মাঠে হাফসেঞ্চুরি করার পথে। ছবি: এপি।
ঋদ্ধিমান সাহার কছে ম্যাচের পর প্রথম পৌঁছয় ধোনির অভিনন্দন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে খেলার পর এসএমএস করেছিলেন।
গর্বিত ঋদ্ধি জীবনের প্রথম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি করে উঠে নিজেই লক্ষ্মীরতন শুক্লকে ফোন করেছিলেন। বলেছেন, তোরা শ্রীলঙ্কা আসছিস তো। কোনও চিন্তা করিস না। আমি সব বলে দেব।
টুইটারে টিম হোটেলে নিজের ছবিও রাতে পোস্ট করেছেন।
আপনি যদি ঋদ্ধিমান সাহাকে না চেনেন তা হলে আপনার মনে হবে ওপরের সব ক’টা ঘটনাই সত্যি। আপনি যদি ঋদ্ধিকে সামান্যও চিনে থাকেন, তা হলে আপনার খটকা লাগবে, এগুলো সত্যি তো?
আর এটাই সত্যি যে ওপরে বলা চারটে পরিস্থিতির একটাও সত্যি সত্যি ঘটেনি। উইকেটকিপার, গোলকিপার এরা চরিত্র হিসেবে সাধারণত খুব মজাদার, উদ্যমী হয়। আবেগপ্রবণ হয়। ঋদ্ধি হলেন এই ঘরানার সবচেয়ে বড় ফ্যালাসি।
তাঁর জীবনে নাটক নেই। রং নেই। ভিড় নেই। সামাজিকতা নেই। মোবাইল ফোনও পারতপক্ষে নেই।
বৃহস্পতিবার রাতে সমুদ্রতীরবর্তী গলের হোটেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে যেমন মনে হল একটা মানুষ ক্রিকেটজীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনে কী করে এত অনাবেগী, নিস্পন্দ থাকতে পারে। এমনিতে প্লেয়ারের সঙ্গে আর একক ভাবে কথা বলার সুযোগ নেই। কাজেই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতই চলতে পারে। বা ছবি তোলা। কিন্তু এক্সক্লুসিভ প্রশ্নোত্তর একমাত্র প্রেস কনফারেন্সে।
এক্ষেত্রে তাতে বিরাট কোনও ক্ষয়ক্ষতি নেই। কেন?
ঋদ্ধিজ্মের কিছু নমুনা তুলে দিচ্ছি:
ঋদ্ধি জানতেন না বাংলার কোচ হয়েছেন বাহুতুলে। কাল জানতে পারেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মুখে।
ঋদ্ধির সঙ্গে আজকের ইনিংসের পরেও বাংলার কোনও সহ ক্রিকেটারের কথা হয়নি। কারণ শ্রীলঙ্কান মোবাইল নম্বরটা তো বাড়ির লোক ছাড়া কারও কাছে নেই।
কলকাতাতেও কারও সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকে না। মোবাইলটা তাঁর মতো সাইলেন্ট মোডে থেকে যায়।
তিনি টুইটারে, ফেসবুকে থেকেও নেই। কাগজ পড়েন না। নিউজ চ্যানেল দেখেন না। বহিজর্গতের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই রাখেন না। অ্যাক্টিভিটি বলতে বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে খেলা। নিজে প্লে স্টেশন খেলা। আর সুযোগ পেলে ভাল সিনেমা দেখা।
ঋদ্ধি জানতেন বাংলার হয়ে শেষ টেস্ট হাফসেঞ্চুরি করেছেন দীপ দাশগুপ্ত। মানে তিনি জানতেন সৌরভ খেলা ছাড়ার পরেও দীপ ভারতের হয়ে খেলেছেন। আদতে দীপ ভারতের হয়ে শেষ খেলেন ২০০২-এ। কী বোঝা গেল? যে সাম্প্রতিক ক্রিকেট ইতিহাস সম্পর্কেও তাঁর কোনও উৎসাহ নেই। পঙ্কজ রায়-টায় তো পূর্বজন্ম!
বাঙালি ক্রিকেটারদের মধ্যে জাগতিক জীবন সম্পর্কে এত নিস্পৃহ আর উদাসীন হিসেবে একমাত্র তুলনা বোধহয় অম্বর রায়। কিন্তু অম্বরও হয়তো এই ২৪x৭ যোগাযোগের দুনিয়ার তরুণ হলে অম্বরোচিত থাকতেন না। এই যে শ্রীলঙ্কা খেলতে এসেছেন ঋদ্ধি আর পাঁচ জন কিপার যেমন প্রাক্তনদের কাছে খোঁজ নিত। জিজ্ঞেস করত স্টান্সটা ওই পিচে কেমন হওয়া উচিত? ঋদ্ধি ও সবের কিছু করেননি।
বাই রান দেওয়ায় তাঁর যতটা অনাগ্রহ বেশি সংলাপ বলাতেও তাই! ঋদ্ধির জীবনদর্শন খুব সহজ— পরিশ্রম করো। জিমে যাও। তৈরি থাকো। মাঠে কিটস নিয়ে টাইম মতো পৌঁছে যাও। তার পর জাস্ট ছেড়ে দাও। যেমন ঘটবে মানিয়ে নেবে। অন্য কেউ হলে আসার আগে ধোনিকে নিদেনপক্ষে একটা ফোন করত। এখনও তো তিনি ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন। সিএসকের প্রাক্তন সতীর্থ। ঋদ্ধি সেটাও করার প্রয়োজন দেখেননি।
কালকের ক্যাচ ফেলাটা নিয়ে অবশ্য তাঁকে ঘোর অনুতপ্ত দেখাল। একটাই ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন যে ইশান্তের বলটা হঠাৎ ডিপ করে গেছিল বলে বোধহয় স্টেপিংয়ে ভুল হল। ডিনার খেতে যাওয়ার সময় তাঁকে দেখে মনে হল ঋদ্ধির আশেপাশের পৃথিবী তাঁকে ঘিরে যতটা স্বস্ত তিনি এখনও ততটা আবেগ প্রকাশের কারণ দেখছেন না। বা আবেগ ভেতরে আছে, তার প্রকাশ নেই।
নির্বাচক সাবা করিম যেমন এসে বলে গেলেন, তোমার রান পাওয়াটা টিমকে একটা বড় দুর্ভাবনা থেকে বাঁচাল। পাঁচ জন ব্যাটসম্যানের ফর্ম্যাটে নাম্বার সিক্স ব্যাটসম্যান ফেল করলে খুব প্রবলেম হয়ে যেত। শুনলাম রবি শাস্ত্রীও বলেছেন ভেরি ওয়েল প্লেড। কোহলি ড্রেসিংরুমের বাইরে কতটা উচ্ছ্বসিত ছিলেন সে তো টিভি ক্যামেরাই দেখিয়েছে।
কিন্তু ঋদ্ধি এগুলো নিয়ে কী বলবেন? নিজের ক’জোড়া কিপিং গ্লাভস আছে তা-ই যাঁর খেয়াল নেই, তাঁকে জাগতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বেশি খোঁচাখুঁচি করে লাভ কী!
জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলাম আচ্ছা কোহলির মোবাইল নাম্বারটা আছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy