Advertisement
E-Paper

চেন্নাইয়ের ফুটবল কার্নিভালে খলনায়ক সেই রেফারি

পৃথিবীতে দু’ধরনের লোক থাকে। উইনার আর লুজার। কিন্তু চেষ্টা করলে কখনও কখনও লুজারও উইনারের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। হয়ে যেতে পারে চ্যাম্পিয়ন। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবিতে চার্লি (শাহরুখ খান) এ কথাই মিশনের আগে পেপ টক হিসেবে মাথায় ঢুকিয়ে দিতেন ঝক্কাস নান্দু (অভিষেক বচ্চন)-দের মাথায়। মঙ্গলবার মেরিনা এরিনায় (এ নামে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামকে ডাকছে চেন্নাই) ড্রেসিংরুমে সে কথাই কি ম্যাচের আগে শিল্টন, খাবরা, ধনচন্দ্রদের বলেছিলেন জুনিয়র বচ্চন?

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৪
উত্তপ্ত চেন্নাই। মঙ্গলবার আটলেটিকো ম্যাচে। ছবি: পিটিআই

উত্তপ্ত চেন্নাই। মঙ্গলবার আটলেটিকো ম্যাচে। ছবি: পিটিআই

পৃথিবীতে দু’ধরনের লোক থাকে। উইনার আর লুজার। কিন্তু চেষ্টা করলে কখনও কখনও লুজারও উইনারের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। হয়ে যেতে পারে চ্যাম্পিয়ন।

সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবিতে চার্লি (শাহরুখ খান) এ কথাই মিশনের আগে পেপ টক হিসেবে মাথায় ঢুকিয়ে দিতেন ঝক্কাস নান্দু (অভিষেক বচ্চন)-দের মাথায়।

মঙ্গলবার মেরিনা এরিনায় (এ নামে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামকে ডাকছে চেন্নাই) ড্রেসিংরুমে সে কথাই কি ম্যাচের আগে শিল্টন, খাবরা, ধনচন্দ্রদের বলেছিলেন জুনিয়র বচ্চন?

ইনজুরি টাইমে এলানোর পেনাল্টি গোলে ম্যাচ ড্র রেখে হোটেলে ফিরে চেন্নাইয়ানের খাবরা কিন্তু সে কথাই বললেন। “ম্যাচের আগে আমার মেয়ে সাইনকে প্রথমে কোলে নিয়ে রসিকতা করে বলল, এই দেখ্‌, আমি হলাম ভূতনাথ (অমিতাভ বচ্চনের ছবি) কা বেটা। তার পর আমাদের বলল, আজ কিন্তু আমরা হারছি না। উইনার যদি নাও হতে পারি, লুজারের দলে থাকা চলবেই না।”

সারা খেলায় পিছিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে হার বাঁচিয়ে চেন্নাইয়ানের অভিনেতা-মালিক তাই যখন জড়িয়ে ধরলেন তাঁর ব্রহ্মাণ্ড-সুন্দরী স্ত্রীর গলা, আটলেটিকো কলকাতার রিজার্ভ বেঞ্চে তখন শ্মশানের স্তব্ধতা। তিন পয়েন্ট নিয়ে কলকাতায় ফেরার বদলে ঝপ করে দু’পয়েন্ট ঝুলি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণায়।

গোটা ম্যাচে এই ঘটনা বাদ দিলে হাবাসের দলের পারফরম্যান্স মোটেই হেলাফেলা করার মতো নয়। ছ’ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএলের শীর্ষেই থাকল কলকাতা। মুম্বইকে উড়িয়ে দেওয়ার পর চেন্নাইয়ের যে কলকাতার তর্জন-গর্জন শুরু হয়েছিল এ দিন তা ধুয়েমুছে সাফ।

তর্জন-গর্জনের নমুনা?

এলানো বল ধরে, কাটায়, গোল করে...আবার চাকার মতো চলে সেই প্রক্রিয়া।

কিংবা এ দিনের ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই গোটা স্টেডিয়ামের চিলচিত্‌কার ‘পোদু মাচি গোলু’। গোদা বাংলায় চলো, গোল করে আসি।

চেন্নাই সমর্থকদের ভিনি-ভিডি-ভিসি মার্কা আশাকে কলকাতার যে দু’জন মাটিতে মিশিয়ে দিলেন ম্যাচের শুরু থেকেই তাঁদের এক জন এ দিনই শেষ ম্যাচ সাসপেনশনের আওতায় থাকা চিফ কোচ হাবাস। দ্বিতীয় জন এ দিন কলকাতায় বসে থাকা সহকারী কোচ ব্যারেটো। চেন্নাই-মুম্বই ম্যাচ দেখে যিনি হাবাসকে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, মাতেরাজ্জিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে ও খেলবে। কেবল ওর লং বল তোলার রাস্তা বন্ধ করতে হবে। এলানোকে বল ধরে ঘুরতে দিলেই মুশকিল। তাই তার আগেই ট্যাকল। আর চেন্নাইয়ের দুই সাইড ব্যাক বেশ নড়বড়ে, বিশেষ করে গৌরমাঙ্গী।

একদা রাফায়েল বেনিতেজের সহকারী হাবাস এ দিন মাঠের বাইরে বসেই এই তিনের সঙ্গে দিলেন আরও একটা মোক্ষম চাল। শুভাশিসের জায়গায় কিপার হিসেবে বেটেকে নামিয়ে। এলানোর রামধনুর মতো ফ্রিকিক বেটের উচ্চতা দিয়ে রোখার জন্যই হয়তো। নির্বাসিত কোচের পরামর্শ মতোই গোটা ম্যাচে ব্যাক ফোরের পিছনে এক চিলতে জায়গাও মেন্ডোজাদের দিল না অর্ণবদের লড়াকু ফুটবল।

আক্রমণাত্মাক না হয়ে প্রতি-আক্রমণের রাস্তা নিয়েছিল কলকাতা। মাঝমাঠ থেকে সেই প্রতি-আক্রমণ গড়ার কাজে গার্সিয়া এ দিন অনবদ্য। মূলত তাঁর দাপটেই শুরুতে আক্রমণের ঝাঁঝ অনেকটাই কমে গিয়েছিল উল্টো দিকের এলানোদের। অ্যাওয়ে ম্যাচে গার্সিয়ার পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজিতে চলে গিয়ে কলকাতা প্রায় বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল চেন্নাই সমর্থকদের ‘পোদু মাচি গোলু’ স্লোগানের।

এলানোর ড্রিবল করে ঢোকা বন্ধ করতে পাঁচিল তুলে দিলেন অর্ণব। সঙ্গে ডাবল কভারিং হোসেমির। এলানো তা বুঝতে পেরে যেই মাঝমাঠ থকে অপারেট শুরু করলেন, তাঁকে ধরলেন নাতো আর বোরহা। আর তাতেই কার্যত শেষ পয়েন্ট টেবিলে কলকাতার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা ‘সেকেন্ড বয়’ চেন্নাইয়ান।

জোড়া লালকার্ড, জোড়া পেনাল্টি, দু’দলের দুই মার্কি ফুটবলারের গোল। তার পরেও কিন্তু ম্যাচের সবচেয়ে আলোচ্য চরিত্র এক জনই। রেফারি তেজস নাগভেঙ্কর। হোফ্রেকে কেন দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে বার করে দিলেন তা বোঝা গেল না। আটলেটিকো শিবির যার জন্য রাতেই ম্যাচ কমিশনারের কাছে পাল্টা আবেদন জানাল রেফারিং রিভিউয়ের জন্য। বুধবারই ভিডিও ফুটেজ জমা পড়বে ম্যাচ কমিশনারের কাছে।

অভিষেক, ঐশ্বর্যা, মাতেরাজ্জি, এলানো, গার্সিয়া, অর্ণবদের ফুটবল কার্নিভালে তাই আচমকা ভিলেন রেফারি তেজস।

আই লিগ থেকে আইএসএল। ভারতীয় ফুটবলের উত্‌কর্ষ বাড়াতে মঞ্চ বদল হলেও খলনায়ক কিন্তু বদলাচ্ছে না।

দু’টো পেনাল্টিই হয় না

রেফারিদের যে রুল বুক, তাতে দু’টো শব্দ আছে ‘ডেলিবারেট ফাউল’। অর্থাত্‌, ইচ্ছাকৃত ফাউল। এ দিনের ম্যাচের দু’টো পেনাল্টির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই গোয়ার রেফারি তেজস নাগভেঙ্কর রুল বুকের ওই দু’টো শব্দ মাথায় রাখেননি। ফিফা প্যানেলের রেফারি হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই ম্যাচে জোড়া ভুল করেছেন।

আটলেটিকো দে কলকাতা যে পেনাল্টি পেল তাতে দেখা যাচ্ছে, চেন্নাইয়ানের গোলকিপার শিল্টন পাল পা-টা বিপক্ষের মহম্মদ রফির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছোড়েনি। ফলো-আপে শিল্টনের পা রফির পায়ে লেগেছে। যা লাগতেই পারে এবং সেটা ইচ্ছাকৃত ফাউল নয়। তা ছাড়া ওই মুহূর্তে বল যে দিকে ছিল, তার উল্টো দিকে শিল্টনের পা গিয়েছে। ওটা কেন পেনাল্টি হবে? আর পেনাল্টি না হলে শিল্টনের লালকার্ডও হয় না। আবার চেন্নাইয়ান যে পেনাল্টি পেল সেটা একটা অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষ ছিল। দু’পক্ষের দুই ফুটবলারের কেউই ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্য জনকে মারতে যায়নি। বরং আমার মনে হয় ফাউলটা চেন্নাইয়ের মেন্ডোজার বিরুদ্ধে দেওয়া উচিত ছিল। কলকাতার কিংশুক কোনও মতেই দায়ী নয়। অথচ তাকেই দোষী সাব্যস্ত করে রেফারি পেনাল্টি দিলেন।

মিলন দত্ত (প্রাক্তন ফিফা রেফারি এবং সর্বভারতীয় রেফারিজ বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান)

ISL chennai fc atletico de kolkata referree villain debanjan bandopadhyay chennai sports news online sports news kolkata bad referee football indian super league
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy