঁচ জনের মধ্যে একজন তুলছেন। কিন্তু এ রকম গণ্ডগোল ফের ঘটলে, কে বলতে পারে তা গর্জনে বদলে যাবে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ben stokes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE