Advertisement
০২ মে ২০২৪

লিগকে নিরুদ্বেগ করে দিল বাগান

বারাসতে বিকেল পাঁচটা ছেচল্লিশ মিনিটে রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় খেলা শেষের লম্বা বাঁশি যখন বাজালেন তখন তিনি ডালহৌসির অফিসে। মোহনবাগানকে পাঁচ বছর আগে শেষ বার কলকাতা লিগ জেতানো বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য মঙ্গলবারের ডুডু-কাতসুমিদের হারের খবর পেলেন ইস্টবেঙ্গল-ভক্ত এক সহকর্মীর কাছে। ততক্ষণে এগারো দলের ‘সিঙ্গল লেগ’ ফর্ম্যাটের লিগে ডার্বির আগেই পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। বাকি আর পাঁচ ম্যাচ।

গোল খাওয়া (উপরে)। গোল নষ্ট করা। মঙ্গলবার বারাসত স্টেডিয়ামে। ছবি: উৎপল সরকার

গোল খাওয়া (উপরে)। গোল নষ্ট করা। মঙ্গলবার বারাসত স্টেডিয়ামে। ছবি: উৎপল সরকার

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

আর্মি একাদশ-১(জৈন পি) : মোহনবাগান-০

বারাসতে বিকেল পাঁচটা ছেচল্লিশ মিনিটে রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় খেলা শেষের লম্বা বাঁশি যখন বাজালেন তখন তিনি ডালহৌসির অফিসে।
মোহনবাগানকে পাঁচ বছর আগে শেষ বার কলকাতা লিগ জেতানো বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য মঙ্গলবারের ডুডু-কাতসুমিদের হারের খবর পেলেন ইস্টবেঙ্গল-ভক্ত এক সহকর্মীর কাছে।
ততক্ষণে এগারো দলের ‘সিঙ্গল লেগ’ ফর্ম্যাটের লিগে ডার্বির আগেই পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। বাকি আর পাঁচ ম্যাচ। পঁচাত্তরের মতো রেকর্ড ‘হেক্সা লিগ’ কি এ বার লাল-হলুদ তাঁবুতে আপনার হাত ধরে ঢোকার অপেক্ষা? ফোনের ও ধারে হাসলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ। ‘‘লড়াইটা এখনও টাফ-ই।’’
ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার বরং তাঁর দলের কোচের মতো অতশত রাখঢাক করছেন না। ‘‘টিভিতে ওদের ম্যাচটা দেখে ক্লাবে আসার সময় পঁচাত্তরের মুহূর্তগুলো মনে পড়ছিল। বারো দিন বাদে ডার্বিতে নিরুদ্বেগ চিত্তে আমাদের টিম মাঠে নামবে।’’
আর বিদেশিহীন আর্মি একাদশের কাছে হেরে কলকাতা লিগ জয়ের কক্ষপথ থেকে বহু যোজন দূরে সরে যাওয়া বাগান কোচ সঞ্জয় সেন কী বলছেন? ‘‘আই লিগেও তো দু’টো ম্যাচ হেরেছিলাম। আজ ছেলেরা কথা দিয়েছে পরের পাঁচটা ম্যাচ জিতে টিমকে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইতে রাখবে।’’ মুখে এ কথা বললেও আই লিগ জয়ী সঞ্জয় হয়তো বুঝছেন, পাঁচ বছর পর সবুজ-মেরুন তাঁবুতে কলকাতা লিগ আনতে গেলে পরের পাঁচটা ম্যাচ জেতার পরেও অসংখ্য যদি এবং কিন্তুর উপর নির্ভর করতে হবে। তাকিয়ে থাকতে হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর শেষ পাঁচটা ম্যাচের দিকে। আর্মি, এরিয়ান, টালিগঞ্জ, মহমেডানের বাঁধা টপকে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল সেই সুযোগ সঞ্জয়কে দিলে তা সাম্প্রতিককালের বৃহত্তম ময়দানি অঘটন হবে!

তবে পাঁচ ম্যাচে মাত্র আট পয়েন্ট নিয়ে লিগ খেতাবের সরণি থেকে বাগানের দূরে সরে যাওয়ার জন্য কোচকেই সব দোষারোপ করা যায় না। ধনচন্দ্র, কিংশুক, বিক্রমজিৎ-সহ বাগানের বেশ কয়েক জন আইএসএলের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করে বসে রয়েছেন। সেখানে ইস্টবেঙ্গলের অভিষেক দাস আর জোয়াকিম আব্রাঞ্চেজ ছাড়া বাকি সবাই ক্লাবের মাধ্যমে চুক্তি করেছেন। ফলে বিশ্বজিৎ যখন মেহতাব, খাবরা, অর্ণব (এখন অবশ্য জাতীয় দলে), কেভিন লোবোদের (ডার্বিতে যদিও নেই) সার্ভিস কলকাতা লিগে পাচ্ছেন তখন সঞ্জয়ের হাতে কেবল কিপার দেবজিৎ মজুমদার। ক্লাব কর্তারা এমন অবস্থা হবে তা কি জানতেন না?

লিগের প্রথম ম্যাচ থেকেই নড়বড়ে রক্ষণ নিয়ে নামছে বাগান। এ দিন সার্ভিসেসের হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলা সাত ফুটবলারপুষ্ট আর্মি একাদশের অর্জুন টুডু, পি জৈনদের সামলাতে খাবি খেলেন জাতীয় দলে চলে যাওয়া প্রীতম কোটাল বিহীন প্রতীক, সঞ্জয়রা। গোলকিপার শিল্টনের সঙ্গে যাঁদের দূরত্ব কখনও কখনও বেড়ে দাঁড়াচ্ছিল পনেরো, কুড়ি গজও! আর এই অরক্ষিত জায়গায় লম্বা বল ফেলেই সেনারা গতিতে নাস্তানাবুদ করছিলেন বাগান ডিফেন্সকে। না ব্লকিং, না রক্ষণ সংগঠন। কোনওটারই সন্ধান ছিল না।

ইস্টবেঙ্গল আর্মিদের এই চ্যালেঞ্জ উতরে গিয়েছিল একার ক্যারিশমায় ম্যাচ বার করায় দক্ষ ডংকে দিয়ে। কিন্তু সঞ্জয়ের কাতসুমি যতটা সুন্দর গ্যালারির জন্য, ততটা খেলার জন্য নয়! আর ডুডু? তাঁকে আর্মি কোচ সাজি বাঁ দিকে ডুডু-স্পেশ্যাল টার্ন করতেই দেননি। ফলে সবুজ-মেরুন জার্সিতে তাঁর প্রথম দু’ম্যাচে ঝলসানো নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার এ দিন আচমকা নিষ্প্রভ। গাদাগুচ্ছের গোল মিস। টিমের খারাপ দিনে বঞ্চিত হতে হল ন্যায্য পেনাল্টি পাওয়া থেকেও। এর পরে পয়েন্টের আশা করাটাই বোধহয় অন্যায়।

এ সব দিনে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগের গৌতম সরকার, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়রা মাঝমাঠ থেকে বাড়তি উদ্যোগ নিতেন, উইং প্লে দিয়ে বিপক্ষকে প্যাঁচে ফেলে। কিন্তু পঙ্কজ মৌলারা সেই সব কবে শিখবেন কে জানে! দ্বিতীয়ার্ধে এই সুযোগেই জৈনের গোল। দুই প্রধানে খেলা এম সুরেশের তুতোভাই জৈন ঘাড়ের উপর পঙ্কজ আর সঞ্জয়কে নিয়ে গোল করে গেলেন কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই। হতাশ সঞ্জয় তাই, ‘‘যারা আছে তাঁদের নিয়েই লড়ব’’-র বাইরে আর কী বলবেন?

বাগান কোচ শেষ মুহূর্তে কাতসুমিকে তুলে গুস্তাভোকে নামিয়ে স্ট্রাইকার করে দিয়েছিলেন। বঙ্গ ফুটবলে ছোট দলের বিরুদ্ধে প্যাঁচে পড়া বড় দলের শেষ মুহূর্তে বাঁচার জন্য সেই চিরাচরিত এরিয়াল বল থেকে ফসল তুলতে। কিন্তু একে সেটা এখন প্রাগৈতিহাসিক হয়ে গিয়েছে। আর গুস্তাভো-ও সুব্রত ভট্টাচার্য নন।

কলকাতা লিগে মোহনবাগানের শেষ হার ৩৫৯ দিন আগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। আর এ দিন সেনাদের কাছে হেরে ষষ্ঠ লিগ জয়ের রেকর্ড দ্বিতীয় বার স্পর্শের জন্য এগিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গলকেই।

রাতে সল্টলেকের বাড়ি থেকে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘পঁচাত্তরে ছ’বার লিগ আনার সময় ছেলেদের বলতাম আমি টাইটানিকের ক্যাপ্টেন। ডুবলে আমি একা ডুবব, আর তোরা ভাসিয়ে রাখতে পারলে সবাই মিলে রেকর্ড লিগ জিতব।’’

মজার ব্যাপার, পঁচাত্তরে ইস্টবেঙ্গলকে টানা ষষ্ঠ লিগ এনে দেওয়া মেগাকোচের এই ভোকাল টনিক এখন বিশ্বজিতের ইস্টবেঙ্গলের নয়, বরং সঞ্জয়ের বাগানের ভরসা!

মোহনবাগান: শিল্টন, সুমন, সঞ্জয়, প্রতীক, সুখেন, উজ্জ্বল (মণীশ, লুইস ৫৯ মিনিট), আসিফ, পঙ্কজ, কাতসুমি (গুস্তাভো), আজহারউদ্দিন, ডুডু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE