নায়ক: হাতে চার গোল দেওয়া বল নিয়ে লেয়নডস্কির নিজস্বী। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেড স্টারকে ৬-০ হারিয়ে। এএফপি
বিধ্বংসী রবার্ট লেয়নডস্কি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মঙ্গলবার রাতে বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকারের ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল রেড স্টার বেলগ্রেড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্রুততম চার গোল করার কীর্তিও গড়লেন লেয়নডস্কি।
দু’ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় পৌঁছে গিয়েছিল বায়ার্ন। মঙ্গলবার রাতে রেড স্টারের বিরুদ্ধে ম্যাচটা ছিল কার্যত নিয়মরক্ষার। কিন্তু ১৪ মিনিটেই গোল করে বায়ার্নকে এগিয়ে দেন লিয়ন গোরেৎস্কা। প্রথমার্ধে আর গোল না হওয়ায় ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছিল, নিয়মরক্ষার ম্যাচকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না বায়ার্ন। দ্বিতীয়ার্ধেই তাঁদের ধারণা ভুল প্রমাণিত করেন ফিলিপে কুটিনহো, থোমাস মুলারেরা। ৫৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল করেন লেয়নডস্কি। দ্বিতীয় গোল তিনি করেন ৬০ মিনিটে। চার মিনিট পরে হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন বায়ার্ন স্ট্রাইকার। ৬৭ মিনিটে করেন চতুর্থ গোল। চারটি গোল করতে লেয়নডস্কি সময় নিয়েছেন মাত্র ১৪ মিনিট ৩১ সেকেন্ড।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে একাই চারটি গোল এর আগেও করেছেন লেয়নডস্কি। তিনি তখন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলতেন। ২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে বের্নাবাউতে সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে ৪-১ জিতেছিল বরুসিয়া। সব ক’টি গোলই করেছিলেন লেয়নডস্কি। মঙ্গলবার রাতে বায়ার্নের জার্সিতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন তিনি। সেই সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে টপকে গিয়ে স্পর্শ করলেন লিয়োনেল মেসির নজির। বার্সেলোনা তারকাও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে দু’বার একাই চার গোল করেছেন। ২০০৯-’১০ মরসুমে আর্সেনালের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে ৪-১ জিতেছিল বার্সেলোনা। সব গোলই করেছিলেন মেসি। ২০১১-’১২ মরসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর ম্যাচে বায়ার লেভারকুসেনকে ৭-১ বিপর্যস্ত করেছিল বার্সেলোনা। একাই পাঁচ গোল করেছিলেন মেসি। আর এক কিংবদন্তি রোনাল্ডো এখনও পর্যন্ত একবারই এক ম্যাচে চার গোল করেছিলেন। ২০১৫-’১৬ মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্রুপ পর্বে রিয়াল মাদ্রিদ ৮-০ হারিয়েছিল মালমোকে। সি আর সেভেন করেছিলেন চার গোল। এ ছাড়া এক ম্যাচে চার গোল করার তালিকায় জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ, মারিয়ো গোমেজ, মার্কো ফান বাস্তেন, সিমোনে ইনজ়াগি, রুদ ফান নিস্তেলরুই, আন্দ্রে শেভচেঙ্কোর মতো তারকারাও রয়েছেন। কিন্তু মাত্র ১৪ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে চার গোল একমাত্র লেয়নডস্কিই করেছেন।
এই মরসুমেই অবিশ্বাস্য ফর্মে বায়ার্ন স্ট্রাইকার। এখনও পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৩টি ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন ৫১টি। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সাতটি ম্যাচে করেছেন ১০টি গোল। দুরন্ত সাফল্যের রহস্যটা কী? ম্যাচের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেয়নডস্কি লিখেছেন, ‘‘আমি স্বীকার করছি, গোল করাটাই আমার নেশা।’’ জার্মানির সংবাদ মাধ্যমকে ৩১ বছর বয়সি তারকা বলেছেন, ‘‘আরও দু’টো গোল হতে পারত। যাই হোক, দারুণ উপভোগ করলাম ম্যাচটা। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলের জয়। আমি গোল করলাম কি না, তা নিয়ে ভাবি না কখনও।’’
রেড স্টারের বিরুদ্ধে হয়তো মেসির এক ম্যাচে পাঁচ গোলের নজিরও স্পর্শ করতে পারতেন লেয়নডস্কি। কিন্তু ৭৭ মিনিটে তাঁর জায়গায় মুলারকে নামান বায়ার্নের অন্তর্বর্তী ম্যানেজার হান্স দিয়েতার ফ্লিক। ম্যাচের পরে তিনি বলেছেন, ‘‘লেয়নডস্কি কতটা পেশাদার, আরও এক বার প্রমাণ করল। নিজেকে আরও উন্নত করার জন্য সব সময় ও বাড়তি পরিশ্রম করে।’’
লেয়নডস্কির নজির গড়ার রাতে বায়ার্ন শিবিরে উচ্ছ্বাস হান্সকে নিয়েও। ব্যর্থতার দায় নিয়ে গত ৩ নভেম্বর দায়িত্ব ছাড়েন নিকো কোভাচ। অন্তর্বর্তী ম্যানেজার করা হয় হান্সকে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই নাটকীয় ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বায়ার্ন। হান্সের কোচিংয়ে যে চারটি ম্যাচে খেলেছেন লেয়নডস্কিরা, সব ক’টিতেই জিতেছেন তাঁরা। মোট গোল করেছেন ১৬টি। এখনও পর্যন্ত কোনও গোল খাননি! দুরন্ত জয়ের পরে হান্স বলেছেন, ‘‘কৃতিত্ব ফুটবলারদেরই। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা খেলতে পেরেছি বলেই এই সাফল্য।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘মজবুত রক্ষণ বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগায়। যা আক্রমণাত্মক খেলতে সাহায্য করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy