জয়োল্লাস: অঘটন ঘটাতে ঘটাতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল সুইডেন। মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে সুইৎজারল্যান্ডকে হারিয়ে হুঙ্কার আলবিন একদালের। ছবি: গেটি ইমেজেস
সুইডেন ১ • সুইৎজ়ারল্যান্ড ০
দুরন্ত প্রত্যাবর্তন। আট বছর পরে বিশ্বকাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করেই শেষ আটে পৌঁছে গেল সুইডেন।
২০০৬ বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ, ফেদ্রিক লুমবার্গ-দের সুইডেন। অথচ পরের দু’টো বিশ্বকাপে মূল পর্বে যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেননি তারা। ফুটবল পণ্ডিতেরাও রাশিয়া বিশ্বকাপে সুইডেনকে নিয়ে খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না। দলে তারকা বলতে একমাত্র ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার ভিক্টর লিন্ডেলঅফ। তার উপর ‘এফ’ গ্রুপে সুইডেনের সঙ্গেই ছিল জার্মানি, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু প্রথম ম্যাচ থেকেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দেশের ফুটবলারেরা। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়েছিলেন এমিল ফোসবার্গরা। দ্বিতীয় ম্যাচে জার্মানির বিরদ্ধে হেরে যান তাঁরা। কিন্তু শেষ ম্যাচে মেক্সিকোকে বিধ্বস্ত করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় পৌঁছে যায় সুইডেন।
মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে ‘ই’ গ্রুপ থেকে রানার্স হয়ে ওঠা সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সুইডেন অবশ্য শুরু থেকেই সতর্ক ছিল। রক্ষণ শক্তিশালী করে প্রতি আক্রমণে গোল করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। জারদান শাচিরি-র নেতৃত্বে শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিল সুইৎজ়ারল্যান্ড। ৬৩ শতাংশ বল ছিল শাচিরি-দের দখলে। সুইডেনের গোল লক্ষ্য করে ১৮টি শট মেরেছিলেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের ফুটবলারেরা। যার মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছয় চারটি। সুইডেনের ফুটবলারেরা প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে মেরেছিলেন ১২টি শট। লক্ষ্য পৌঁছয় তিনটি শট। সুইজ়ারল্যান্ড কর্নার আদায় করে ১১টি। সুইডেন পেয়েছে মাত্র তিনটি কর্নার। শাচিরি-রা পুরো ম্যাচে পাস খেলেছেন ৬০০টি। যার মধ্যে ৫০১টি নিখুঁত। সুইডেন খেলেছে মাত্র ২৭০টি পাস। নিখুঁত পাসের সংখ্যা ১৯৮টি। অথচ ৬৬ মিনিটে নাটকীয় ভাবে বদলে যায় ম্যাচের ছবি।
সুইৎজ়ারল্যান্ডের পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে ফোসবার্গের নেওয়া শট ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকানজির পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। ম্যাচের সেরাও হন তিনি।
পিছিয়ে পড়েও অবশ্য দমে যাননি সুইৎজ়ারল্যান্ডের ফুটবলারেরা। গ্রুপ লিগে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে তার পুনরাবৃত্তি হল না। সুইডেনের রক্ষণের চক্রব্যূহে আটকে গেলেন শাচিরি-রা। বরং, গতির বিরুদ্ধে সুইডেনই ফের গোল করার সুযোগ পেয়েছিল। সংযুক্ত সময়ে প্রতি আক্রমণ থেকে বল নিয়ে সুইৎজ়ারল্যান্ডের গোলের দিকে দৌড়তে শুরু করেন মার্টিন ওলসেন। তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা মারেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের ডিফেন্ডার মিশায়েল লাং-কে। ওলসেন মাঠে পড়ে যেতেই পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। লাল কার্ড দেখান লাং-কে কিন্তু ভিডিয়ো অ্যাসিট্যান্ট রেফারি (ভার) সব দেখে সিদ্ধান্ত নেয় পেনাল্টি বক্সের বাইরে ওলসেনকে ধাক্কা দিয়েছেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের ডিফেন্ডার। সিদ্ধান্ত বদলে বক্সের বাইরে ফ্রি-কিকের নির্দেশ দেন রেফারি। যদিও লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেননি তিনি।
আরও পড়ুন: পেনাল্টির রাজা হয়ে উঠছেন হ্যারি কেন
আট বছর পরে সুইডেনকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে কেঁদে ফেলেন ফোসবার্গ। বলেছেন, ‘‘সুইৎজ়ারল্যান্ড অনেক গোলের সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আমরা প্রমাণ করলাম, জিততে ভুলে যাইনি। প্রচণ্ড গর্ব অনুভব করছি।’’ ম্যাচের পরে কান্না নিয়ে ফোসবার্গের ব্যাখ্যা, ‘‘কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠায় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।’’ সুইডেনের কোচ ইয়ানে আন্দারসন বলেছেন, ‘‘গ্যালারি থেকে দর্শকেরা যখন আমার জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন, অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। দলগত সংহতিই আমাদের প্রধান অস্ত্র। দ্রুত উচ্ছ্বাস ভুলে পরের ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy