ফুটবল খেলতে স্বপ্নের উড়ানে বিদেশ পাড়ি।
কথাটা শোনার পর থেকেই উত্তেজনায় ফুটছে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ইসমাইল সর্দার, ইয়াকুব আলি, মিলন মুণ্ডারা।
তাদের কারও জন্ম ব্যারাকপুর, বসিরহাটে কারও আবার সোনাগাছির যৌনপল্লিতে। আমলাশোলের মতো প্রত্যন্ত এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেও রয়েছে। এই সমস্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের মূল স্রোতে ফেরানোর কাজ কয়েক বছর আগেই শুরু করেছিল ‘দুর্বার সমন্বয় কমিটি’। তাদের খেলাধুলোর জন্য তৈরি করা হয় স্পোর্টস অ্যাকাডেমিও। এ বার সরাসরি ডেনমার্কে ‘ডানা কাপ’ অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছে তারা।
প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষে ডেনমার্কে ‘ডানা কাপ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। আগামী ২৫-৩০ জুলাই ডেনমার্কে এই প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে। প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগে স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে ২০ জনকে ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেওয়া চলছে। ‘দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমি’র সভাপতি সমরজিৎ জানার কথায়, “যৌনকর্মীদের সন্তানদের ফুটবলের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি জেনে ডানা টুর্নামেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারপর থেকেই আমরা জোরদার প্রশিক্ষণ শুরু করেছি। শীঘ্রই তাদের নিয়ে আবাসিক প্রশিক্ষণও শুরু করা হবে।”
সমাজের একেবারে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে খেলোয়াড়দের বেছে নেওয়া হবে। থাকবে যৌন কর্মীদের সন্তানরাও। সোনাগাছির যৌনপল্লিতে জন্ম নেওয়া অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়, “এত বড় সুযোগ যখন পেয়েছি, লড়াইয়ের ময়দানে নামলে কিছু করে দেখাবই।”
সমস্যাও রয়েছে অনেক। বিদেশে যাওয়ার আগে পরিচয়পত্র করানো, বিপুল খরচের বহর চিন্তা বাড়িয়েছে। সমরজিৎবাবু জানান, ডানা টুর্নামেন্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিযোগিতায় যোগদানের ‘ফি’, থাকা খাওয়ার খরচ পর্যন্ত নিচ্ছে না। কিন্তু যাতায়াতেই যে অনেক খরচ। এক একজনের বিমান ভাড়াই ৬৫ হাজার টাকা। ন্যূনতম ১৪ জন খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার, চিকিৎসক মিলিয়ে আরও ৪ জন। ১৮ জনকে তো যেতেই হবে। তার উপর বিশ্বের খেলোয়াড়দের সঙ্গে টক্কর দিতে হলে তো জুতোটাও একটু দামি চাই। তাই আনন্দের মাঝেও দুঃখটা থেকেই যাচ্ছে মিলনদের। তাদের কথায়, ‘‘আমরা কী জুতো কিনতে পারব। স্যারেরা যা দেন, তা দিয়েই প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। কিন্তু টক্কর দিতে গেলে তো সব কিছুই একটু ভাল দরকার।” সমরজিৎবাবু বলছেন, ‘‘টানা প্রশিক্ষণের মাঝে প্রয়োজন সুষম আহার। আবাসিক প্রশিক্ষণ শিবিরে টানা প্রশিক্ষণ, খাওয়া-দাওয়ার জন্য খরচ ভালই। এটাতেই সমস্যা পড়ে গিয়েছি। সকলের কাছেই সাহায্য চেয়েছি। আমরা আশাবাদী, ভাল কাজে নিশ্চয় সাহায্য মিলবে। আমরা সফল হতে পারব।’’