দাপট: প্রথম উইকেটে ১৩৫ তুলে দিল রোহিত-রাহুলের জুটি। এএফপি
পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ওপেনিং জুটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না ভারতকে। রো-রা যে এসে গিয়েছে!
রো-রা মানে রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুল। রোহিতের ৩৪ বলে ৭১ রানের ইনিংসে রয়েছে ছ’টি চার, পাঁচটি ছয়। ৫৬ বলে ৯১ করার পথে রাহুল মেরেছে ন’টি চার, চারটি ছয়। এই জুটি বুধবার ওয়াংখেড়েতে যে তাণ্ডব চালাল, তার পরে আর শিখর ধওয়নের নাম ভাবা যায় না। মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপটা আর খেলা হবে না ধওয়নের।
ভারতের একটা সমস্যা কয়েকটা ম্যাচে দেখা গিয়েছিল। প্রথম ছয় ওভারে বড় রান তুলতে না পারা। এই ম্যাচে দেখলাম, প্রথম ওভার থেকেই দ্রুত রান তোলার জন্য ঝাঁপিয়েছে ওপেনাররা। ছয় ওভারে উঠে গেল ৭২ রান। বিশ্বকাপে ভাল কিছু করতে গেলে শুরুতে এই রকম ঝড়টা খুব দরকার।
রোহিতের স্টান্সেও একটু পরিবর্তন দেখলাম। বাঁ-পাটা মিডউইকেটের দিকে একটু খুলে দাঁড়াচ্ছিল। মানে পায়ের চেটো কিছুটা মিডঅন-মিডউইকেট অঞ্চলের দিকে ছিল। এর ফলে অন সাইডে শট খেলার জন্য একটু বেশি জায়গা পাচ্ছিল রোহিত। শেল্ডন কটরেলের ভিতরে ঢুকে আসা বলগুলোকে অন সাইডে সহজে খেলতে পারছিল। কটরেলের দ্বিতীয় ওভারে মিডউইকেটের উপর দিয়ে মারা ছয়টা যেমন একটা উদাহরণ।
উল্টো দিকে রাহুল থাকায় রোহিতের উপরে বাড়তি চাপও পড়েনি। রাহুল টেকনিক্যালি খুবই ভাল ব্যাটসম্যান। শুরুর দিকে ওর শটগুলোর মধ্যে শক্তির চেয়েও টেকনিকের প্রয়োগ বেশি থাকে। আরও প্লাস পয়েন্ট হল, শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলতে পারে রাহুল। যেটা ধওয়নের ক্ষেত্রে বলা যাবে না।
প্রথম উইকেটের জুটিতে ১১.৪ ওভারে ১৩৫ রান। কোনও সন্দেহ নেই, ওয়াংখেড়ের পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য খুবই ভাল ছিল। কিন্তু সেটা মাথায় রেখেই বলছি, এ রকম বিধ্বংসী ব্যাটিং খুবই কম দেখা যায়। রোহিত-রাহুল যেটা শুরু করেছিল, সেটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল বিরাট কোহালি। ও যে সব ধরনের ক্রিকেটেই সম্রাট, সেটা আবার বুঝিয়ে দিল ভারত অধিনায়ক।
ভারত এক বার এক বার তিন উইকেটে ২৪০ রান তুলে ফেলার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যালেঞ্জটা খুবই কঠিন ছিল। শেষ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান ইনিংস থামল ৮ উইকেটে ১৭৩ রানে। ২-১ সিরিজ জিতে নিল ভারত।
আগামী বছরের বিশ্বকাপের জন্য এই সিরিজটা একটা পরীক্ষার মঞ্চ ছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে। ওপেনার হিসেবে রাহুল এই মঞ্চ থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেয়ে গেল। কিন্তু এক জনকে নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। ঋষভ পন্থ। এত সুযোগ আর কোনও তরুণ ক্রিকেটারকে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। এ দিন ওকে তিনে নামিয়েছিল কোহালি। হাতে আট ওভার মতো সময়। কিন্তু কী করল? দ্বিতীয় বলেই উইকেটটা ছুড়ে দিয়ে এল। প্রশ্ন উঠবে, এর পরেও সঞ্জু স্যামসন বাইরে কেন? তবে সঞ্জুকে যে ভাবে বাইরে রাখা হচ্ছে, তা দেখে আমার মনে হচ্ছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভেবেই রেখেছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। ঋষভের জায়গায় ধোনি হেঁটে হেঁটে দলে ঢুকে যাবে।
এ দিন দলটা ভালই বেছেছিল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে বেশ কয়েক জন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান আছে বলে লেগস্পিনার (যুজবেন্দ্র চহাল) এবং বাঁ-হাতি স্পিনারকে (রবীন্দ্র জাডেজা) বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক সিদ্ধান্ত। তার জায়গায় কুলদীপ যাদবকে অনেক দিন পরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফেরানো হল। কুলদীপ বাঁ-হাতি হলেও ও চায়নাম্যান বোলার। অর্থাৎ ওর বলটা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বাইরের দিকে যাবে। সঙ্গে গুগলির বৈচিত্র তো আছেই। গুরুত্বপূর্ণ সময় দু’উইকেট নিয়ে কুলদীপ বুঝিয়ে দিল, রিস্টস্পিনারের গুরুত্ব কতটা।
এই ম্যাচে হয়তো কুলদীপ-চহাল একসঙ্গে খেলল না, কিন্তু পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কুল-চা জুটিকে চাই। এই দুই রিস্টস্পিনার সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে মাঝের আট ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় উইকেট তোলা মানে রান রেটও কমে যাওয়া। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে তাই এই দু’জনকে খুবই দরকার।
মহম্মদ শামিকে এই ম্যাচে দেখে নেওয়ার সিদ্ধান্তটাও খুব ভাল। টেস্টে শামি এই মুহূর্তে ভারতের সেরা বোলার। যশপ্রীত বুমরা বাইরে থাকায় শামিকে ফিরিয়ে আনা খুব দরকার ছিল। শামিও দুই উইকেট তুলে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার মর্যাদা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy