ওয়াডা মামলা শুনানির প্রাক-মুহূর্তে নরসিংহ যাদবের মানসিক অবস্থা কী রকম?
এক কথায়, এটা কোনও প্রশ্নই নয়। যিনি কি না রিও যুদ্ধে নামার কয়েক ঘণ্টা আগে জানতে পারবেন নিজের অলিম্পিক্স-ভাগ্য, শুনানির আগে তাঁর মনোভাব আর কী দাঁড়াতে পারে? টেনশন অবশ্যম্ভাবী। ভেঙে চুরচুর হয়ে পড়া— অস্বাভাবিক নয়। নরসিংহ যাদবের নিশ্চয়ই এ সবই হচ্ছে।
একদম ভুল।
নরসিংহ যাদব নাকি বেশ ফুরফুরে! টেনশনের কোনও জায়গাই নেই। কোচকে ফোনে অনায়াসে বলে দিতে পারছেন, ‘‘লড়ে যাব শেষ পর্যন্ত।’’
নরসিংহ যাদবের কোচ জগমল সিংহ রিও যাননি। ব্যক্তিগত কাজে তিনি এখন মুম্বইয়ে। কিন্তু রিও যাননি বলে যে ছাত্রের সঙ্গে কথা হচ্ছে না, তা নয়। গতকাল রাতেও হয়েছে। জগমল জানেন, পারিপার্শ্বিক সুবিধের নয়। আজ, বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আরবিট্রেশন কোর্টে মামলা উঠবে নরসিংহর। ডোপিং অভিযোগ নিয়ে নাডা থেকে যে ছাড়পত্র পেয়েছিলেন নরসিংহ, তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ওয়াডা। বৃহস্পতিবার তারই শুনানি। যেখানে ঠিক হয়ে যাবে, ভারতীয় কুস্তিগিরের অলিম্পিক্স ভাগ্য। ঠিক হয়ে যাবে, রিওয় থেকে গিয়ে আগামী শুক্রবার তিনি ৭৪ কেজি বিভাগে নামবেন, না তাঁকে ফিরে আসতে হবে দেশে।
সোজা কথায়, ভাগ্যের বিরুদ্ধে মল্লযুদ্ধে আজ আবার নামছেন নরসিংহ যাদব। কিন্তু ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, যদি জিতেও যান নরসিংহ, পদক সম্ভাবনা কতটা পড়ে থাকবে? ওয়াডার বিরুদ্ধে জিতলেও তো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেমে যেতে হবে অলিম্পিক্স যুদ্ধে। মানসিক ভাবে পারবেন তিনি?
জগমলের মনে হচ্ছে, ছাত্রের অসুবিধে হবে না। মুম্বই থেকে ফোনে নরসিংহর কোচ বললেন, ‘‘শুনুন, ও একদম তৈরি। মানসিক ভাবেও খুব ভাল জায়গায় আছে। ও আমাকে বলেছে যে, চাপে আছে ঠিক। কিন্তু তাই বলে বসে নেই। প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে।’’ সঙ্গে আরও যোগ করলেন, ‘‘যদি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত থাকত তা হলে নিশ্চয়ই আমাকে বলতে পারত না যে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’’
জগমল নিঃসন্দেহে আশাবাদী। কিন্তু সবাই যে তাঁর মতো আশাবাদে ডুবে, এমন নয়। শুধু মামলা সংক্রান্ত অশান্তি নয়। আরও নানাবিধ ঝামেলা আছে। যেমন রাশিয়া। তারা কোথাও কোথাও অভিযোগ করেছে যে, নরসিংহ যে অপরাধে অভিযুক্ত হয়েও রিওয় বসে আছেন, সেই একই অপরাধে রুশদের শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। অলিম্পিক্সে আসা হয়নি। পরিষ্কার, বৈষম্যের অভিযোগ তুলে দিয়েছে তারা। কেউ কেউ আবার লিখছে নরসিংহের মানসিক অবস্থা নিয়ে। বলা হচ্ছে, নাডার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের পর মুম্বইয়ের এক মেন্টাল কন্ডিশনিং ক্যাম্পে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। পরের পর শুনানিতে হাজিরা দিতে দিতে মানসিক ভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ওয়াডার বিরুদ্ধে সেই একই লড়াই জিতলেও পারবেন তো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অলিম্পিক্স যুদ্ধ জিতে বেরোতে?
সুশীল কুমারের কোচ সতপাল সিংহকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হল। সতপাল প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে বললেন, ‘‘কুস্তিগিরের জীবনে ওঠা-পড়া থাকেই। সেটা জেনেই এগোতে হয়। এর বেশি কিছু বলছি না। কে জানে কোথা থেকে বিতর্ক বেধে যাবে।’’ সুশীলকেও জিজ্ঞেস করা গেল। তিনি বললেন, ‘‘যা বলার বলে দিয়েছি টুইটারে।’’ ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের এক কর্তা শুনে-টুনে বললেন, কঠিন। যতই নরসিংহ মুখে বলুন সব ঠিক আছে, ভেতরে ভেতরে তিনি চাপে পড়ে যেতে বাধ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তা বিশ্বাস করেন, এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে পদক জেতা— অবিশ্বাস্য হবে।
খবর এর বাইরে একটাই। বলা ভাল, একজনের নাম— নরসিংহর আইনজীবী বিদুসপৎ সিংঘানিয়া। আরবিট্রেশন কোর্টে বৃহস্পতিবার মামলা যখন উঠবে, রিওর স্থানীয় আইনজীবীর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন তিনিও। সশরীরে নয়, কনফারেন্স কলে। তবে নিছক আইনজীবীর বাইরেও ভদ্রলোকের একটা গুরুত্ব আছে। অন্তত নরসিংহর জীবনে।
নাডার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নরসিংহকে ইনিই জিতিয়েছিলেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy