মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারাল ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর ১০ জন খুদে ফুটবলার। আরও তিন জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করতে হয়েছে হাসপাতালে।
ভয়ঙ্কর এই ঘটনা ঘটে শুক্রবার কাকভোরে ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাবের যুব দলের ট্রেনিং সেন্টার লাগোয়া ডর্মিটরিতে হঠাৎ আগুন লেগে যাওয়ায়। মৃতদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে ফ্ল্যামেঙ্গোর নিনহো দা উরুবু ট্রেনিং সেন্টারে মৃতদের সবাই যে খুদে ফুটবলার তা নিশ্চিত। আগুন লাগার কারণ পরিষ্কার নয়। তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাণ হাতে বেরিয়ে আসা ফ্ল্যামেঙ্গোর অনূর্ধ্ব সতেরো দলের এক ফুটবলার ফেলিপে কার্দোসো বলেছে, ‘‘আগুন ধরেছিল এয়ার কন্ডিশনারে। কোনও রকমে পালিয়ে এলাম। বেঁচে আছি বিশ্বাস হচ্ছে না।’’
জিকো, রোমারিয়ো, রোনাল্ডিনহোদের ক্লাবে এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ ফুটবল দুনিয়া। পেলে বললেন, ‘‘ব্রাজিলের ফুটবলে চরম দুঃখের দিন।’’ হতবাক রোনাল্ডিনহোর মন্তব্য, ‘‘ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এর থেকে খারাপ খবর কিছু হতে পারে না।’’ নিহতদের পরিচয় জানা না গেলেও তাদের সবাই ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি। ধরে নেওয়া হচ্ছে, আগুন লাগার সময় তারা সবাই ঘুমোচ্ছিল। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাবের সামনে হাজির অসংখ্য মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। শনিবারই এই ক্লাবের ব্রাজিলের সেরি আ-য় ফ্লুমিনেসের সঙ্গে খেলা ছিল। স্বাভাবিক কারণে বাতিল হয়ে গিয়েছে সেই ম্যাচ।
রিয়ো দে জেনেইরোর ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাবের বয়স ১২৩ বছর। মূলত রোয়িং ক্লাব হিসেবে জন্ম। গোটা দুনিয়ায় নামডাক কিন্তু ফুটবল ক্লাব হিসেবে। বিখ্যাত মারকানা এই ক্লাবের স্টেডিয়াম। ব্রাজিলীয় ফুটবলের ইতিহাসে ফ্ল্যামেঙ্গোর কখনও অবনমন হয়নি। অবশ্য সে জন্য নয়, এক ডাকে তাদের সবাই চেনে কারণ এখানেই খেলতেন রোমারিয়ো, জিকো, বেবেতো, রোনাল্ডিনহোর মতো মহাতারকারা।
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অনুয়ায়ী, ফ্ল্যামেঙ্গোর সমর্থকের সংখ্যা ৩ কোটির বেশি। এত জনসমর্থন অবশ্যই ফুটবলের জন্য। যারা শুধু রিয়ো দে জেনেইরোর লিগই জিতেছে ৩৪ বার। ব্রাজিলের সেরি আ লিগ পাঁচ বার। সঙ্গে ১৯৮১ সালে কোপা লিবার্তোদোরেস ও ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপও। বিশ্ব ফুটবলের বহু মহাতারকা সৃষ্টির আঁতুরঘরও ফ্ল্যামেঙ্গো। এখানেই কিছুদিন আগে রিয়াল মাদ্রিদ আবিষ্কার করে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। শুক্রবার সেই আঁতুরঘরই পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। হয়রো মৃতদের মধ্যেই ছিল আগামী দিনের বেবেতো, লিয়োনার্দোরা। স্তম্ভিত ভিনিসিয়াসও টুইট করেছেন, ‘‘কী খারাপ যে খবর! ওদের জন্য শুধুই প্রার্থনা করছি।’’
মহাতারকারা ফ্ল্যামেঙ্গোকে নিয়ে কতটা আবেগপ্রবণ সেটা পরিষ্কার হয় ফিফার অনুষ্ঠানে রোনাল্ডিনহোর মন্তব্যে। বলেছিলেন, ‘‘ছোটবেলায় ফ্ল্যামেঙ্গোর সমর্থকদের দেখে অবাক হতাম। এত এত মানুষ এই একটা ক্লাবের জন্য পাগল বিশ্বাসই হত না। এখন ব্রাজিলে ওদের সমর্থকের সংখ্যা কল্পনার অতীত। আমিও ওদের মতোই একজন। ফ্ল্যামেঙ্গোকে কোনও দিন ভুলতে পারব না।’’