বুধবার আবু ধাবিতে কিং খানের যেমন মেজাজ।
শাহরুখ খানের দু’বছর আগের সেই ‘সামারসল্ট’ এখনও ভোলেননি সুনীল গাওস্কর! “চেন্নাইয়ে আইপিএল-ফাইভে কেকেআর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মুহূর্তে মাঠে খান সাহেবের সেই ডিগবাজি দেওয়াটা ছিল অসাধারণ। এ দিনও তো মনে হচ্ছিল, ম্যাচ জিততেই ভিআইপি গ্যালারি থেকেই ও ওই রকম একটা লাফ মারতে চাইছিল!”
রবি শাস্ত্রী পুরস্কার অনুষ্ঠান শেষ করেছেন কয়েক মিনিট হয়েছে। আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ শেষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্তটা সৃষ্টি হল টিভির পর্দায় তার পরেই। নাইটদের বিখ্যাত মালিক শাহরুখ খান আর বোর্ডের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট সুনীল গাওস্করের যুগলবন্দি। মানে, বলিউড আর বাইশ গজের দুই আইকনের যৌথ ইন্টারভিউ।
গাওস্কর: সুনীল নারিনের বোলিং কমেন্ট্রি বক্সে বসে টিভির স্লো মোশানেও বুঝতে পারি না। প্রত্যেক বোলারের স্পেশ্যাল ডেলিভারির সময় একটা না একটা কিছু নতুনত্ব থাকে। হয় এক কদম বেশি রান-আপ নেয়। গ্রিপিংয়ে সামান্য অদলবদল থাকে। কিন্তু এই ছেলেটার সামান্যতম বদলটা ডেলিভারির এত শেষ মুহূর্তে ঘটে যে, ব্যাটসম্যানের পক্ষে ধরা অসম্ভব যে বল ভেতরে আসবে না বাইরে যাবে!
শাহরুখ: আমার আবার টিমের সঙ্গে থাকলে একটুআধটু নেটে নেমে পড়ার বদভ্যাস আছে। কিন্তু তিন বছর চলছে, এক দিনও নারিনের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নেটে দাঁড়ানোর সাহস দেখাইনি। তবে একটা ইচ্ছে আছে খুব। এ বার আইপিএলের মধ্যে এক বার অন্তত সুনীল ভার্সাস সুনীল করার। সুনীল গাওস্কর ব্যাটসম্যান, সুনীল নারিন বোলার।
নীল জিনস্, সঙ্গে সাদা ঢলঢলে টি-শার্ট। পায়ে স্নিকার। গাল ভর্তি সস্নেহে কয়েক দিনের না-কামানো দাড়ি। শাহরুখ যেন মুম্বইকে হারানোর আনন্দে বাড়তি উচ্ছ্বসিত। যে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা বছর দুয়েক আগে নাইটদের কাছে ঘরের মাঠে হারার শোকে শাহরুখের ওয়াংখেড়েতে ভবিষ্যতে ঢোকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। শাহরুখ নাকি ম্যাচ শেষে মাঠে এসে একটু বেশি ‘আনন্দ’ করে ফেলেছিলেন! এ বার তাই প্রথম ম্যাচেই মুম্বইকে হারানোর আনন্দে পারলে আর এক বার ‘সামারসল্ট’ দিতে যাচ্ছিলেন গ্যালারির উপর থেকেই?
নিজের স্বভাবসিদ্ধ হেঁচকি তোলার স্টাইলে হেসে নিয়ে কিং খানের জবাব; “মুম্বইকেই শুধু নয়, গত বারের চ্যাম্পিয়নদের প্রথম ম্যাচেই হারানোর আনন্দে! আসলে ব্যাপারটা হল, আমাদের দলে আমিই একমাত্র গুন্ডা। বাকি সবাই জেন্টেলম্যান। আর এ বার প্রথম ম্যাচ থেকেই প্র্যাকটিস করছি, গ্যালারির উপর থেকে একটা জবরদস্ত সামারসল্ট দেওয়ার। যাতে উপরে উঠতে-উঠতে ফাইনালের দিন একেবারে ওই উপর থেকে সামারসল্টটা দিতে পারি।” বলার সময় শাহরুখের হাত আকাশের দিকে উঠল। হাত নয়, বজ্রমুষ্টি-র হাত! ২২ তারিখের পর আবার মাঠে আসবেন শাহরুখ। তবে তার চেয়েও বড় খবরটা এ দিন দিয়ে গেলেন কিং খান, “ভারতে সব ক’টা ম্যাচেই মাঠে থাকব।”
নাইটদের মালিক তার পর ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলেন, কেকেআরের বিশেষত্ব নিয়ে। “আমাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তি, এই টিমের প্রত্যেকে অন্যের পাশে থাকে। একে অন্যের দরকারে সব সময় তৈরি।” ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণ করতেও ছাড়লেন না বলিউড কাঁপানো ‘লুঙ্গি-ডান্সার’! “আমাদের সাত নম্বর পর্যন্ত ব্যাটিং গভীরতা। বোলিংয়ে অগাধ বৈচিত্র। সাত জন বোলার আছে যারা প্রত্যেকে উইকেট তুলতে পারে। আর কালিসকে নিয়ে কী বলব! আম্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলায় একেবারে চাঙ্গা হয়ে আছে। ম্যাচের আগে ওর সঙ্গে কথা বলার সময় কালিস বলছিল, ও এখন ক্রিকেটটাকে স্রেফ উপভোগ করছে। আর কয়েকটা ক্রিকেট-বছর ওর সামনে পড়ে আছে। সেটা ও উপভোগ করতে চায়। আর কেউ কোনও কাজ উপভোগ করলে সেই কাজটা ভাল করবেই। সুনীল স্যারও ওর ক্রিকেট জীবনের শেষের দিকে একই কথা বলতেন। আমার কাছে গ্রেট গ্রেট গ্রেট আইকন ক্রিকেটার সুনীল গাওস্কর।”
শাহরুখের দিকে তখন একটা অদ্ভুত তৃপ্তির মুখ করে তাকিয়ে আইকন ক্রিকেটার গাওস্কর। থুড়ি, অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড প্রেসিডেন্ট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy