Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ধোনি নিয়ে উদ্বেগ নেই, চার নম্বরের দরজা খোলা

বুমরার ইয়র্কারে আক্রম-ওয়াকারকে মনে পড়ছে শাস্ত্রীর

বরাবর তারুণ্যকে উৎসাহ দেওয়া তিনি কী বলছেন পৃথ্বী শ-দের নিয়ে? এশিয়া কাপ জিতে দেশে ফিরে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। নানা প্রশ্ন আর তর্কের খোলামেলা জবাব দিলেন।  

মিশন: এক দিকে লক্ষ্য টেস্টে সেরার স্থান ধরে রাখা। অন্য দিকে অধিনায়ক কোহালি ও কোচ শাস্ত্রীর মাথায় ঢুকে পড়েছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। ফাইল চিত্র

মিশন: এক দিকে লক্ষ্য টেস্টে সেরার স্থান ধরে রাখা। অন্য দিকে অধিনায়ক কোহালি ও কোচ শাস্ত্রীর মাথায় ঢুকে পড়েছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

মরুদেশে এক সময়ে ভারত তুলোধনা হত পাকিস্তানের হাতে। এ বার দু’টো ম্যাচের দু’টোতেই জয়। তখন পাকিস্তানের ছিল আক্রম, ইউনিস। এখন ভারতের বুমরা, ভুবি। সেখানেও যেন শাপমোচনের সুর। বিশ্বকাপের রাস্তায় কতটা তৈরি ভারতীয় দল? কোন কোন জায়গা এখনও খালি? মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে টিমের ভাবনা কী? বরাবর তারুণ্যকে উৎসাহ দেওয়া তিনি কী বলছেন পৃথ্বী শ-দের নিয়ে? এশিয়া কাপ জিতে দেশে ফিরে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। নানা প্রশ্ন আর তর্কের খোলামেলা জবাব দিলেন।

এশিয়া কাপ জয়, প্রাপ্তি

অনেক ইতিবাচক দিকই রয়েছে এশিয়া কাপ জয়ের। সবার আগে বলব, ইংল্যান্ডে দীর্ঘ সফরের পরেও যে রকম তীব্রতা আর খিদে ছেলেরা দেখিয়েছে। ইংল্যান্ডে যারা খেলেছে, তাদের অনেকে এশিয়া কাপেও ছিল। অনেকে হয়তো ভাবতেই পারেনি তাদের কাছ থেকেও এ রকম এনার্জি দেখা যাবে। ফাইনালে বাংলাদেশ দুর্দান্ত লড়াই করছে দেখেও লড়াই ছাড়েনি ছেলেরা। ম্যাচ জিতে তবেই বেরিয়েছে। কেদার যাদব হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও ব্যাট করতে নামল। খোঁড়াতে খোঁড়াতে ওর রান নেওয়ার ছবিগুলো সহজে ভোলা যাবে না।

শিখর-রোহিত যুগলবন্দি

টপ অর্ডারে শিখর আর রোহিতের ব্যাটিং বড় একটা প্রাপ্তি। এবং, বোলিং। ফাস্ট বোলার ও স্পিনার, দু’ধরনের বোলারদের কথাই বলব। গোটা টুর্নামেন্টে ওরা দারুণ বল করেছে। তবে সব চেয়ে ইতিবাচক দিক ছিল, আমাদের ফিল্ডিং। প্রত্যেক ম্যাচে ২০-২৫ রান করে বাঁচিয়েছে আমাদের ফিল্ডাররা। অসাধারণ!

কোথায় উন্নতি চাই

মিডল অর্ডারকে কাজ শেষ করে আসার অভ্যেস রপ্ত করতে হবে। এই ব্যাপারে মিডল অর্ডারকে আরও অনেক ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।

বিশ্বকাপে কোন স্পট নিয়ে লড়াই

ব্যাটিংয়ে চার নম্বর জায়গার জন্য দরজা খোলা। অস্ট্রেলিয়া সফর পর্যন্ত আমরা দেখব। তার পরে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অস্ট্রেলিয়া যখন আমাদের দেশে আসবে (আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে আসার কথা স্টিভ স্মিথদের) তত ক্ষণে আমাদের বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল তৈরি করে ফেলতে হবে।

চার নম্বরের লড়াইয়ে কারা

অম্বাতি রায়ডু আছে। দীনেশ কার্তিককে চেষ্টা করা হয়েছে। দু’জনেই ভাল করেছে। নির্বাচকেরাও নিশ্চয়ই দেখবেন। তাঁদের যদি মনে হয় অন্য আর কাউকে দেখা দরকার, সেই দরজাও খোলা। বিশ্বকাপ হবে ইংল্যান্ডে। সেখানকার পরিবেশ, পিচে কে সেরা পছন্দ হতে পারে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

সেই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ কী

আমরা ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিতে চাইব। বিশ্বকাপের দল গড়ার সময়ে যাকে ওই জায়গায় সব চেয়ে ধারাবাহিক মনে হবে, চার নম্বর পোজিশনটা তারই হওয়া উচিত।

ঋষভ পন্থের ভবিষ্যৎ

ঋষভ চাঞ্চল্যকর এক প্রতিভা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলবে। ইংল্যান্ডে দারুণ সেঞ্চুরি করে এসেছে। ওর দিকে নিশ্চয়ই অনেকের নজর থাকবে। দল গড়ার কাজটা মূলত নির্বাচকদের। আমি তাঁদের কাজে নাক গলাতে চাই না। বিশ্বকাপের এখনও খানিকটা সময় বাকি আছে। পারফরম্যান্স করলে অনেকেই আলোচনায় আসতে পারে। ঋষভের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী।

ফিট রাখাটাই চ্যালেঞ্জ

ক্রিকেটারদের ফিটনেস ধরে রাখা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এশিয়া কাপে যে রকম গরমের মধ্যে খেলতে হয়েছে, তাতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার, হার্দিক পাণ্ড্য আর কেদার যাদবকে আমরা হারালাম।

এশিয়া কাপের মাস্টারপ্ল্যান

ইনজুরি ম্যানেজমেন্ট আর ওয়ার্কলোড পরিমাপ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুবাইয়ে পৌঁছে প্রথম দিন প্র্যাক্টিস করার পরেই আমি সিদ্ধান্ত নিই, এই গরমের মধ্যে প্র্যাক্টিস করে ক্লান্ত হয়ে ম্যাচে নামার চেয়ে তরতাজা থাকাটা অনেক বেশি জরুরি। সেই কারণে ম্যাচ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে আমরা এক দিনও প্র্যাক্টিস করিনি। এক দিন অন্তর ম্যাচ হচ্ছে। এ রকম আবহাওয়া আর সূচিতে প্র্যাক্টিস করতে গেলে আর ম্যাচে টিম নামানো যেত না। মানসিক প্রস্তুতির উপরে জোর দিয়েছিলাম। তিন দিনের প্র্যাক্টিসে কেউ বিশ্বসেরা তো হবে না। একটা কথা মাথায় রাখা দরকার। ক্রিকেটারেরা মানুষ, মেশিন নয়। রকেটে জ্বালানি ভরে বলে দিলাম, যাও, আকাশে উড়তে থাকো আর ওরাও উড়তে থাকল, এটা সম্ভব নয়।

বিশ্বকাপে কত জন নিশ্চিত

বিশ্বকাপের জন্য যদি ১৬ জনের স্কোয়াড হয়, তা হলে আমি বলব, ১৩জন, এমনকি, হয়তো ১৪জনের নামও হয়তো মোটামুটি চূড়ান্ত। কিন্তু সেটা চোট-আঘাতের উপরেও নির্ভর করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে দু’তিনটে জায়গার জন্যই আমাদের অপেক্ষা করে দেখতে হবে, কারা যোগ্যতম।

ধোনির ফর্ম নিয়ে কোনও উদ্বেগ

একদমই না। কোনও প্রশ্নই নেই। এখনও কী অসাধারণ কিপিং করছে! স্টাম্পের পিছনে বিদ্যুৎ গতিতে সক্রিয়। অন্যদের চেয়ে হাজার হাজার মাইল এগিয়ে। আমি একেবারেই চিন্তিত হওয়ার কিছু দেখছি না। কিপিংয়ে তো নয়ই, ব্যাটিংয়েও নয়।

রবীন্দ্র জাডেজার প্রত্যাবর্তন

অসাধারণ! একটা সুযোগ পেয়েই সেটাকে দু’হাতে লুফে নিয়েছে জাড্ডু। ব্যাটসম্যান হিসেবে দারুণ করেছে। সেরা ছিল ফিল্ডিংয়ে। আমার মতে টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডার। বাকি সকলের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। এবং, বলটাও ভাল করে দিয়েছে।

ভারত ২ পাকিস্তান ০

এই স্কোরলাইনটা অবশ্যই খুব স্পেশ্যাল। দু’টো ম্যাচে আমরা সম্পূর্ণ শাসন করে জিতেছি। সেটা আরও বেশি আনন্দের। আমি ১৯৮০ থেকে আমিরশাহিতে যাচ্ছি। এটা পাকিস্তানের দুর্গ। সেখানে এক বার কুড়ি ওভার বাকি থাকতে, আর এক বার দশ ওভার বাকি থাকতে জেতাটা বিশেষ কৃতিত্বের। নিখুঁত অপারেশন!

বুম বুম বুমরা

গত এক বছরে সব চেয়ে উন্নতি করা পেসার। কী ইয়র্কার করছে ছেলেটা! শারজায় পাকিস্তানের বোলারদের এ রকম ইয়র্কার খেলতে হয়েছে আমাদের। ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসরা তখন এ রকম ইয়র্কার করত। এক ভারতীয় পেসার সেটা ফিরিয়ে দিচ্ছে— ড্রেসিংরুমে বসে এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়াটা দারুণ সুখের। অসাধারণ ডেথ ওভার বোলিং। যেটা আশি বা নব্বইয়ের দশকে আমরা পাকিস্তানের বোলারদের করতে দেখতাম। বুমরা ক্রিকেটের ভাল ছাত্র, প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। সব সময় শোনার জন্য প্রস্তুত।

অলরাউন্ডারের উপর জোর

এটা আমাদের অ্যাডভান্টেজ হয়ে দাঁড়াবে। লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে অনেকে ব্যাট-বল দু’টোই করতে পারে। সেই কারণে কেদার যাদব আর হার্দিক পাণ্ড্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। কেদার স্ট্রিটস্মার্ট ক্রিকেটার এবং ওয়ান ডে-র জন্য দারুণ কার্যকরী। লোয়ার অর্ডারে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান। সব রকম শট খেলতে পারে। এক বার সেট হয়ে গেলে ওকে বল করা খুব কঠিন। তার সঙ্গে প্রত্যেক ম্যাচে ছয়-সাত ওভার বল করে দেবে ও। মালিঙ্গার মতো অ্যাকশনে স্পিন করাবে। কেউ বুঝতেই পারে না ওর বোলিং।

টেস্টের লক্ষ্য এবং প্রস্তুতি

টেস্ট ক্রিকেটে লক্ষ্য অপরিবর্তিত। সব পরিবেশে সেরা দল হওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব আমরা। ইংল্যান্ডের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নিজেদের আরও শক্তপোক্ত করতে হবে। যাতে বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে আমরা একই ভুল আর না করি। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর ভারতের পরিবেশে অনেক তফাত। তবু অনেক জিনিসই দেখে নেওয়া যাবে। ইংল্যান্ডে কঠিন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক বার আমাদের পারফরম্যান্স আরও ভাল হতে পারত। সেটা হলে ফলও অন্য রকম হতে পারত। সেই খুঁতগুলো মেরামত করার চেষ্টা করতে হবে।

তারুণ্যের সমর্থকের চোখে পৃথ্বী

পৃথ্বী শ প্রতিভাবান। ইংল্যান্ডে নেট প্র্যাক্টিসে দেখেছি। ওর সামনে ভাল সুযোগ। হনুমা বিহারী ইংল্যান্ডে শেষ টেস্টে সুযোগ পেয়ে ভাল করেছে। বিহারী আট-দশ ওভার বলও করে দিতে পারে।

করুণ নায়ারের বাদ পড়া

ইংল্যান্ডে স্কোয়াডে অতিরিক্ত সদস্য রাখা যায়। দেশের মাটিতে হলে স্কোয়াডে কম সদস্য থাকে। সেটা একটা ফ্যাক্টর। সম্ভবত সেটা নির্বাচকদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। অতিরিক্ত আরও এক জন ব্যাটসম্যান রাখা সম্ভব হয়নি, যেমন বিদেশ সফরে রাখা যায়। আমার মনে হয়, হনুমা বিহারীর বল করতে পারাটা বিরাট পার্থক্য করে দিতে পারে। কারণ, আমাদের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউ পার্টটাইম বোলিং করতে পারে না।

দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বিশ্বকাপের মহড়া

একটা কথা বলে দিই। এখন থেকে প্রত্যেকটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আমরা খেলব বিশ্বকাপকে মাথায় রেখেই। নানা রকম কম্বিনেশন চেষ্টা করে দেখব। উদ্দেশ্য একটাই— বিশ্বকাপের সেরা কম্বিনেশনটা খুঁজে নেওয়া। সেটা করতে গিয়ে যদি কয়েকটা ম্যাচ হারিও, সেই ঝুঁকি নিতে আমরা রাজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India Test West Indies Ravi Shastri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE