বিতর্ক: আজাকে নিয়ে সমস্যায় ক্লাব কর্তারা। ফাইল চিত্র
শাস্তি পেতে পারেন, এই ভয়ে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন বিতর্কিত ফুটবলার ফিলিপ আজা। মহমেডান কোচ রঘু নন্দীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আজা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, ‘‘আর খেপ খেলব না। নিয়মিত অনুশীলনে আসব।’’ তাতেও অবশ্য নিশ্চিন্ত নন ময়দানের পোড়খাওয়া কোচ রঘু। বলছিলেন, ‘‘খেপ খেললে নগদ টাকা। আর টাকা পেলেই উদ্দাম জীবন। মুখে বলছে বটে, কিন্তু ওই নেশা ছাড়া কঠিন। তিরিশ বছর ধরে দেখছি তো এদের!’’
শুধু মহমেডান নয়, শহরে আসা নাইজিরিয়া, ঘানা বা আইভরি কোস্টের মতো দেশের ফুটবলারদের নিয়ে ময়দানের প্রায় সব ছোট ক্লাবই সমস্যায় পড়ছে। লিগে ভাল ফল করতে হলে দলে বিদেশি ফুটবলার দরকার। অথচ ছোট ক্লাবের হাতে টাকা নেই। বাধ্য হয়েই তাদের নথিভুক্ত ফুটবলারেরা টাকা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ‘খেপ’ খেলছেন জেনেও কর্তারা চুপচাপ।
মহমেডান কোচ রঘু ও রেনবো ক্লাবের সচিব তাপস দে-র সদ্য সদ্য এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার জন্য কাস্টমসের এজে স্ট্যানলি ইফিয়ানিকে প্রস্তাব দিয়েছিল মহমেডান। ক্লাব সচিবের অফিসে বসে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা মাসিক রফায় সাদা-কালো জার্সি পরতে রাজিও হয়ে যান নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। চেকও তৈরি। কিন্তু দু’দিন পরেই তিনি বলেন, ‘‘চোট আছে মহমেডানে খেলব না।’’ রঘু বলছিলেন, ‘‘বিভিন্ন মাঠে দেখছি স্ট্যানলি খেপ খেলে বেড়াচ্ছে। প্রচুর টাকা কামাচ্ছে। আমাদের প্রস্তাবের দু’গুণ, তিন গুণ।’’ আইভরি কোস্টের ফুটবলার গটচা আর্থুর ডিওমানেডেকে ‘ওয়ার্কিং ভিসা’ করিয়ে আনিয়েছিল রেনবো। আই লিগে খেলানোর জন্য। গটচাকে বলা হয়েছিল মাসে আশি হাজার টাকার চুক্তিতে খেলতে। তিনি বেঁকে বসেছেন। রেনবো সচিব বলছিলেন, ‘‘আমরা চিঠি দিয়ে আনালাম। এখন বলছে, ক্লাবে খেলবে না। খেপ খেলবে। ওখানে অনেক বেশি টাকা।’’
খেপ খেললেই হাতে নগদ টাকা। আয়করও দিতে হয় না। ক্লাবে খেললে আয়কর কেটে টাকা নিতে হয়। অথচ ক্লাবের চেয়ে খেপ খেলে আয় কয়েক গুণ বেশি। তাই কলকাতা লিগ বা আই লিগ নয়, তাঁদের পছন্দ পাড়ায় পাড়ায় খেপ খেলা। ইউনাইটেড কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘নভেম্বর থেকে মার্চ মাস জুড়ে রাজ্যে অসংখ্য টুনার্মেন্ট হয়। ছোট ক্লাবের প্রায় সব বিদেশিই কমবেশি খেপ খেলেন। ওয়াইদি নামের এক জন নাইজিরীয় ওই পাঁচ মাস খেলে অন্তত পনেরো লক্ষ টাকা আয় করেন বলে শুনেছি। মিজোরামের একটা ক্লাবে ও খেলে দেয় বিনা পয়সায়। ক্লাবটির সঙ্গে শর্ত হল, ভিসা পাওয়ার চিঠি প্রতি বছর দিতে হবে।’’
ময়দানের কর্তাদের হিসেবে এমন প্রায় দু’শো বিদেশি ফুটবলার আছেন, ‘খেপ’ খেলা যাঁদের রুটিরুজি। ম্যাচ-প্রতি পাঁচ থেকে পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত টাকা নেন ওঁরা। আনসুমানা ক্রোমা, পেন ওরজি, ইফিমেনা চার্লস বা ওবাসি মোজেসের মতো সফল ক্লাব ফুটবলারদের তাই দেখা যায় পাড়ায় পাড়ায়।
অভিযোগ, ওয়ার্কিং ভিসা বা ছাত্র ভিসা নিয়ে ওঁরা ঢোকেন ভারতে। কেউ ছ’মাসের বা কেউ ন’মাসের। ক্লাবকর্তাদের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে ভিসা জোগাড় করেন। তার পরে ভিসা অফিসে নথিভুক্ত হয়ে থেকে যান মাসের পর মাস। ভিসা অফিস বা প্রশাসন কড়া না-হওয়ায় এঁদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইনের ফাঁক গলে এ ভাবেই চলছে আজা-স্ট্যানলি-চার্লসদের জীবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy