যুযুধান: প্রাক্তন সহকারী সূর্যশেখরের বিরুদ্ধে শেষ রাউন্ডে আনন্দ। ছবি: গেমপ্ল্যান।
দাবার ভাষায় একেই বোধহয় বলা যায় শেষ রাউন্ডে কিস্তিমাত। রবিবার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় যা করে দেখালেন কলকাতায় টাটা স্টিল দাবা প্রতিযোগিতায়।
রবিবার র্যাপিড বিভাগের শেষ তিনটি রাউন্ডের খেলা ছিল। সেখানে প্রথম বার বিশ্বনাথন আনন্দের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমে কিংবদন্তি ভারতীয় দাবাড়ুকে হারিয়ে দিলেন তাঁর প্রাক্তন সহকারী সূর্য। অথচ এর আগে দু’দিন সূর্য শুরুটা ভাল করেও সাফল্য পাচ্ছিলেন না। টানা চারটি হারের পরে এ দিন সপ্তম রাউন্ডে ড্র করে ফের হারেন অষ্টম রাউন্ডে। সেই অবস্থায় খেলতে নেমে দুরন্ত ভাবে নবম রাউন্ডে জয় তুলে নেন সূর্য।
উচ্ছ্বসিত বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার ম্যাচের পরে বলছিলেন, ‘‘এর আগের রাউন্ডগুলোতে কারইয়াকিন বা অ্যারোনিয়ানের সঙ্গে ভাল পজিশনগুলো মিস করছিলাম। বিদিতের বিরুদ্ধে (এই গেমে ভারতের তিন নম্বর দাবাড়ু বিদিত গুজরাতির কাছে তিনি হারেন) আজকের ম্যাচটাতেও এক সময় ভাল জায়গায় ছিলাম। কিন্তু বেশ কয়েকটা গেমেই একটা জায়গায় পৌঁছনোর পরে আর এগোতে পারছিলাম না। শেষ রাউন্ডে আনন্দের সঙ্গে খেলতে বসে তাই আগের গোমগুলো নিয়ে ভাবিনি। গেমটা উপভোগ করছিলাম শুধু।’’
আনন্দের বিরুদ্ধে নামার আগে কি কোনও চাপে ছিলেন? সূর্য বলেন, ‘‘সাধারণত দু’জন খেলোয়াড় মুখোমুখি হওয়ার সময় যে বেশি শক্তিশালী তার উপরে চাপটা বেশি থাকে। তা ছাড়া আমার তো হারানোর কিছু ছিল না। তাই শেষ রাউন্ডের আগে কিছু মাথায় রাখিনি। এই গেমটায় আমার সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক হয়েছে। একবার আমার ভাল পজিশন আসার পরে আমি আর কোনও সুযোগ ফস্কাইনি।’’
দীর্ঘদিন আনন্দের সহকারী থাকাটাও কোনও আলাদা সুবিধে দিয়েছে এই গেমে মানতে চাননি সূর্য। ‘‘আনন্দের সঙ্গে দীর্ঘ দিন সহকারী হিসেবে কাজ করেছি বলে যে এই গেমটায় আমার কোনও আলাদা করে সুবিধে ছিল তা নয়। আনন্দের কাছে সব সময়ই আমি শিখেছি, সেটা জীবনের প্রত্যেকটা গেমেই আমার কাজে লেগেছে। আমার গোটা খেলোয়াড় জীবনে আনন্দের বিরাট অবদান রয়েছে। তবে অবশ্যই আনন্দের বিরুদ্ধে প্রথম বার কোনও টুর্নামেন্টে খেলা এবং কালো ঘুঁটি নিয়ে জিতে, বিশেষ একটা অনুভূতি হচ্ছে। আরও ভাল লাগছে খেলাটা ভাল হয়েছে বলে।’’
দেশের মাটিতে দু’দশকেরও পরে এ রকম বড় মাপের একটা প্রতিযোগিতায় নেমেও আনন্দ ন’টা রাউন্ডে একটাও জয় পেলেন না। তা হলে কি তার কেরিয়ার শেষের দিকে? সদ্য তাঁকে হারিয়ে ওঠা সূর্যশেখর তা মনে করছেন না। তিনি বললেন, ‘‘কথায় আছে, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। আমরা যার কথা বলছি ভুলে গেলে চলবে না সে বর্তমানে র্যাপিড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আর এই যে আমি আনন্দকে হারিয়ে দিলাম, এতে কিছু যায় আসে না। একটা গেমে এ রকম হতেই পারে। তবে দিনের শেষে আনন্দ, আনন্দই।’’
সূর্য যাই বলুন, পাঁচ বারের বিশ্বসেরা, গত বছরের র্যাপিড বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারানোটা মোটেই সোজা ছিল না। গত দু’দিনে বিশ্বের তাবড় দাবাড়ুাও যা পারেননি। আসলে সূর্যর বিরুদ্ধে ২৬ এবং ২৭ নম্বর চালে আনন্দের ভুল করে বসাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগান সূর্য পাল্টা তাঁকে চাপে ফেলে দিয়ে। শেষ পর্যন্ত ৩৭ চালের মাথায় আনন্দ হার মানতে বাধ্য হন।
সূর্যর চমকের পাশাপাশি র্যাপিড বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের হিকারু নাকামুরা। তিনি ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শেষ করলেন। সাড়ে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে লেভন অ্যারোনিয়ান এবং ভারতের পেন্টালা হরিকৃষ্ণ। বিশ্বনাথন আনন্দ পঞ্চম স্থানে। তাঁর পয়েন্ট চার। তালিকায় সবার শেষে আড়াই পয়েন্ট নিয়ে সূর্য। তবে শেষে থাকলেও সূর্য বোধহয় বলতেই পারেন, শেষ ভাল যার, সব ভাল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy