Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অভাবই বাধা কুং ফু-র সোনার মেয়ে আজমিরির

জাতীয় স্তরের কুং ফু প্রতিযোগিতায় দু’বার স্বর্ণপদকজয়ী। তবু আরও ভাল ফলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল আর্থিক অনটন। এ বার দেশের মাটিতে হচ্ছে কুং ফু-র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপ।

আজমিরি খাতুন।-নিজস্ব চিত্র

আজমিরি খাতুন।-নিজস্ব চিত্র

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫
Share: Save:

জাতীয় স্তরের কুং ফু প্রতিযোগিতায় দু’বার স্বর্ণপদকজয়ী। তবু আরও ভাল ফলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল আর্থিক অনটন। এ বার দেশের মাটিতে হচ্ছে কুং ফু-র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপ। অথচ তাতে নাম নথিভুক্তই করতে পারলেন না আজমিরি খাতুন। তাঁর আক্ষেপ, “যেখানে সাহায্য চেয়েছি সেই ক্লাবই দাবি করেছে তাদের নামে প্রতিযোগিতায় যেতে হবে। পুরো খরচও দেবে না। একজন কী একাধিক ক্লাবের হয়ে খেলতে পারে। এর ফলে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপেই যাওয়া হল না।”

মেদিনীপুর শহরের দেওয়ানগরের বাসিন্দা আজমিরি খাতুন ছোট থেকেই কুং ফু প্রশিক্ষণ নিতেন। বিভিন্ন সংস্থা ও জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। গত বছর উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে আয়োজিত ষষ্ঠ ন্যাশনাল কুং ফু চ্যাম্পিয়ানশিপে স্বর্ণপদক পান আজমিরি। গত অক্টোবরে মুম্বইয়ে সপ্তম ন্যাশনাল লেভেল ওপেন ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ানশিপেও সোনার পদক ছিনিয়ে নেন তিনি।

আগামী ১১-১৩ ডিসেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড মার্সাল আর্ট কাউন্সিল’-এর উদ্যোগে কুং ফু ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপ আয়োজিত হবে দিল্লিতে। বিদেশে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দিতে যাওয়ার খরচ অনেক। এ বার দেশের মাটিতে এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন আজমিরি। যদিও টাকা জোগাড় করতে না পারায় সেই সুযোগও হাতছাড়া হল। আজমিরির কথায়, “যে টুকু সঞ্চয় ছিল তার সঙ্গে কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে দু’বার বাইরে গিয়েছি। আর কত সাহায্য চাইব। তবু চেষ্টা করিনি তা নয়। কিন্তু সাহায্য মেলেনি।”

অভাবের সংসারে দু’বেলা ভাল খাবার জোটেনি। মোবাইল, এটিএমের কভার বিক্রির অস্থায়ী দোকান রয়েছে আজমিরির বাবা মহম্মদ সেলিমের। যা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম অবস্থা। রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহা বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আজমিরির কথায়, “প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনা চালানোর জোগাতেই বাবা হিমশিম খান। তাই আমাকে প্রাইভেট টিউশনও পড়াতে হয়। সাহায্য না পেলে এত টাকা কোথায় পাব?”

ছাত্রী ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দিতে না পারায় হতাশ আজমিরির কোচ তাপস দাসও। তিনি বলেন, “মুখ ফুটে ও কাউকে কিছুই বলে না। আমাদের সংস্থারও অর্থবল বেশি নেই যে সাহায্য করতে পারি। তবে কিছুটা সাহায্য করতেই পারতাম। কিন্তু ও যে কিছুই বলল না।” তাপসবাবু জানান, কয়েকদিন পর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপ নিয়ে একটি বৈঠক রয়েছে। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে নাম নথিভুক্ত করার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। এরপরেও সুযোগ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করব।”

মেদিনীপুর পুরসভার উপ পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “আর্থিক সঙ্কটে একজন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপে যেতে পারবে না, ভাবতেই খারাপ লাগছে। সমস্যার কথা যদি আগে জানতে পারতাম চেষ্টা করা যেত। আজমিরি পদক পেলে তো জেলারই গৌরব বাড়ত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ajmiri khatun Kung fu money problem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE