Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অভাবের সঙ্গে লড়াইয়ে কুংফু হাতিয়ার শান্তনুর

জেদের কাছে হার মানল অভাব। ব্রুসলি গ্লোবাল গোল্ড কাপ স্পোর্টস জিতকুনেডু চ্যাম্পিয়ানশিপে যোগ দিয়ে ২টি সোনা ও ১টি রুপোর পদক নিয়ে ফিরলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শান্তনু মণ্ডল। জিতকুনেডু ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া, ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস জিতকুনেডু ফেডারেশনের উদ্যোগে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়রি মুম্বইয়ে এই প্রতিযোগিতাটি হয়।

শান্তনু মণ্ডল। -নিজস্ব চিত্র

শান্তনু মণ্ডল। -নিজস্ব চিত্র

সুমন ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

জেদের কাছে হার মানল অভাব। ব্রুসলি গ্লোবাল গোল্ড কাপ স্পোর্টস জিতকুনেডু চ্যাম্পিয়ানশিপে যোগ দিয়ে ২টি সোনা ও ১টি রুপোর পদক নিয়ে ফিরলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শান্তনু মণ্ডল। জিতকুনেডু ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া, ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস জিতকুনেডু ফেডারেশনের উদ্যোগে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়রি মুম্বইয়ে এই প্রতিযোগিতাটি হয়।

শান্তনুর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার নিশানচক গ্রামে। শান্তনুরা এক ভাই ও এক বোন। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে বিঘে দুই জমি। তাতে চাষ করেই বাবা-মায়ের কষ্টের সংসার। মেদিনীপুর কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক হওয়ার পরেই আর্থিক অনটনে পড়া ছাড়তে বাধ্য হন শান্তনু। বাবা-মাকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার জন্য ছাত্রাবস্থায় তিনি শিখে নিয়েছিলেন ছোট চার চাকার গাড়ি ও লরি চালানো। সেই বিদ্যেটাই কাজে লাগিয়ে সংসারের পাশাপাশি এখন লালন করে চলেছেন তাঁর বহু দিনের স্বপ্নকে। নিত্য অভাবের সঙ্গে যুদ্ধে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হলেও তিনি ছাড়তে পারেননি কুংফুকে।

এরই মধ্যে ছয় বছর আগে তাঁর মার্শাল আর্টের কোচ তপন পণ্ডিত মেদিনীপুর ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে যান। এখন চিত্রতারকাদের ‘ফাইট’ শেখান তিনি। সেখানে একটি কুংফু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছেন তপনবাবু। তাই কোচ ছাড়াই চলত অনুশীলন। তবে কোনও অসুবিধে হলে ফোনে কোচের সঙ্গে কথা বলা। প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশিক্ষণের ভিডিও দেখা। এ ভাবেই চলত শান্তনুর অনুশীলন। গত বছরেই দিল্লিতে হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়ানশিপে তৃতীয় হওয়ায় সোনা না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে গিয়েছিল তাঁর মনে। এ বার দু’টি স্বর্ণপদক মেলায় বেজায় খুশি তিনি। ছাত্রের সাফল্যে খুশি তপনবাবু মুম্বই থেকে ফোনে বললেন, “আমি বলিউড ছেড়ে যাই কী ভাবে। তাই হোয়াটসঅ্যাপে প্রশিক্ষণের নানা ছবি পাঠাতাম, যা দেখেই ওরা অনুশীলন করত।” এই ভাবেই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দু’টি সোনা ও একটি রুপো— যা দেখে বিস্মিত অনেকেই। কোচ তপন পণ্ডিতের কথায়, “তৃতীয় বিশ্বকাপেও শান্তনু ভাল ফল করবে। শান্তনুর লড়াই বাকিদেরও উত্সাহিত করবে বলেই আমার আশা।”

এত খুশির মধ্যে একটা আশঙ্কাও উঁকি মারছে শান্তনুর মনে। এ বার তাঁর লক্ষ্য, লন্ডনের তৃতীয় ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়ানশিপ। শান্তনুর কথায়, “মুম্বইয়ে যেতে-আসতে প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। অল্প টাকা বলে গাড়ি চালিয়েই জোগাড় করে নিয়েছিলাম। কিন্তু বিদেশ যেতে তো অনেক খরচ। জানি না, শুধু গাড়ি চালিয়ে সেই টাকাটা জোগাড় করতে পারব কি না।” যদি টাকা বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সুযোগ মেলে, তা হলে তৃতীয় ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন বলেই আশাবাদী শান্তনুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantau Mondal Kung fu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE